পিবিএ,খুলনা: খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের অনশন কর্মসূচিতে অসুস্থ হয়ে পড়া প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক আবদুস সাত্তার মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। এর আগে সকালে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
প্লাটিনাম জুটমিল সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমীন জানান, মঙ্গলবার দুপুর থেকে অনশনে ছিলেন আবদুস সাত্তার। বুধবার তার শরীরে স্যালাইন দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালে অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে।
এদিকে অনশন প্রত্যাহারের কোনো অনুরোধই রাখছেন না শ্রমিকরা। স্থানীয় সাংসদ ও শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রমিকদের নেতাদের কর্মসূচি স্থগিত করতে বললেও তারা রাজি হননি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন পাটকল শ্রমিকরা।
গত মঙ্গলবার বেলা ৩টা থেকে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা ১১ দফা দাবিতে নিজ নিজ মিলের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। বুধবার রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান পাটকলের শ্রমিক নেতাদের নিয়ে তার বাড়িতে বৈঠক করেন।
ওই বৈঠক থেকে শ্রমিকদের ওই দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চান। এর মধ্যে অনশন কর্মসূচি তুলে নিতে শ্রমিকদের অনুরোধ করেন। কিন্তু শ্রমিকরা অনশন প্রত্যাহার করেনি।
শ্রমিক নেতারা জানান, এর আগেও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের দাবিতে কয়েকবার আন্দোলন করেছেন শ্রমিকরা। প্রতিবারই শ্রম প্রতিমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের ঘরে ফিরে যেতে বলেন। তার ওই আশ্বাসে ভর করে শ্রমিকরা ঘরেও ফিরে গেছেন। কিন্তু দেখা গেছে কোনো বারই মজুরি কমিশন আর বাস্তবায়ন হয়নি। এ কারণে শ্রমিকরা চাইছেন দাবি আদায় না করা পর্যন্ত তারা অনশনেই থাকবেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান বলেন, সময় যত যাচ্ছে শ্রমিকরা তত অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনশনে থাকা শ্রমিকরা ক্ষুধার যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছেন না। কিন্তু এবার দাবি আদায় না করে তারা ঘরে ফিরবে না।
ক্রিসেন্ট জুট মিল সিবিএর সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকরা না খেয়ে অনশনে রয়েছেন, কিন্তু বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) কোনো কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে বিজেএমসি’র দুইজন কর্মকর্তা অনশনস্থলে এসে চেয়ারম্যানের পক্ষ হয়ে অনশন তুলে অনুরোধ করেছিলেন। তার ওই কথা শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে যান শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকদের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যান তারা। শ্রমিকরা এখন ক্ষুধার আগুনে ফুঁসছে। কোনো প্রতিশ্রুতিই এখন তারা শুনতে নারাজ। তারা প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চান।
সরে জমিনে দেখা গেছে, খুলনার খালিশপুরে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা অবস্থান নিয়েছেন মিলগুলোর সামনের বিআইডিসি সড়কে। দিঘলিয়ায় থাকা স্টার জুট মিলের শ্রমিকরা তাদের মিলের সামনে না বসে চলে এসেছেন ওই বিআইডিসি সড়কে। দৌলতপুর জুট মিলে শ্রমিকের সংখ্যা কম হওয়ায় তাদের সঙ্গেই অবস্থান নিয়েছেন স্টার জুট মিলের শ্রমিকরা।
দেখা গেছে, যেসব শ্রমিকদের বয়স একটু বেশি তারাই দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। স্যালাইন দেওয়া শ্রমিকদের বেশিরভাগেরই বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বনিজ উদ্দিন মিয়া বলেন, পাটকলের শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিজেএমসি। সেই তথ্য শ্রমিকদের জানানো হয়েছে, কিন্তু তা না শুনে শ্রমিকরা অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
শ্রমিকদের কর্মসূচির কারণে মিলের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি।
পিবিএ/এমএসএম