পিবিএ: কাজী আনোয়ার হোসেনের লেখা বাংলাদেশি সাহিত্যের জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র মাসুদ রানা। বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের দুর্র্ধষ স্পাই মাসুদ রানা গোপন মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তরে। পদে পদে তার বিপদ শিহরণ ভয় আর মৃত্যুর হাতছানি। তার চরিত্র টানে সবাইকে, কিন্তু তিনি নিজে কোনো বাঁধনে জড়ান না। বইয়ের মাসুদ রানাকে ১৯৭৪ সালে চলচ্চিত্রের পর্দায় নিয়ে আসেন অভিনেতা ও প্রযোজক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘মাসুদ রানা’।
এরপর এই গোয়েন্দাকে নিয়ে আরেকটি কাজ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি কোনো এক অজানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। সম্পতি জাজ মাল্টিমিডিয়া ঘোষণা দিয়েছে সিরিজের ‘ধ্বংস পাহাড়’, ‘ভরতনাট্যম’ এবং ‘স্বর্ণমৃগ’- এই তিন উপন্যাস নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করবে। কিন্তু মাসুদ রানা কে হবেন? পাঠক মানসপটে যে মাসুদ রানার ছবি অঙ্কিত আছে, তার প্রতিচ্ছবি কে তুলে ধরতে পারবেন? এই সময়ের নায়কদের মধ্যে কাকে মাসুদ রানা মনে হয়? এসব তর্ক-বিতর্কের বাইরে গিয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘মাসুদ রানা’কে রিয়েলিটি শোর মাধ্যমে খুঁজে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
গত ২ আগস্ট থেকে চ্যানেল আইতে প্রচার শুরু হয়েছে রিয়েলিটি শো ‘কে হবেন মাসুদ রানা’। কিন্তু শুরুতেই এই উদ্যোগ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অনুষ্ঠানের একাধিক ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। যাতে প্রতিযোগীদের স্টাইল-ফ্যাশনসহ নানা বিষয়ে কটূক্তি ও তামাশা করেছেন বিচারকরা, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
দর্শকদের অভিযোগ, বিচারকরা প্রতিযোগীদের প্রতিনিয়ত অপমান করছেন। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন প্রতিযোগীর চুলের কাটিং নিয়ে ঠাট্টা করছেন বিচারকের আসনে বসা পরিচালক ইফতেখার আহমেদ ফাহমি। এ ছাড়া পরিচালক শাফায়েত মনসুর রানা, অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম, শবনম ফারিয়া ও মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজকেও প্রতিযোগীদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করতে দেখা যায়। এর বাইরে প্রতিযোগীদের অপ্রাসঙ্গিক নানান প্রশ্নের মাধ্যমে অপমান করতেও পিছিয়ে ছিলেন না বিচারকরা। বিশেষ করে ইফতেখার ফাহমি ও অভিনেত্রী মম ছিলেন সবচেয়ে এগিয়ে। তাদের ভূমিকায় মনে হয় প্রতিযোগীদের অপমানের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন তারা।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন বিচারক প্রতিযোগীদের রুম থেকে বের করে দিচ্ছিলেন, বলছিলেন অনুমতি নিয়েছ? সে আবার অনুমতি নিয়ে আসতে চায়, কিন্তু তাকে বের করে দেওয়া হয়। অথচ বাইরে থেকে ঢোকার নির্দেশনা না এলে ওই কক্ষে কেউ ঢুকতে পারবে না- এমনটাই মনে করছেন অনেকেই।
বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, ‘বিচারকদের হতে হবে বিচক্ষণ, অনুপ্রেরণাদানকারী। যদি প্রথমেই কাউকে নিরুৎসাহিত করা হয় তাহলে অভিনয়ে আগ্রহী ওই তরুণ-তরুণী কখনও ভালো করবে না।’ তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নির্মাতা বলেন, ‘বাংলাদেশ বলেন আর ভারত বলেন, এসব বিচারকাজে বিচারকদের কোনো হাতই থাকে না। রিয়েলিটি শোর প্রযোজক বলে দেন অনুষ্ঠান কীভাবে টেনে নিতে হবে। আর এটা করা হয় টেলিভিশন শোগুলোতে টিআরপি বাড়ানোর জন্য।’
বিষয়টি নিয়ে শবনম ফারিয়া বলেন, “এ মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাই না। ‘মাসুদ রানা’ ইভেন্টের সঙ্গে জড়িত সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে। তারপর বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব। কিছু না বুঝেই অনেকেই আমাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছেন। এটি দুঃখজনক।” অন্যদিকে সাফায়েত মনসুর রানা, ইফতেখার আহমেদ ফাহমি, জাকিয়া বারী মম ও মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। নাম প্রকশে অনিচ্ছুক এক অভিনেত্রী এ বিষয়ে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কোনো মানে হয় না। ্বএসব করা হয়েছে শুধু আলোচনায় আসার জন্য।’
পিবিএ/এমআই