স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি

অনির্দিষ্টকাল সড়ক-রেলপথ অবরোধের ঘোষণা তিতুমীর শিক্ষার্থীদের

রাজধানীর মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আগামীকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সে অনুযায়ী সকাল ৬টা থেকে মহাখালীর রেলপথ, আমতলী ও গুলশান লিংক রোডের সড়কপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

তবে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের কারণে সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এই অবরোধ কর্মসূচি কিছুটা শিথিল থাকবে। একইসঙ্গে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তিতুমীর কলেজে সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণাও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে কলেজটির শিক্ষার্থীদের সংগঠন তিতুমীর ঐক্যের পক্ষ থেকে এসব কর্মসূচির বিষয়ে পুনরায় নিশ্চিত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, আর কোনো আশ্বাস আমরা পেতে চাই না। এবার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ঘোষণা আসতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর বিপক্ষে যারা দাঁড়াবে তারা জাতীয় বেইমান হিসেবে পরিগণিত হবে।

মেহেদী হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, শুরু থেকেই আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। কিন্তু রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে মশকরা করছে। বারবার মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছি শুরু থেকেই। এখন দেওয়ালে পিঠ লেগে গেছে। এখন আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাই আমরা ঘোষণা দিয়েছি — ‘হয় বিশ্ববিদ্যালয়, না হলে মৃত্য’। কাল সকাল থেকেই তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি পালন করবেন।

অন্যদিকে, দাবি আদায় করতে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন কলেজটির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনের নেতারা৷ কলেজটির বিভিন্ন বর্ষের ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে —

‘আমরা সরকারি তিতুমীর কলেজের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০২০ সেশনের শিক্ষার্থীরা, স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি যে, আমাদের কলেজ দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকলেও বর্তমানে সেই অধিভুক্তি বাতিল করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আমাদের শিক্ষার মান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে মানসম্মত শিক্ষা ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে আর মেনে নেওয়া সম্ভব না। অন্যান্য বিভাগ ও সেশনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ এর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে এবং সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বেশ কয়েকমাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে মিছিল, সড়ক-রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়। তবে সম্প্রতি এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ৭ দফা দাবিও জানিয়েছেন।

দাবিগুলো হচ্ছে:-

১. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।

২. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২০২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

৩. শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করতে হবে।

৪. ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুইটি বিষয় ‘আইন’ এবং ‘জার্নালিজম’ বিষয় সংযোজন করতে হবে।

৫. একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।

৬. শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিত করতে হবে।

৭. আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ করতে হবে।

আরও পড়ুন...