অন্ধকার ভেদ করে আলোর পথে এগিয়ে চলেছে নারীরা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ফটো

পিবিএ ঢাকা: নারীর অগ্রগতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের নারীরা অন্ধকার ভেদ করে আলোর পথে এগিয়ে চলেছে। লক্ষ লক্ষ নারী লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সংবিধানে নারীর অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেগম ফজিলাতুনন্নেসা ইন্দিরা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন্নাহার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্দার আড়ালে থাকা নারী এখন অন্ধকার থেকে আলোর পথে চলে আসছে। তারা এখন সমাজের সর্বস্তরে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজ বাংলাদেশের যে সফলতা এর পেছনে নারীর অবদান কোনো অংশেই কম নয়।

তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে জুডিশিয়ারি সার্ভিসে কোনো মেয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে না- এটা আইন করে বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সংবিধানে নারীদের যে অধিকার দিয়েছিলেন সেই অধিকারের ফলে নারীরা এখন সর্বত্র এগিয়ে চলেছে। প্রথমে তিনি নারীদের পুলিশে চাকরি দিয়ে নারীর অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের বড় বড় পদে নারীরা যেতে পারত না, কিন্তু এখন সে বাধা দূর হয়েছে। আমি ক্ষমতায় আসার পর নারীদের মধ্য থেকে বিচারক নিয়োগ দিয়েছি, সচিব নিয়োগ দিয়েছি। এছাড়া ডিসি-এসপি, পাইলট, নৌবাহিনী-বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীতে প্রচুর নারী কাজ করছে দক্ষতার সঙ্গে। নারীদের যখন সচিব-ডিসি-এসপি নিয়োগ দেই তখন আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে; কিন্তু কোনো কথাই আমি শুনিনি। আমি যাকে এসপি নিয়োগ দিয়েছিলাম প্রথমে সে এক হাতে পিস্তল এবং অন্য হাতে ডাকাত ধরে সে প্রমাণ করেছে যে নারীরাও পারে।

তিনি আরও বলেন, মেয়েরা আজ সর্বক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আমি ৬০ ভাগ নারী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিলাম। যে কারণে লক্ষ লক্ষ নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া আজ প্রতিটি ট্রেডে নারীদের সুযোগ-সুবিধার জন্য ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। নারী যেন চাকরি ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রসর হতে পারে এবং উদ্যোক্তা হতে পারে সে জন্য তাদের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। অনেক নারী উদ্যোক্তা হয়ে আজ সফল হয়েছে। জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী, সংসদ নেতা এবং বিরোধী দলের নেতা নারী হয়ে এখানেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে নারীরা।

খেলাধুলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা খেলাধুলায় এগিয়ে আছে। মেয়েরা ক্রিকেটের স্বর্ণজয় করেছে যা ছেলেরা এখনও পারেনি। মেয়েদের যখন ফুটবল খেলা শুরু হলো তখন সমাজের বিভিন্নদিক থেকে বাধা আসে। পরে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে খেলাধুলা শুরু করা হলো। এখন তারাই আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের দেশের সুনাম বয়ে নিয়ে আসছে। এখন আর খেলাধুলায় মেয়েদের কোনো বাধা নেই। আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে এবং সংখ্যা অনেক বেশি। এ বিষয়ে আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলেছি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য, ছেলেরা কেন পিছিয়ে পড়ছে? কেন স্কুলে আসার হার তাদের কমছে; তা খতিয়ে দেখতে। কারণ জেন্ডার সমতা থাকতে হবে। নারীরা শিক্ষিত হওয়ার ফলে সমাজে একটা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। গ্রামের অশিক্ষিত নারীরা এখন একাই কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে তাদের চিকিৎসাসেবা নিতে পারে। এখন আর চিকিৎসার জন্য পুরুষের মুখের দিকে চেয়ে থাকতে হয় না। যে সকল নারীর টাকা-পয়সা নেই তাদের মামলা-মোকাদ্দমার জন্য আমরা লিগ্যালএইড প্রতিষ্ঠা করেছি। এখান থেকে তারা আইনি সহায়তা পাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, নারী শিশুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেই চলছে। অনেক উন্নত বিশ্বে নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন হয়। এ জন্য পুরুষরাই দায়ী। কিন্তু পুরুষরা ভাবে না যে তারও মেয়ে আছে। নারীরা শিক্ষিত হয়ে যার যার মতো নিজের পায়ে দাঁড়ালে নির্যাতন থেকে মুক্তি পাবে।

তিনি বলেন, মেয়েদের মাতৃত্বকালীন ছুটি এর আগে চার মাস ছিল, আমি সেটা বাড়িয়ে ছয় মাস করেছি। কারণ দীর্ঘসময় মায়ের দুধ বাচ্চাকে পান করালে সে শিশু সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। গার্মেন্টের মেয়েরা একসময় ১৬০০ টাকা বেতন পেতেন। আজ সেখানে সর্বনিম্ন বেতন ৮ হাজার টাকা হয়েছে। এছাড়া কর্মজীবী নারীদের জন্য আমরা হোস্টেল এবং ডরমেটরি করে দিচ্ছি। মেয়েরা সবধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। বেগম রোকেয়া নারীদের উন্নয়নে যে স্বপ্ন দেখতেন আমরা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর তা বাস্তবায়ন করছি। ফলে সমাজ এবং দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...