পিবিএ,কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী এ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এখানে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। উপমহাদেশের বৃহত্তম জামাতের হিসাব মোতাবেক এ বছরের ঈদ জামাত হবে ১৯২তম।
এ মাঠের ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, শোলাকিয়া মাঠ এলাকার পূর্ব নাম ছিল ইচ্ছাগঞ্জ। শোলাকিয়া সাহেব বাড়ির পূর্ব পুরুষ শাহ সুফী মরহুম সৈয়দ আহম্মেদ ১৮২৭ সনের প্রথমে এ স্থানে সর্বপ্রথম একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং পরে ১৮২৮ সনের শেষ ভাগে শোলাকিয়া মাঠের গোড়াপত্তন হয়।
পরবর্তীতে বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশাখাঁ’র ৬ষ্ঠ বংশধর হয়বতনগরের শেষ জমিদার দেওয়ান মোঃ মান্নান দাদ খান ১৯৫০ সনে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য তার মায়ের অসিয়াত মোতাবেক ৪.৩৫ একর জমি ওয়াক্ফ করেন। দলিলের সূত্র মতে ঐ সময়ের আরও ২শ বছর আগে ১৭৫০ সন থেকেই এ ঈদগাহে দুটি ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়ছিলো বলে জানা যায়।
সৈয়দ আহাম্মদ সাহেবের পর উত্তরাধিকার সূত্রে হয়বতনগর জমিদার বাড়ির তৎকালীন জমিদার সৈয়দ মোঃ আবদুল্লাহ ১৮২৯ সন হতে ১৯২১ সন পর্যন্তু এই শোলাকিয়া মাঠে ইমাম ছাড়াও তিনি এই ঈদগাহের সর্বপ্রথম মোতাওয়ালী ছিলেন। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে হয়বতনগর জমিদার পরিবার থেকে মোতাওয়ালী নিযুক্ত হয়ে আসছে।
বর্তমান মোতাওয়ালী এই জমিদার পরিবারেরই সদস্য দেওয়ান ফাত্তাহ দাদ খান মঈন। বর্তমানে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে মাঠ পরিচালনা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
জনশ্রুতি রয়েছে শোলাকিয়ায় পরপর দুইবার ঈদের জামাত আদায় করলে একটি হজ্বের সমান সোয়াব পাওয়া যায়। সেই জনশ্রুতিতেই এখনও পর্যন্ত প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে ঈদ জামাত পড়তে আসেন। শোলাকিয়ায় আগত মুসল্লীদের কষ্ট লাঘবে এলাকার স্থানীয় লোকজন ঈদের দিন রাস্তার পাশে পানি, শরবত, স্যালাইন, প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে বসে থাকেন। তাদের এই সামান্য আথিতিয়তা আগত মুসল্লীদের অনকেটাই মুগ্ধ করে।
শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের আয়তন:
বর্তমানে সরকারি খাস জমি নিয়ে প্রায় ৭ একরের উপরে জমি রয়েছে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। ঈদগাহটির চারপাশে অনুচ্ছ প্রাচীর ঘেরা মাঠে মোট ২৬৫টির অধিক কাতার রয়েছে। প্রতিটি কাতারে প্রায় চারশত করে লোক নামাজ আদায় করেন। সে হিসেবে মাঠের ভিতরে প্রায় সোয়া লাখ লোক নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মাঠের আশেপাশ রাস্তা ও বাড়িঘরসহ প্রায় ২ লক্ষাধিক মুসল্লী নামাজ আদায় করে থাকেন।
শোলাকিয়া নামকরণের জনশ্রুতি:
দীর্ঘকাল আগে একবার অংশগ্রহণকারী নামাজির সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লী জামাতে অংশ গ্রহণ করেছিল সেই থেকেই সোয়ালাখ থেকে সোয়ালাখিয়া উচ্চারণ পরবর্তীতে কালের বিবর্তনে এ মাঠের নাম হয়েছে শোলাকিয়া।
দ্বিতীয়: জনশ্রুতি রয়েছে, কিশোরগঞ্জের বর্তমানের প্রায় নরসুন্দা নদীটি এককালে ছিল গভীর আর স্রোতস্বিনী। নদীটিতে নিয়মিত বড় বড় জাহাজসহ অন্যন্য নৌযান চলাচল করতো এবং মোঘল শাসনামলে বন্দরটি এদতঞ্চলের বিখ্যাত নৌবন্দর হিসেবে খ্যাত ছিল।
একবার বন্দরটিতে ফরাসীদের ১৬টি লবণ বোঝাই নৌযান এসে নোঙ্গর করেছিল, তাতে উক্ত লবণ বোঝাই নৌযান থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ যে শুল্ক আদায় করেছিল, সে থেকে উক্ত এলাকাটি উচচারণ বিবর্তনে ক্রমান্বয়ে শুল্ক থেকে শোলাকিয়া নাম প্রচলিত হয়েছিল বলে লোকমুখে শোনা যায়।
