অনলাইন হচ্ছে নারীদের হ্যারেজমেন্টের নতুন রাস্তা

মরিয়ম মুহসিনাত মিথুন: একবিংশ শতাব্দীর যুগ চলছে এখন! একবিংশ শতাব্দী মানেই প্রতিযোগিতা ঘরে-বাইরে, স্কুল-কলেজ, ভার্সিটি অফিস-আদালত সব জায়গাতে। বর্তমানে আধুনিকতার এবং সভ্যতা বিকাশের চূড়ায় অবস্থান করছি বলা যায়। কিন্তু এত এত পৃথিবীর সব আয়োজনে মানুষের মন মানসিকতায় কি আধুনিকতার স্পর্শ পেয়েছে?? যদি আমি বলি, আমার মতে পায়নি! যদি পেত তবে নারী পুরুষের বৈষম্য থাকতো না, সবাইকে মানুষ হিসেবেই বিচার করা হতো। আমাদের সমাজে এখনো লিঙ্গভেদে অন্যায়কে বিচার এবং প্রশ্রয় দেয়া হয়।

মার্কজাকারবার্গের ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ফেসবুক। খুব সুন্দর গোছানো পরিপাটি একটা প্লাটফর্ম। পুরো বিশ্বকে কানেক্টেড রাখার জন্য সবথেকে বেশি ব্যাবহার এই ফেসবুক,বিশেষ করে আমাদের দেশে এর ব্যাবহার প্রচুর।

ফেসবুকের সেটিংসে হু ক্যান সেন্ড ইউ ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্টস নামে একটি অপশন আছে যেখানে দুই ধরনের মানুষ আপনাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিতে পারবে
১) সবাই
২) শুধুমাত্র আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে বন্ধুর বন্ধুরা।
এবং ফ্রেন্ড লিস্টে ফ্রেন্ড রাখার সীমাবদ্ধতা ৫ হাযার জন ফ্রেন্ড।

আপনার কি মনে হয় মার্কজাকারবার্গ সবাই অপশনটা কেন দিলো? পৃথিবী ব্যাপি সবাইকে কানেক্টেড রাখবার জন্যই তো? আচ্ছা এইযে নানান ধরনের অপরিচিত মানুষদের কে ফ্রেন্ড লিস্টে রাখার সুযোগ করে দিয়েছে মার্কজাকারবার্গ কেন? একজন মানুষের জীবনে ৫ হাযার জন কে ব্যাক্তিগত ভাবে পরিচিত হওয়া সম্ভব না যতোই সে সেলিব্রেটি হোক! তবুও কেন দিলো এত মানুষ রাখার জন্য জায়গা? মার্কজাকারবার্গ কি না বুঝেই দিয়েছে??

আপনি জানেন? আপনি যত নতুন নতুন মানুষের সাথে মিশবেন ততই শিখবেন।
মস্তিষ্কের ক্ষুদ্রতম এককের নাম নিউরন, একটি নিউরনের সাথে অন্য নিউরনের কানেকশন কে নিউরাল কানেকশন বলে। আপনি যখন নতুন কোন মানুষের সাথে পরিচিত হবেন তখন তার সাথে বলা কথা, কাটানো সময় সব কিছুই নিউরাল কানেকশন ঘটাতে সাহায্য করবে এবং যার মস্তিষ্কের নিউরাল কানেকশন যত বেশি যে তার মস্তিষ্ককে তত বেশি সচল রাখতে পারে।আমরা যখন নতুন কিছু শিখতে যাই, তখন আমাদের মস্তিষ্কে বেশ কিছু রাসায়নিক উপাদানের ক্ষরণ হয় এবং মস্তিষ্কে একটি সাময়িক পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে সেটা শর্ট টার্ম মেমোরিতে পরিণত হয়। আবার সেটিকে বারবার পুনরাবৃত্তি করলে, নতুন নিউরাল কানেকশন তৈরি হয়ে মস্তিষ্কে স্থায়ী পরিবর্তন সাধন করে সেটা লং টার্ম মেমরিতে পরিণত হয়।

