পিবিএ,বেনাপোল: করোনার সময় ‘গড় বিলের’ নামে যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ কর্তৃপক্ষ অফিসে বসে ইচ্ছেমত মনগড়াা অতিরিক্ত বিল করায় গ্রাহকদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
গ্রাহকরা বলছেন,তাদের মিটারের রিডিং না দেখেই গত বছরের বিলের দেড় থেকে দ্বিগুন বেশি করে বিল তৈরি করে করোনা সংক্রমনের মধ্যেও যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর লোকজন শার্শা উপজেলার গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে বিদ্যুৎ বিলের কপি দিয়ে যাচ্ছেন।বিলের জরিমানা নেওয়া হবে না বলা হলেও ব্যাংকে জরিমানা নেওয়া হচ্ছে।
অবশ্য প্রতিটি বিদ্যুৎ বিলের কপিতে লেখা আছে,আপনার অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আপনার গত বছরের একই সময়/একই মাসের বিদ্যুৎ ব্যবহারের ভিত্তিতে গড় বিল প্রণয়ন করা হলো। কোন অসঙ্গতি থাকলে পরবর্তীতে তা সংশোধন/সমন্বয় করা হবে।
এ ব্যাপারে ফজিলাতুন নেছা মহিলা কলেজের হিসাববিঞ্জানের অধ্যাপক বখতিয়ার খলজি বলেন,গড় বিলের নামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মানুষকে ধোকা দিচ্ছেন।প্রতিটি বিলে গেল বছরের চেয়ে দেড় থেকে দ্বিগুন বেশি করে দেওয়া হচ্ছে।এখানে বেশি ইউনিট দেখানোর কারনে বিলের ধাপও পরিবর্তন হচ্ছে।টাকার অংকও বাড়ছে।ওরা সমন্বয়ের কথা বলছে কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব?
পল্লী বিদ্যুতের বিলের ইউনিট সাতটি ধাপে আদায় করা হয়। লাইফ লাইনের রেট(০-৫০) প্রতি ইউনিট সাড়ে তিন টাকা,০-৭৫ প্রতি ইউনিটড ৪দশমিক১৯ টাকা,৭৬-২০০ প্রতি ইউনিট ৫দশমিক ৭২ টাকা,চার নম্বর ধাপে (২০১-৩০০)প্রতি ইউনিট নেওয়া হয় ছয় টাকা।
“এমন অনেক গ্রাহক আছেন যাদের ইউনিটের সংখ্যা কম থাকার পরও গড় বিলে তৃতীয় কিম্বা চতুর্থ ধাপে বিল আদায় করা হচ্ছে।পরে তিন মাস পর সমন্বয় করা হবে কীভাবে? তৃতীয় কিম্বা চতুর্থ ধাপের টাকা তো সমন্বয় করা যাবে না,যাবে কেবল ইউনিটের সমন্বয় করা।এখানে বড় একটা শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। করোনার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা গ্রাহকের বাঁশ দিচ্ছে।”
বেনাপোল ভবেরবেড় গ্রামের বাসিন্দা আওয়াল হোসেন বিদ্যুৎ বলেন,সরকার মার্চ,এপ্রিল ও মে মাসের বিল পরিশোধে শিথিলতা প্রদান করেছেন । সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কেন ঘর থেকে বের হয়ে গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিল পৌঁছে দিচ্ছেন তাহা আমার বোধগম্য নয়। নিরাপত্তার কারণে এটা বলতেই পারি,যে ব্যক্তি বাড়ি এসে বিলটি দিয়ে গেল। তিনি কি কোভিড-১৯ নেগেটিভ না পজিটিভ তা কি বিদ্যুৎ বিভাগ জানেন? ঐ ব্যক্তি শার্শা উপজেলায় বিদ্যুৎ বিভাগে চাকুরী করে বলে দূর্দান্ত প্রতাপে দৌঁড়ে বেড়াচ্ছেন।মাস্ক বাদে তার কোন সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন,গত বছর (২০১৯) সালে এপ্রিল মাসে তার বিদ্যুৎ বিল এসেছিল ৮০০ টাকা। কিন্তু এ বছরে সেই বিল দেওয়া হয়েছে ১২৮৪ টাকা।
নয়ন কাজল নামে এক গ্রাহক বলেছেন, এবার আমার বিদ্যুৎ বিল ২ হাজার টাকার উপরে। করোনার কারণে ২০ দিনে আমি বাপের বাড়ি ছিলাম। বিল দেখে আমার মাথা ঘুরে গেছে।
বেনাপোলের শিকড়ি গ্রামের ছাবদার আলি বলেন,বিলম্বে পাওয়া এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিলটি বেনাপোল স্টান্ডার্ড ব্যাংকে জমা দিতে গেলে তারা জরিমানাসহ বিলের টাকা নিয়েছে। জরিমানা নেওয়া হবে না এমন কোন নির্দেশনা তাদের কাছে নেই বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
এব্যাপারে শার্শা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) হাওলাদার রুহুল আমিন বলেন,করোনা ভাইরাসের কারণে প্রতি বাড়ি বাড়ি যেয়ে বিল লেখা সম্ভব না। এব্যাপারে সরকারী চিঠি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত হলে পরে সমন্বয় করে দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এভাবে প্রকৃত হিসাব মেলাতে পারবো না।যেটা হয়েছিল সেটা বাস্তবতায় হবে না কিছু কমবেশি হবে।এই পরিস্থিতিতে আমরা রিডিং আনতে পারিনি,মানুষের বাড়ি যেতে পারিনি।আমরা বুঝতেছি কিছু গরমিল হয়েছে তবে আমাদের অফিস খোলা আছে। আসলে ঠিক করে দিচ্ছি।”
পিবিএ/শেখ নাছির উদ্দিন/এএম