পিবিএ, জাবি : আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘পদদলিত’ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম একাডেমিক সভায় অংশগ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন উপাচার্য অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে এমন অভিযোগকে মিথ্যাচার দাবি করেছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ভিসিপন্থী শিক্ষকরা। তাদের দাবি উপাচার্য কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই একাডেমিক সভায় প্রবেশ করেছেন ।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনে এমন ঘটনা ঘটে।
এর আগে গতকাল শনিবার উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একাডেমিক সভা ‘বর্জন’ করার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। সে সময় উপাচার্যের পরিবর্তে যেকোন একজন উপ- উপাচার্যের সভাপতিত্বের দাবি তোলেন তারা। তবে আন্দোলনকারীদের দাবিকে আমলে না নিয়ে একাডেমিক সভায় অংশগ্রহণ করার জন্য পুরাতন প্রশাসনিক ভবনে উপস্থিত হন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এসময় উপাচার্যপন্থী শিক্ষক এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হতে থাকে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বাঁধার মুখে ‘জোরপূর্বক’ এবং ‘লাঞ্ছিত’ করে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম একাডেমিক সভায় প্রবেশ করেছেন বলে দাবি করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, ‘উপাচার্যসহ উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা আমাদেরকে পদদলিত করে একাডেমিক সভায় অংশগ্রহণ করেছেন। এর আগেও গত ৫ নভেম্বর আমরা দেখেছি একই কায়দায় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গায়ের জোরে নয় বরং যুক্তি দিয়ে কথা বলবেন বলে আমরা কামনা করি।’
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে মুরাদ চত্ত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মিখা পিরেগু বলেন, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা সিনেট হলের সামনে অবস্থান গ্রহণ করি। কিন্তু সেখানে ভিসিপন্থী শিক্ষকরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের বিভিন্নভাবে আক্রান্ত করে একধরনের সন্ত্রাসী কায়দায় ভিসিকে সিনেট হলে প্রবেশ করিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কখনো গায়ের জোরে চলবে না, বিশ্ববিদ্যালয় চলবে নৈতিকতার জোরে। শিক্ষার্থীদের সাথে যে লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে এর প্রতিবাদে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ দাঁত ভাঙা জবাব দিবে। এছাড়া এই ভিসির সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের সভা ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ সর্বাত্মকভাবে প্রতিহত করবে।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আরমানুল ইসলাম খান বলেন, দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে আমরা উপাচার্যকে একাডেমিক সভায় সভাপতিত্ব করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা ন্যাক্কারজনকভাবে শিক্ষার্থীদের পায়ে মাড়িয়ে জোরপূর্বক একাডেমিক কাউন্সিলে প্রবেশ করে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে দুর্নীতিবাজ উপাচার্য অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানাই।
শিক্ষার্থীদের কে পদদলিত এবং লাঞ্চিত করার অভিযোগ প্রত্যাখান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ.আই মামুন বলেন, একাডেমিক সভায় অধ্যাপকরা প্রবেশ করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়। তারা বলছিলো শিক্ষকরা প্রবেশ করতে পারবেন তবে উপাচার্য প্রবেশ করতে পারবেন না। তখন প্রফেসররা বলছেন তারা উপাচার্যকে নিয়েই প্রবেশ করবেন। একসাথে প্রায় ৭০-৮০ জন প্রফেসর ঢুকছে তখন রাকিবুল রনি (ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক) পড়ে যায়। তবে কোন ধরনের ধাক্কাধাক্কি সেখানে হয়নি। একাডেমিক সভায় কে সভাপতিত্ব করবে সেটা শিক্ষার্থীরা বলার কেউ না। তাদের আজকে কোন কর্মসূচি ছিল সেটাও আমাদেরকে অবহিত করেনি।
প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৪৪৫ কোটি টাকার অনুমোদন দেয় একনেক। এরপর থেকে মাস্টারপ্ল্যানের পুনর্বিন্যাস, টেন্ডারে আহ্বানে অস্বচ্ছতাসহ নানা অভিযোগ তুলে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। পরবর্তীতে নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে উপাচার্য অপসারণের দাবি করে আসছেন তারা।
পিবিএ/ শাহিনুর রহমান শাহিন/জেডআই