কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আগাম জামিনে থাকতে দেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন আপিল বিভাগ।
রমনা থানার নাশকতার মামলায় বিএনপির দুই নেতার জামিন প্রশ্নে এক আদেশে এমন অভিমত দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
গত ৬ মার্চ প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চের ওই আদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আপিল বিভাগের আগের দেওয়া কয়েকটি রায়ের রেফারেন্স দিয়ে আদেশে বলা হয়, এই সব রায়ের নীতি অনুসারে ব্যক্তি/ব্যক্তিদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আগাম জামিনে থাকতে দেওয়া উচিত নয়। পুলিশ রিপোর্ট পর্যন্ত বিবাদীদের আগাম জামিন দিয়ে হাইকোর্ট বিভাগ আপিল বিভাগের রায়ের নীতি বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
কারণ মাঝেমধ্যে যথাযথ তদন্তের স্বার্থে কোনো মামলার প্রতিবেদন দিতে বেশি সময় নিতে পারে তদন্তকারী সংস্থা। এই পরিস্থিতিতে, অভিযুক্ত পুলিশ রিপোর্ট দাখিল না করা পর্যন্ত আগাম জামিনের সুবিধা উপভোগ করার অধিকারী নয়।
‘রাষ্ট্র বনাম মো. কবির বিশ্বাস’, ‘রাষ্ট্র বনাম অধ্যাপক ড. মোরশেদ হাসান খান এবং অন্যান্য, ‘রাষ্ট্র বনাম আবদুল ওয়াহাদ শাহ চৌধুরী’ মামলার রায় এ আদেশে উদ্বৃত করা হয়।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গত বছর ২৮ অক্টোবর সমাবেশ ডাকে বিএনপি। ২০ শর্তে তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ। ওই দিন আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরুর আগেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহত এক পুলিশ সদস্যেরও মৃত্যু হয় সেদিন। সংঘর্ষের এ ঘটনায় রমনা, পল্টনসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৩৯টি মামলা করে পুলিশ।
এসব মামলার মধ্যে রমনা থানায় এক মামলায় গত বছর ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও যুগ্ম মহাসচিব এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
হাইকোর্ট বিভাগ তাদের পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন দেন। হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এম আমিন উদ্দিন। জামিন আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সগীর হোসেন লিয়ন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে হাইকোর্টের আদেশ সংশোধন করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়া পর্যন্ত আগাম জামিন আদেশ সংশোধন করে জয়নুল আবেদীন ও এম মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন।
আদেশে বলা হয়, আগাম জামিনের এই সময়ের মধ্যে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তাদের আত্মসমর্পণ করতে হবে। আত্মসমর্পণ করে তারা যদি জামিন আবেদন করেন তবে তা বিবেচনা করতেও বলা হয়েছে।