তৃতীয়: এছাড়াও জনশ্রতি রয়েছে, ইষ্ট ইন্ডিয়ান কো¤পানীর আমলে সেখানে নরসুন্দার নদী বন্দর ছিল, তার পাশেই অবস্থিত ছিল ফরাসী বনিকের লবণ ও শুকনা মাছের আড়ৎ। সে আড়তের জন্য বাইরে থেকে যে লবণ আমদানী ও শুকনা মাছ রপ্তানী করা হতো, তার জন্য কোম্পানীকে বিশেষ শুল্ক দিতে হতো। এর ফলে এ শুল্ক আদায়ে ঘাট থেকে এলাকাটি উচ্চারণ বিকৃতিতে ক্রমান্বয়ে শোলাকিয়া নামে পরিচিত হয়ে উঠে।
চতুর্থ: শোনা যায়, মোঘল আমলে স্থানীয় এলাকাটিতে পরগনার রাজস্ব আদায়ের একটি অফিস ছিল। সে অফিসের অধীনে পরগনার রাজস্ব ছিল সোয়া লাখ টাকা। সোয়া লাখ টাকার রাজস্ব আদায়ের অফিসের উচ্চারণ বিবর্তনে এলাকাটির নাম হয়েছে শোলাকিয়া।
মুসাফির খানা:
শোলাকিয়ার ইতিহাস খুজতে গিয়ে জানা গেছে, বৃটিশ, পাকিস্তান ও বর্তমান বাংলাদেশ আমলের গোড়ার দিকেও এ দেশের প্রত্যন্ত জেলাসমূহ ছাড়াও সুদূর ভারতের বিভিন্ন রাজ্য আসাম, পাকিস্তান, ভুটান, ইরান, নেপাল, সৌদিআরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলমানগণ শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদের জামাতে শরিক হতো।
হয়বতনগর হাবিলীতে ঈদের জামাতি হিসেবে অতিথিদের জন্যে মুসাফির খানা নামে একটি বড় আকারের ঘরও ছিল। ঈদের নামাজের ২/৩ আগে থেকেই দলে দলে মুসল্লীগণ এসে হয়বতনগর হাবিলীসহ ঈদগাহ ও এর আশপাশ এলাকায় অবস্থান নিত। এখন অবশ্য তেমন দেখা যায় না।
বর্তমানে কিশোরগঞ্জ শহরে বিভিন্ন ভালো মানের হোটেল তৈরী হওয়ায় নামাজ পড়তে আসা দেশী-বিদেশী মুসল্লীগণ এসব আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। এছাড়াও মুসল্লীদের সুবিধার জন্য ঈদের দিন বাংলাদেশ রেলওয়ে ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ঈদ জামাতের জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছে। তবে শহরের বর্তমান হারুয়া এলাকায় ছোট আকারের বেশ কয়েকটি মুসাফির খানা এখনও বিদ্যমান রয়েছে।
জামায়াতকে কেন্দ্র করে বিশেষ মেলা ও হাট:
শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামায়াতকে কেন্দ্র করে শহরে বিশেষ করে পুরানথানা বাজার এলাকাসহ আশপাশের এলাকা জুড়ে মেলা বসতো। মেলায় কাঠ, ফোম, আধুনিক তৈরি আসবাবপত্র, কাগজ, প্লাষ্টিক ও মাটির তৈরি খেলনা, কসমেটিকসসহ নানা ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে শত-শত দোকান বসতো। ঈদের দিনের আনন্দের সাথে এ মেলার আনন্দ যোগ হয়ে দর্শনার্থীদের মন আরও ভরিয়ে দিতো। তবে মুসল্লীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এখন আর সেই আগের মতো মেলা বা হাট বসে না।
ঈদের দিন নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
ঈদুল ফিতরের জামাতকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে নেয়া হয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্ত ব্যবস্থা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঈদগাহ মাঠসহ আশে পাশের এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারিসহ বিপুল পরিমান বিজিবি, র্যাব, আর্মড পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। এবারের ১৯২তম ঈদুল ফিতরের জামাতকে কেন্দ্র করে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আর্মড পুলিশসহ প্রায় দেড় হাজার সদস্য দিয়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার কঠোর চাদরে ঢেকে দেয়া হবে শোলাকিয়া ময়দানকে। ঈদগাহসহ আশেপাশের এলাকায় বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। নির্মান করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার ও নিরাপত্তা বেষ্টনি।
মাঠের প্রতিটি প্রবেশ পথে স্থাপন করা হয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনি ও মেটাল ডিটেক্টর। মাঠে প্রবেশের জন্য প্রবেশপথ ছাড়াও আরোও বেশ কয়েকটি স্থানে মুসল্লীদের দেহ তল্লাশি করে আসতে হবে। সেখানে অত্যাধুনিক মেটাল ডিটেক্টরে মুসল্লীদের দেহ তল্লাশী করা হবে। নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত থাকবে অত্যাধুনিক কয়েকটি ড্রোন।
