একখান ভাতা কার্ড দেন বাবা

পিবিএ,গুরুদাসপুর(নাটোর): চলনবিল অধ্যুষিত এলাকা গুরুদাসপুর। উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগরে গ্রামীণ মাঠের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে একটি মেঠোপথ। সেই রাস্তা দিয়ে সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ত সাংবাদিক। হঠাৎ মাথা থেকে একটি খড়ের বোঝা নামিয়ে সংবাদকর্মীকে বললেন আমাকে একখান ভাতা কার্ড করে দেন বাবা। আমি গরীব মানুষ। আমার পঙ্গু ছেলে ও অবিবাহীত মেয়েকে নিয়ে আমি আর পারছি না। কথা গুলো বলছিলেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগর ৮ নং ওয়ার্ডের গুচ্ছু গ্রামের বাসিন্দা বিধবা মজিরন বেওয়া। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স এখন প্রায় ৫৭ বছর। স্বামী মারা গেছেন ১৫ বছর আগে। স্বামী মারা যাওয়ার পরপরই ছেলে মেয়ে সংসার নিয়ে দুর্বিশহ জীবন যাপন করছেন তিনি।

চলনবিল অধ্যুষিত এলাকা গুরুদাসপুর। উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগরে গ্রামীণ মাঠের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে একটি মেঠোপথ। সেই রাস্তা দিয়ে সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ত সাংবাদিক
পিবিএ’র সাংবাদিকের সাথে কথা বলছেন মজিরন বেওয়া

৪ মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে তার সংসার। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ও নিজের পরিশ্রমে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন মজিরন বেওয়া। একটি ছেলে বিয়ে করে অন্য জায়গায় থাকেন। মায়ের সংসারে দেখাশোনা করেন না, খোঁজও রাখে না। এখনও তার সংসারে একটি অবিবাহিত মেয়ে ও একটি পঙ্গু ছেলে রয়েছে।

মজিরন বেওয়া বলেন, অনেক কষ্ট করে তিনটি মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। আমার হাত পা ব্যাথা ও জ্বালা যন্ত্রনা করে। সকালে উঠে কাজে যেতে অনেক কষ্ট হয় বাবা। তারপরও যেতে হয়। কারন আমার যে আরো একটি মেয়ে বাড়িতে আছে তাকে তো বিয়ে দিতে হবে এবং পঙ্গু ছেলের চিকিৎসা খরচ যোগাতে হয়।

মেয়েটাও অন্যের বাড়িতে কাজ করে। আর ছেলে তো পঙ্গু, সে কিছু করতে পারে না। একটা কার্ডের জন্য অনেক কে বলেছি, কিন্তু কেউ করে দেয়নি। যারা টাকা দেয় তাদের কার্ড হয়। আমি টাকা দিতে পারিনা তাই আমার কার্ড হয় না। আমি বিধবা। আমাকে যদি একটা বিধবা ভাতা কার্ড ও করে দিতো তাও আমি আমার পঙ্গু ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে চলতে পারতাম। আমি যদি একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকি তাহলে বাড়িতে সবার না খেয়ে থাকতে হয়।

অন্যের জমিতে রসুন তোলা, ইরি বোরো ধানের জমিতে আগাছা পরিষ্কার করা কখনও বা অন্যের বাড়িতে কাপড় ধোয়া, বাড়ি পরিষ্কারের কাজ করে সংসার চালাতে হয়। আমাকে না হলে আমার ছেলেকে একটা পঙ্গু ভাতা কার্ড করে দেন। তাহলে অন্তত আমার ছেলের চিকিৎসা খরচটা যোগাতে সক্ষম হবো।

বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক মো.মোজাম্মেল হক মুঠোফনে পিবিএকে বলেন, আমার ইউনিয়নের হত দারিদ্র পরিবার সন্ধান করে আমি সরকারের সহযোগিতা গুলো তাদের মাঝে পৌছে দেই। তারপরও সেখানকার ইউপি সদস্যদের বলা আছে যেন দারিদ্র মানুষ কেউ সহযোগিতা থেকে বাদ না পরে। মজিরন বেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। সে কখনও আমার কাছে আসেও নি।

তবে আপনার কাছ থেকে শুনলাম। তার খোজ খবর নিয়ে তাকে সহযোগিতা করা হবে। ইউপি সদস্যের অবহেলার কারনে দু একটা দারিদ্র মানুষ সুযোগ সুবিধা থেকে বাদ পরে যায়। তবে যত দ্রুত সম্ভব মজিরন বেওয়াকে সরকারী সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

পিবিএ/এনএইচএন/আরআই

আরও পড়ুন...