অনলাইনে নকল স্মার্টফোন কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা

mobile_phone-PBA

পিবিএ ডেস্ক: অনলাইনে নকল ফোনের চলছে রমরমা বাণিজ্য। আকর্ষনীয় অফার দেখে সহজেই বোকা বনে যাচ্ছেন ক্রেতারা। ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে এধরনের প্রতারণা করছেন কিছু অসাধু মোবাইল ব্যবসায়ীরা।

সম্প্রতি নোকিয়া স্টোর বিডি নামে একটি ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয় নকিয়া ৮.১ মডেলের একটি মোবাইল সেটের বিজ্ঞাপন। এতে লেখা হয়েছে, ৬৫ শতাংশ ছাড়ে নোকিয়া ৮ ফোরজি (নিউ) মোবাইলটি লুফে নিন। এরপর লেখা আছে নোকিয়া ৮.১ ফোরজি (ব্র্যান্ড নিউ)। বর্তমান মূল্য : ৩৯৫০ টাকা মাত্র। অর্ডার করুন- লিখে দুইটি মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে। ১২ মাস মানিব্যাক গ্যারান্টি এবং দুই বছরের ওয়ারেন্টি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সারা দেশে পৌঁছে দেয়া হয়। ডেলিভারি চার্জ ১৫০ টাকা (কুরিয়ার সার্ভিস)। এরপর লেখা আছে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য : ১৬ মেগাপিক্সেল ডুয়েল ক্যামেরা পেছনে, সামনে ক্যামেরা ৮ মেগাপিক্সেল।

১২৮ জিবি ইন্টারন্যাল মেমরি, ৪ জিবি র‌্যাম। এভাবে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে ফোনটির। শুধু এ মডেলটিই নয়, নকিয়া ৭.১ প্লাস, নোকিয়া নাইনইডিইজিসহ বিভিন্ন ফোনের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে এখানে। এসব ফোনে ৬৫ থেকে ৭০ পারসেন্ট ছাড় দেখিয়ে লোভনীয় অফার দেয়া হয়েছে।

নকিয়া বিডি স্টোরে নকিয়া ৮.১ মডেলের ফোনটির দাম ৬৫ পারসেন্ট ছাড়ে ৩৯৫০ টাকা, ৭০ পারসেন্ট ছাড়ে নকিয়া ৭.১ প্লাস ফোনটি ৭৫০ টাকা, নোকিয়া নাইনইডিইজি ফোনটি ৪২০০ টাকা বিক্রয়মূল্য লেখা হয়েছে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোকিয়া ৮.১ ফোনসেটটির বাজারমূল্য ৪৪ হাজার টাকা, নকিয়া ৭.১ প্লাস ফোনটির মূল্য ৩৪ হাজার ৯৯০ টাকা। নোকিয়া নাইনইডিইজি ফোনটির দাম ৫২ হাজার ৮০০ টাকা।

নোকিয়া বিডি স্টোরে দেয়া ফোন নম্বরটিতে কল করে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে দুইবার অপরপ্রান্ত থেকে কেটে দেয়া হয়। পরে ক্রেতা সেজে কথা বললে বলা হয়, এটি তাদের অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অর্ডার করলে এসএ পরিবহনের মাধ্যমে তা পাঠিয়ে দেয়া হয়। যিনি কথা বলছেন, তিনি তার নাম প্রথমে বলতে রাজি না হলেও পরে জানান, শামীম। থাকেন মগবাজার নয়াটোলা এলাকায়। এটি তাদের অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর কোনো অফিস নেই। নোকিয়া ৮.১ মডেলের ফোনটির বাজারমূল্য ৪৪ হাজার টাকা। এ ফোনটি এত সস্তায় বিক্রি করেন কীভাবে? এমন প্রশ্ন করতেই উত্তর না দিয়ে লাইন কেটে দেন তিনি। এরপর চেষ্টা করেও আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।

মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা রিফাত ফেসবুকে নোকিয়া স্টোর বিডির বিজ্ঞাপন দেখে অর্ডার দেন নোকিয়া ৮.১ ফোরজি ফোন সেটটির জন্য। পরদিন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছে যায় ফোন সেটটি। কন্ডিশনে বিল পরিশোধ করেন রিফাত। তিনি বলেন, প্রথমে দেখে বুঝে উঠতে পারিনি ফোনটি নকল। তবে ব্যবহার করে যা বুঝেছি, এই ফোনসেটটি কেউ ফ্রি দিলেও আমি নিতাম না। আমি এ ফোনসেটটি কিনে প্রতারিত হয়েছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু নকিয়াই নয়, স্যামসাং, হুয়াওয়ে, এমআইসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের নকল ফোন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় পেজ ও গ্রুপ খুলে কম মূল্যে লোভনীয় অফার দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। নকিয়া স্টোর বিডি ডট নিউ মোবাইল বিডি, মোবাইল শপ, নিউ মোবাইল অনলাইনসহ নানা নামে পেজ খুলে অনলাইন ডেলিভারির জন্য ফোন নম্বর দিয়ে জমজমাট ব্যবসা চালাচ্ছে একটি চক্র। আর এসব নকল মোবাইল ফোনের জোগান দিচ্ছে নগরীর বেশ কয়েকটি মার্কেটের কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এসব পেজ কয়েকদিন পর পর বন্ধ করে দিয়ে আবার নতুন পেজ খুলে প্রতারকচক্র। এদের নেই কোনো অফিস বা ঠিকানা। সবকিছু আড়াল রেখে এরা শুধু কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে পণ্য পাঠাচ্ছে। বেশির ভাগ প্রতারণার অভিযোগ এসেছে মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে। ‘অরিজিনাল’, আসল, মাস্টার কপি-নানা শব্দে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে প্রতারকচক্র। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী মাস্টার কপি বা ক্লোন কপি বিক্রি নিষিদ্ধ।

জানতে চাইলে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, গুটিকয়েক লোক নকল পণ্য দিচ্ছে। কিন্তু এর সংখ্যা খুব কম। ই-ক্যাব অনেক আগে থেকেই এসব প্রচারণার বিরুদ্ধে সোচ্চার। আমাদের দেশে ই-কমার্সের পরিধি বেড়েছে। এজন্য জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা তৈরি হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ই-কমার্স সেল গঠন করা হবে। ওই সেল সবকিছুর নজরদারি করবে।

তিনি বলেন, প্রতারকদের খপ্পর থেকে মুক্ত থাকতে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। জনসচেতনতা তৈরিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ক্রেতাদের উচিত বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজ থেকে পণ্য ক্রয় করা। তাহলে প্রতারণার ফাঁদগুলো এড়ানো সম্ভব।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...