মাঠের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ সুপার মো: মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) সাংবাদিকদের জানান, ঈদ জামাত শান্তিচপূর্ণ করার লক্ষ্যে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইতিমধ্যে নেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এবার যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক ড্রোন। শোলাকিয়া মাঠ ও আশেপাশের এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষন করা হবে ঈদ জামাত।
ঈদগাহ ময়দানসহ আশেপাশের অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকায় বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। মাঠের ভিতর-বাহির, প্রবেশপথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্মান করা হয়েছে ৬টি ওয়াচ টাওয়ার। চারটি টাওয়ারে পুলিশ ও দুইটিতে র্যাবের সদস্যগণ অবস্থান নিয়ে সার্বক্ষণিক মুসল্লীসহ আগত সকলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
মাঠে মুসল্লীরা জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না বলেও তিনি জানান। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে এবারের ঈদ জামাতে মুসল্লীগণ নির্বিঘ্নে জামাত আদায় করতে পারবেন বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।
এছাড়া র্যাব-১৪ ময়মনসিংহের অধিনায়ক লে. কর্নেল এফতেখার উদ্দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শন করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ঈদুল ফিতরের জামাতকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে র্যাব। প্রথমবারের মতো নিরাপত্ত ব্যবস্থায় যুক্ত হচ্ছে অত্যধুনিক স্নাইপার রাইফেল।
মাঠে নির্মিত ওয়াচ টাওয়ারে স্নাইপাররা অবস্থান নিবেন। কোনো সন্দেহজন বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ লক্ষ্য করা গেলে স্নাইপাররা স্নাইপিং রাইফেল দিয়ে ব্যবস্থা নিবেন। ঈদ জামাত নির্বিঘ্ন হবেন বলে তিনি আশা করেন।
অন্যদিকে রবিবার সকালে জেলা প্রশাসক মো: সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী শোলাকিয়া মাঠ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিংয়ে জানান, ঈদ জামাতকে কেন্দ্র নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ো হয়েছে। মাঠের নিরাপত্তায় র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আর্মড পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবে।
ঈদ জামাতকে নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সকলকে আইনগত দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাঠে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এবারের ঈদ জামাত সুন্দর, নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন এবং ঈদ জামাতে অংশ নেয়ার জন্য দেশবাসীকে আমন্ত্রন জানান।
শোলাকিয়া আসবেন কীভাবে?
যারা কয়েকদিন আগে বা ঈদের আগের দিন কিশোরগঞ্জ আসতে চান তাদের জন্য, ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে আসতে হলে সরাসরি এগারসিন্দুর আন্তুঃনগর (প্রভাতী) ট্রেনটি নিয়মিত কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে সকাল ৬.৪৫ মিনিটে ছেড়ে যায়। কমলাপুর রেলষ্টেশন থেকে আবার সন্ধ্যা ৬.১০মিনিটে এগারসিন্দুর আন্তুঃনগর (গোধুলী) ট্রেনটি কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। বুধবার ট্রেনটি বন্ধ থাকে।
এগারসিন্দুর (প্রভাতী) আরেকটি ট্রেন কমলাপুর থেকে সকাল ৭.১৫ মিনিটে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পরে সেটি কিশোরগঞ্জে থেকে আবার দুপুর ১২.৩০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে কিশোরগঞ্জ ত্যাগ করে।