ব্রেইন হচ্ছে একটি প্লাস্টিক অরগান। ব্রেইন প্লাস্টিসিটি মানে এই না যে, আমাদের মস্তিষ্ক প্লাস্টিকের তৈরি। যেকোনো বয়সে মস্তিস্কের পরিবর্তন হয়ে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাকেই বলা হয় ব্রেইন প্লাস্টিসিটি। এর মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ক যেকোনো বয়সে নতুন নিউরন কানেকশন তৈরির মাধ্যমে এবং নতুন নিউরন গঠনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এটি আমাদের যেকোনো কিছু শিখতে এবং নতুন অভ্যাস গঠন করতে সাহায্য করে।

আপনি যত নিজেকে গুটিয়ে নিবেন সমাজ থেকে ততই আপনি ব্রেইনের নেগেটিভ প্লাস্টিসিটির স্বীকার হবেন। এই নেগেটিভ প্লাস্টিসিটির উদাহরণ হিসেবে আপনাকে আমি পোষা পাখির কথা বলি যে পাখি জন্ম থেকে খাচায় বন্দি তার মস্তিষ্কের নিউরাল কানেকশন স্বাধীন একটি পাখির নিউরাল কানেকশনের চেয়ে কম হবে। কেন?? কারণ খাঁচায় বন্দি পাখিটিকে পরিবেশের বিরুপ আচরণের সাথে খাপ খাওয়ানো লাগে না, খাবার সংগ্রহ করতে হয়না, শত্রুর থেকে সবসময় সাবধান থাকতে হয়না যা স্বাধীন একটি পাখিকে করতে হয় তাই স্বাধীন পাখিটির মস্তিষ্কের নিউরাল কানেকশন বেশি এবং সে জানে কিভাবে নিজেকে সংগ্রামে টিকিয়ে রাখতে হবে পৃথিবীতে।

নিউরাল কানেকশন নিয়ে ডিটেইলস অনেক কিছু বলার আছে কিন্তু আমি যতটুকু সম্ভব ছোট করে মেইন পয়েন্ট অফ ভিউকে আনার চেষ্টা করেছি আমার লেখায়। এখন কেন এত কথা?
কারণ হচ্ছে কিছু পুরুষ মানুষ যাদেরকে অলওয়েজ জ্ঞান দিতে শুনি মেয়েরা অনলাইনে এত হ্যারেসমেন্টের স্বীকার ওরা যায় কেন গায়রে মাহরামের সাথে কথা বলতে? ইসলাম না মানলে এমনি হয় এটাই উচিৎ হওয়া হ্যান ত্যান।

আপনি নিজের ব্রেইনকে নেগেটিভ প্লাস্টিসিটির মধ্যে রাখতে চান ভালো কথা কিন্তু একটা নারীকেও এই নেগেটিভ প্লাস্টিসিটিতে আটকে থাকতে বলার আপনি কে? আর ফেসবুক প্লাটফর্ম টাই নতুন নতুন বন্ধুত্বের জন্য সেখানে অপরিচিতদের রাখবেন না বলার আপনি কে?? পুরুষত্ব বলে যদি কিছু থাকে তবে অইসব পুরুষদের বিপক্ষে অবস্থান নেন যারা অকারণে নারীদের হ্যারেসমেন্টে করে অনলাইনে অফলাইনে।

নারীকে কোন বাধ্যবাধকতা আটকাতে আইসেন, যে নারীর ইচ্ছা সে ঘরে থাকবে, যে নারীর ইচ্ছা সে বাহিরে যাবে। এই ইচ্ছা একান্ত নারীর নিজের আপনি পুরুষ হিসেবে শুধু নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করতে পারেন আটকানোর অধিকার আপনার নাই। আর হ্যাঁ অন্য পুরুষের কাছে আপনার পরিবারের নারীর নিরাপদ কিনা এটা প্রত্যাশা করার আগে নিজেকে সংশোধন করেন এবং প্রশ্ন করেন আপনি সব নারীর জন্য নিরাপদ তো??

লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী

আরও পড়ুন...