শেখ সবুজ আহমেদ,কুষ্টিয়া: গোয়ালন্দ হতে পাকশী নৌপথের নৌযান হতে চ্যানেল চার্জ আদায়ের নামে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে পন্য ও বালুবাহী নৌকা থেকে। দাবিকৃত চাঁদা না দিলে মাঝিদের ওপর হামলার মত ঘটনা ঘটছে অহরহ। মাঝিদের জিম্মি করে প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে প্রকাশ্যে এ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। আর এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন জেলা প্রশাসক।
জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে এক মাসের জন্য গোয়ালন্দ হতে পাকশী নৌপথের নৌযান হতে চ্যানেল চার্জ আদায়ের জন্য কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক ঠিকাদার ইজারা পান। তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ইজারা নেন এক মাসের জন্য। ইজারা পাওয়ার পর তিনি শর্ত না মেনে প্রতিটি নৌকা থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে আদায় করতে থাকেন। এ রুট ব্যবহার করে প্রতিদিন পাবনা থেকে বালুবাহী নৌকা ও বার্জ আসে কুষ্টিযার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ঘাটে। এ ঘাটে আসা প্রতিটি নৌকা থেকে ইচ্ছেমত চ্যানেল চার্জের নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
মোস্তাফিজুরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার আরেক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ব্লেজ ইন ট্রেড চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ইজারা আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান আতিকুজ্জামান বিটু। তার মনোনীত লোকজন বর্তমানে পদ্মা নদীর সদর উপজেলার হরিপুর পয়েন্ট থেকে চার্জ আদায় করছেন।
ইজারার শর্তে বলা আছে, প্রতিটি পন্য ও বালুবাহী নৌকা থেকে প্রতি টন পন্য বহনের জন্য ৮ টাকা আদায় করতে পারবে ঠিকাদার। তবে এ শর্ত লঙ্ঘন করে ঠিকাদারের লোকজন নৌকা প্রতি ৪০০০ টাকা চ্যানেল চার্জ হিসেবে আদায় করছে।
তালবাড়িয়ার এলাকার বালু ব্যবসায়ী আশা রহমান বলেন,‘ পাবনার তারাপুর থেকে যে বালু আনা হচ্ছে তাতে মাস্তানি টোল আদায় করা হচ্ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। ১০০টন বালু আনলে যেখানে ৮০০ টাকা টার্জ হওয়ার কথা সেখানে জোর করে নেয়া হচ্ছে ৪ হাজার পাকা। এছাড়া স্থানীয় তালবাড়িয়া চর থেকে বালু তোলা হলে সেখানে প্রতি ফিটে আড়াই টাকা করে নিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। অথচ এ চরের কোন ইজারায় হয়নি।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন.‘ ধীর্ঘ দিন জিম্মি করে তাদের নৌকা থেকে ইচ্ছে মত চাঁদা করছে প্রভাবশালীরা। এ করোনার মধ্যেও তাদের দৌরাত্ব থেকে নেই। প্রতিদিন ১০০ নৌকা থেকে কমপক্ষে তিন থেকে ৪ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা না দিলে হামলা ও মারধর করা হয়।
চাঁদাবাজির কারনে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও তালবাড়িয়া ধুলট মহলের ভাড়া দেয়া লাগে প্রতিটি ফিটে ২ টাকা। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। ডিসিকে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে আরিচা নদী বন্দরের উপ-পরিচালক শেখ মোঃ সেলিম রেজা বলেন,‘ নতুন করে ইজারা নবায়ন করা হয়েছে। তবে কি পরিপান শুল্ক আদায় করা যাবে তার রেট নির্ধারণ করা আছে। প্রতি টনে ৮ টাকা হারে আদায় করা যাবে। এর বেশি আদায় করা বেআইনী।
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদার আতিকুজ্জামান বিটুর মোবাইলে রিং দিলেও তিনি সিরিভ করেননি।
জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন বলেন,‘ বিষয়টি আমার নজরে আসার পর নৌ পরিবহন সচিবের সাথে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে আমার চিঠি লিখব। ইজারার শর্ত অমান্য করে যদি কেউ চাঁদাবাজি করে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পিবিএ/বিএইচ