জয়পুরহাটে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ নিয়ে ধুম্রজাল

বাবুল হোসেন.জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জয়পুরহাট সদর থানা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: তৌহিদুল ইসলাম ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। এ নিয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মচারীরা ওই প্রধান শিক্ষকের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানিয়েছেন। আর স্বপদে বহালের দাবী করে পদত্যাগকারী প্রধান শিক্ষক জানান তাকে বাধ্য করা হয়েছে পদত্যাগে।

সরেজমিনে জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর থানা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম গত ১৩ আগষ্টের পর থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সদর থানা উচ্চবিদ্যালয়ের ওই প্রধান শিক্ষক গত ১২ আগষ্ট পদত্যাগ করে বিদ্যালয় থেকে চলে যান।

এ নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মোহসিনা আক্তারসহ নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক আরো এক জন শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ১২ আগষ্ট অপরিচিত বেশ ক’জন তরুন এসে প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে যান, তারপর জানতে পারি তিনি পদত্যাগ করে চলে গেছেন। কি কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন তা জানাতে না পারলেও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ করে বলেন- প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৮১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন । কিন্তু প্রধান শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম জেলা প্রশাসককে বাদ দিয়ে ২০২৩ সালে আওয়ামীলীগ দলীয় মেয়র তার চাচাতো ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাককে সভাপতি করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠন করেন।

ওই শিক্ষকরা আরো জানানা, তিনি বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কল্পে ২০২৪ এসএসসি বিদায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিতাতপ যন্ত্র কেনার জন্য ৩৭ হাজার টাকা, ২০২০ সালে বিদ্যালয়ে দোয়া মাহফিল বাবদ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০০ টাকা, ২০২২ সালে শিক্ষার্থীদের পরিচয় পত্র (আইডি কার্ড) বাবদ প্রতি শিক্ষার্থীর কাছে থেকে ১৫০ টাকা ও জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার সনদপত্র বিতরণে বিধি বহির্ভূত ভাবে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা আদায় করলেও সংশ্লিষ্ট খাতে টাকাগুলো খরচ না করে প্রধান শিক্ষক তা আত্মসাত করেন ।

এ ছাড়াও একই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সাথে অশালীন আচরন করার অভিযোগে জেলা প্রশাসক তাকে বরখাস্ত করেন এবং এ নিয়ে আদালতে মামলা হলে (নারী ও শিশু নির্যাতন) প্রধান শিক্ষক কিছু দিন জেল হাজতে থাকেন।

এ ছাড়া ২০২২ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তিনি এ পর্যন্ত ৬ জন শিক্ষক কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করে তাদের হেনস্থা করেন বলেও অভিযোগ করেন ওই ২ জন শিক্ষক।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এস সিয়াম, মাহী, রিফাতসহ নাম প্রকাশে অনেকচ্ছুক শিক্ষাথীরা জানায়, ‘প্রধান শিক্ষক ১৩ তারিখে পদত্যাগ করলেও আমরা তা অনেক পরে জানতে পারি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উল্লেখিত খাতে টাকা তোলা হলেও সেই টাকাগুলো প্রধান শিক্ষকের কাছে নাকি অফিসে জমা আছে তা তারা জানে না।

অপর পক্ষে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক তানিয়া তাবাসসুর, পূর্নিমা রানী, রাজিয়া সুলতানা ও অফিস সহকারী শামসুল ইসলাম জানান, প্রধান শিক্ষক হিসাবে তিনি যোগ্য ছিলেন। অর্থ আত্মসাত প্রসঙ্গে তারা জানান, এর অনেক আগে শিক্ষক ও ষ্টাফদের নিয়ে অনুষ্ঠিত নিয়মিত সভায় প্রধান শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম হিসাবে দিয়ে ৫০ হজার টাকা জমা দিয়েছেন, আরো কিছু অর্থ থাকতে পারে বলেও জানান তারা।

কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়ে হেনস্থা প্রসঙ্গে আরেক সহকারী শিক্ষক রানা হোসেন জানান, ‘ কর্তব্য অবহেলার কারণে আমিসহ আরো ৫/৬ জন শিক্ষক কর্মচারীকে প্রধান শিক্ষক শো-কজ করলেও এতে কারো চাকুরী যায়নি।’

কম্পিউটার শিক্ষক মিনহাজুল ইসলামসহ নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক শিক্ষক-কর্মচারীরা জানান, প্রধান শিক্ষককে জোর করেই পদত্যাগ করানো হয়েছে। তবে ওই দিন বিদ্যালয়ে আসা যুবকদের তারা চেনেন না বলেও জানান তিনি।

এ ছাড়া অন্যান্য সকল অভিযোগ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে অনেকে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান বা কোন কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আর কেনই বা প্রধান শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন সে ব্যাপারে কোন শিক্ষার্থী বা শিক্ষক-কর্মচারীরা জানেন না।’

এ ব্যাপারে পদত্যাগকারী শিক্ষক মো: তৌহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ”ভাই কেউ কি সাধে পদত্যাগ করে ! আমি ২০২৩ সালে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেছি। কিন্তু তার আগেরও হিসাব নিকাশ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আমার সময়কাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ আইডি, সনদ, প্রত্যয়ন, পিকনিক ও এসি বাবদ যে টাকা তোলা হয়েছে, সব কিছুর হিসাব শিক্ষক-ষ্টাফদের মিটিং ডেকে পাওনা ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। আর এক শিক্ষার্থীর সাথে অশালীন আচরনের কারণে আমার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়, সে মামলায় আমি খালাস পেয়েছি।”

পদত্যগের ব্যপারে তিনি বলেন, গত ১২ আগষ্ট অজ্ঞাত পরিচয় বেশ কয়েক জন যুবক বিদ্যালয়ে তার অফিস কক্ষে এসে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তৌহিদুল ইসলাম।

ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন বলেন, “বিষয়টি জেনেছি, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আরও পড়ুন...