এছাড়া কিশোরগঞ্জে থেকে দুপুর ২.৪০ মিনিটে কিশোরগঞ্জে এক্সপ্রেস নামে আরেকটি ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্যে কিশোরগঞ্জ স্টেশন থেকে যাত্রা করে। সেটি আবার পরেরদিন সকাল ১০.৩০ মিনিটে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
ট্রেনের টিকেটের ক্ষেত্রে এগারোসিন্দুর প্রভাতী ও গোধূলীর প্রতি সিটের ভাড়া প্রথম শ্রেণীর কেবিন ২০০/- টাকা, প্রথম শ্রেণী চেয়ার ২০০/- টাকা, শোভন চেয়ার ১৫০/- টাকা, সুলভ শ্রেণী ১২৫/- টাকা। কিশোরগঞ্জে এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রে এসি চেয়ার ৩০০/- টাকা আর বাকি সব অপরিবর্তীত।
শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ট্রেনের সময়সূচী:
যারা ঈদের দিন ঈদ জামাতে অংশগ্রহনের জন্য আসবেন তাদের সুবিধার্থে ঈদের দিন ২টি বিশেষ ট্রেন যাতায়াত করে। ঈদের দিন শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ০১ ট্রেনটি ভৈরব স্টেশন থেকে ছাড়বে সকাল ০৬:০০ মিনিটে, কিশোরগঞ্জ পৌছাবে সকাল ০৮:০০ মিনিটে। কিশোরগঞ্জ স্টেশন থেকে ছাড়বে দুপুর ১২:০০ মিনিটে ভৈরব পৌছাবে দুপুর ০২:০০ মিনিটে।
ঈদের দিন শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ০২ ট্রেনটি ময়মনসিংহ স্টেশন থেকে ছাড়বে সকাল ০৫:৪৫ মিনিটে, কিশোরগঞ্জ পৌছাবে সকাল ০৮:৩০ মিনিটে। কিশোরগঞ্জ স্টেশন থেকে ছাড়বে দুপুর ১২:০০ মিনিটে, ময়মনসিংহ পৌছাবে দুপুর ০৩:০০ মিনিটে।
যারা ট্রেন ছাড়াও বাসে করে কিশোরগঞ্জে আসতে চান আপনারা সায়েদাবাদ, গোলাপবাগ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কিশোরগঞ্জের দিকে বিভিন্ন গেইটলক, মেইল ও সিটিং সার্ভিস বাসে করে আসতে পারেন। ভাড়া ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। ময়মনসিংহ থেকে ট্রেন ও বাসযোগে কিশোরগঞ্জ আসা যাবে। কিশোরগঞ্জ শহরে এসে স্টেশন থেকে রিকশা বা অটো রিকশায় শোলাকিয়া মাঠে আসতে পারবেন। রিকশায় ভাড়া পড়বে ২০/- টাকা, অটো রিকশায় জনপ্রতি ১০/- টাকা।
কিশোরগঞ্জ যেখানে থাকবেন:
কিশোরগঞ্জে ভালো মানের আবাসিক হোটেল পাওয়া যায় তুলনামূলক হোটেল ভাড়া সবার হাতের নাগালে। হোটেল নির্বাচরে ক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জ শহরের স্টেশন রোড, জামিয়া রোড ও রথখলা রোডে ভালো মানের অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। ভালো মানের হোটেলগুলোর মধ্যে হোটেল উজান ভাটি, সামাদ, মোবারক, গাংচিল, শেরাটন, নিরালা, রিভারভিউ অন্যতম। হোটেলগুলোর প্রতি রুমের ভাড়া ৫০০/- টাকা থেকে ৩০০০/- টাকার মধ্যে।
ঈদের জামায়াত সরাসরি সম্প্রচার:
প্রথমবারের মত ২০০৬ সালে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া এনটিভি সরাসরি সম্প্রচার করে শোলাকিয়া জামাতের। এরপর থেকে প্রতিবারই চ্যানেল আই সরাসরি সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এবারও চ্যানেল আইসহ অন্যান্য টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ সংবাদ পরিবেশন করে।
জামায়াতের সময় ও নিয়ম :
এবার ১৯২তম জামাত সকাল ১০টায় শুরু হবে। জামায়াত শুরু হবার ৫মিনিট পূর্বে ৩টি, ৩ মিনিট পূর্বে ২টি, এক মিনিট পূর্বে বন্দুকের ফাঁকা গুলির আওয়াজ করে নামাজ শুরুর প্রস্তুতির নির্দেশনা দেওয়া হয়। মাঠের সুনাম ও জনশ্রুতির কারণে বাংলাদেশের দূর দূরান্তের জেলাসহ এমনকি বিদেশ থেকেও আগত বিদেশী মুসল্লীগণ ঈদের জামাতে অংশগ্রহন করে থাকেন।
প্রতি বছরই জামাতে আগত মুসল্লীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জামাতে অংশগ্রহনের জন্য ঈদের ২/৩ দিন পূর্ব থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লীদের আগমন শুরু হয়। আগত মুসল্লীগণ ঈদগাহ মসজিদ, গেষ্ট হাউস এমনকি ঈদগাহ’র খোলামাঠে রাত্রি যাপন করে থাকেন। এবারের ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। ঈদের জামাতে এবারও ইমামতি করবেন ইসলাহুল মুসলেহীন পরিষদের চেয়ারম্যান আল্লামা মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।
পিবিএ/টিএ/আরআই