পিবিএ ঢাকা : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে ঘিরেই আলোচনা চলছে দলের ভিতরে-বাইরে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনিই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। বিএনপির হাইকমান্ড থেকে তাকে ইতিমধ্যেই ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে দল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কারও নাম ঘোষণা করেনি।
আগামী ২৯ মার্চ ভোটের দিন রেখে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতা চট্টগ্রাম বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি করেছিল। সে কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে অনীহা দেখা গেছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। তাদের এমন দোটানার মধ্যেই দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। ফলে সিটি নির্বাচনে যে দলটি অংশ নিচ্ছে, এটা প্রায় নিশ্চিত। দলের স্থায়ী কমিটির সভা করে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে বিএনপি। তবে মেয়র পদে প্রার্থীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন লন্ডনে অবস্থান করা দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকা একেবারে ছোট। নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর দলের মনোনয়ন চান। নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ানের নাম আলোচনায় থাকলেও নির্বাচনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তিনি। চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচন ও পরবর্তী অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে ‘বাজেভাবে’ হেরে যাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন তিনি। এর বাইরে আলোচনায় রয়েছেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরশাদউল্লাহ ও সহসভাপতি নিয়াজ মোহাম্মদ খানও। অবশ্য বড় কোনো ‘অঘটন’ না ঘটলে ডা. শাহাদাতের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তফসিল ঘোষণার দু-একদিন পর দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বিএনপির এক নেতা জানান, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ডা. শাহাদাত হোসেনেই যোগ্য। তার ক্লিন ইমেজ ও সততা রয়েছে। নেতা-কর্মীদের সুখ-দুঃখে তিনি পাশে রয়েছেন। তাই ডা. শাহাদাতই প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সিটি মেয়র পদে ধানের শীষের প্রতীক পাবেন বলে তারা মনে করছেন।
চসিক নির্বাচন সামনে রেখে গত ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির এক প্রতিনিধি সভায় অংশ নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই দিন তিনি দলের সম্ভাব্য দুই প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তারা দু’জনই নিজেদের প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন। তবে দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক, তার জন্য কাজ করার কথা বলেন তারা। তবে তাদের মূল ভাবনা হচ্ছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।
গত ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন ডা. শাহাদাত। কারাগারে থেকেই নির্বাচন করেন তিনি। সেই নির্বাচনে বিপুল ভোটে হেরে যান বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কাছে। এর পর থেকে অবশ্য সিটি নির্বাচন সামনে রেখে কাজ শুরু করেন তিনি। অন্যদিকে, জাতীয় কিংবা স্থানীয় কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। এবার সেই সুযোগ নিতে জোরেশোরেই মাঠে নেমেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ডা. শাহাদাত হোসেন পূর্বপশ্চিমকে বলেন, দেশে এখন ভোটের পরিবেশ নেই। তারপরও দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি ধানের শীষের বিজয় ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবো। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম বিএনপির দুর্গ। এটাকে পুনরুদ্ধার করাই হবে আমার লক্ষ্য। অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলেও ধানের শীষের হয়ে কাজ করবো।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ইতোপূর্বে আমি কোনো নির্বাচনে অংশ নিইনি। দলের প্রার্থীদের জন্যই কাজ করেছি। ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে শাহাদাত হোসেনের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কাজ করেছি। ফলে এবার আমি সুযোগ চাই।
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবের রহমান শামীম জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার পর দু-একদিনের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হতে পারে। সেখানে চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়র পদ ছাড়াও ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দেবে বিএনপি। এ জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে দলটি। দলের পক্ষ থেকে কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা তৈরির কাজও চলছে।
পিবিএ/জেডআই