বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা ১৬-১৭ বছর ধরে ত্যাগ স্বীকার করেছি, মার খেয়েছি, জেলে গেছি, জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছি শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা সবাই অত্যন্ত আশাবাদী হয়ে আছি। নতুন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই জঞ্জাল দূর করে দেশে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করবে যে পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে সকলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের একটা পার্লামেন্ট তৈরি হবে।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ও নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। এ সময় দলের পক্ষ থেকে আহত ও নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়।
এ সময় তিনি সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা ফেরাতে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার মানে প্রশাসন ফেল করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে সেনাবাহিনীকে পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার সেসব এলাকাতে দেওয়া দরকার, যে সমস্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কিন্তু যে সমস্ত এলাকা শান্তিপূর্ণ আছে, যেখানে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা সমস্ত বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছেন সেখানে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে আবার নতুন সমস্যা তৈরি করা সমচীন হবে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমি অনুরোধ করব এ সরকার বিষয়টি যেন পুনরায় বিবেচনা করেন এবং কখনো এমন কোনো ব্যবস্থা নেবেন না যাতে সামগ্রিকভাবে ফলাফল তাদের জন্য বুমেরাং হবে। দেশের মানুষের জন্যও এটি বুমেরাং হয়ে যাবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমরা আশা করি সঠিকভাবে বিষয়গুলো উপলব্ধি করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাই এ কথাটি স্পষ্ট করে বলছি কারণ বলাটা আমার দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, আমরা সব দিক চিন্তা ভাবনা করে সামনে যেন সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দেখতে পাই। মানুষের ওপর যেন অন্যায় অত্যাচার না হয়, আমাদের শিশুদের যেন আর গুলি করে হত্যা না করা হয়। আমি জানি আমার কথাগুলো অনেকের মনঃপুত নাও হতে পারে। কিন্তু সত্য উচ্চারণ করা আমার দায়িত্ব।
আওয়ামী লীগের আমলে নিজেদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা প্রায় ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করছি। এ সময়ে আমাদের প্রায় সাতশ মানুষকে আয়না ঘরে গুম করে রাখা হয়েছে। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমার নিজের বিরুদ্ধে ১১১টি মামলা দেওয়া হয়েছে। আমার ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ মানুষ যিনি কৃষক, যিনি কখনো আদালত দেখেননি তাদেরকে নিয়মিত আদালতে যেতে হয়, জেলে যেতে হয়। কত ব্যবসায়ী তার ব্যবসা হারিয়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন এমন কি এ জেলায় ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে।
এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, যুগ্ম সম্পাদক পয়গাম আলী, দপ্তর সম্পাদক মামুনুর রশিদ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।