অন্যকিছুকে নাটক বলে চালানো হচ্ছে : বিপাশা হায়াত

নাট্যাঙ্গনের জনপ্রিয় এবং গুণী অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত। তাকে গুণী বলার কারণ তিনি আসলে বেশ কয়েকটি মাধ্যমে কাজ করেন। তিনি চিত্রনাট্য লিখেন, ছবি আঁকেন, সচেতনতামূলক কাজ করেন। সর্বোপরি তার ব্যক্তিত্ব সমীহ আদায় করার মতো। নাটক এবং নানা প্রসঙ্গে বার্তাসংস্থা পিবিএ’র পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কথা বলেছেন জিয়াউল জিয়া-

পিবিএ : আপনার বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে বলুন-

বিপাশা হায়াত : আমি এখন মূলত অনেকগুলো কাজের প্লানিং নিয়ে ব্যস্ত। পেইটিংও করছি। লিখে চলেছি নাটকের চিত্রনাট্যও। পারিবারিক ব্যস্ততা তো রয়েছেই। এসব নিয়েই সময় কাটছে।

পিবিএ : পেইন্টিংয়ের ক্ষেত্রে আপনার মাধ্যম কি ?

বিপাশা হায়াত : আমি আসলে কোন ফিক্সড মিডিয়ায় কাজ করি না। আমি এক্রেলিক, ওয়াটার, পেন্সিলসহ অনেক মাধ্যমেই কাজ করি। আসলে আমি কি আঁকবো সেটাই আমাকে মাধ্যম বেছে নিতে সাহায্য করে। আর বর্তমানে শিল্পকলা যে মাধ্যমে পৌছেছে তাতে এখন ফিক্সড কোন মাধ্যমে কাজ হচ্ছে কম। তবে আমার পেইন্টিংয়ের সাবজেক্টটা কিন্তু ফিক্সড। সেটা হলো ‘মেমোরি। স্মৃতি নিয়েই বাঁচি আমরা। চেষ্টা করি নানাভাবে এটাকে উপস্থাপন করতে।

পিবিএ : অভিনয়ে ফিরবেন কবে?

বিপাশা হায়াত : আমি তো অভিনয় থেকে সরে যাইনি। মধ্যে আমাকে একটু বিরতি নিতে হয়েছে কারণ ভাল স্ক্রিপ্ট পাচ্ছিলাম না। তাই কাজ করা হয়নি। এখন চিত্রনাট্য নিজেই লিখছি। নিজের লেখা নাটকেই অভিনয় করবো। আসলে আমি কখনোই অভিনয় থেকে সরতে পারবো না। আমি কোন না কোনভাবে অভিনয়ের সাথেই আছি। এই অভিনয়-ই আমাকে পরিচিতি এনে দিয়েছে, জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। তাই একে আঁকড়ে ধরেই থাকতে চাই।

পিবিএ : দর্শকদের অভিযোগ, তারা গল্পহীন নাটক দেখতে দেখতে ক্লান্ত। আপনিও বললেন, ভাল স্ক্রিপ্টের অভাবে অনেক দিন কাজ করছেন না। দর্শকদের এ অভিযোগ সম্পর্কে কিছু বলুন-

বিপাশা হায়াত : গল্পহীন নাটক হয় কখনো? হয় না। তার মানে নাটকের নামে যেসব দেখানো হচ্ছে সেসব আসলে নাটক নয়। অন্যকিছুকে নাটক বলে বলে চালানো হচ্ছে। এসব আসলে নাটকের ব্যাকরনের মধ্যে পড়ে না। কেন এসব হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে- সবই আমরা জানি। অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন দরকার। প্রকৃতঅর্থে নাটক ফিরে আসুক-এটাই চাই।

পিবিএ : অনেকেই বলছেন এক ঘণ্টার নাটক আর থাকবে না। আপনার মন্তব্য কি?

বিপাশা হায়াত : ধারারাহিক, সোপ অপেরা বা যে ফর্মেই হোক, নাটক তো নাটকই, তাই না? নাটক টিকে থাকবে। হয়তো লেন্থটা কম-বেশি হবে। হোক সেটা ইউটিউব বা অনলাইন কনটেন্ট কিন্তু সেখানে যেন নাটক থাকে। একটা ভাল নাটকের জন্য প্রথম দরকার একটা ভাল স্ক্রিপ্ট, তারপর একজন ভাল পরিচালক। যিনি নাটকের চরিত্রের আবেদন বুঝে দক্ষ অভিনেতাদের কাস্ট করবেন। আর অভিনয়শিল্পীদের দায়িত্ব হবে নিজের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে ওই চরিত্রে ধারন করা। এই কাজগুলো যখন ঠিকভাবে হবে তখন একটি ভাল নাটক হবে বলেই আশা করা যায়।

পিবিএ : টিভি নাটকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আক্ষেপের বিষয় কোনটি বলে মনে করেন?

বিপাশা হায়াত : প্রথিতযশা এবং দক্ষ অভিনেতারা এখন অনেকটা বেকারই বলা যায়। চিত্রনাট্যকাররা যে ভাল আছে সেটাও বলা যাবে না। গুণী পরিচালকরদেরকেও উপেক্ষা করা হচ্ছে। আমি মনে করি, এই মেধাবী মানুষগুলো কাজ করতে পারছে না বলেই ভাল নাটক হচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারি মহলের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। কারণ গুণীদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়াটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নানা প্রকল্পের মাধ্যমে এদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব এবং আশু প্রয়োজন। এদেও মেধাগুলো আমরা নষ্ট কওে ফেলছি। এটা অন্যায়। সংস্কৃতির অগ্রগতির প্রশ্নে কোনভাবেই ইতিবাচক কিছু নয়।

পিবিএ : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার পদচারনা কেমন?

বিপাশা হায়াত : খুব কম। ফেসবুকে আমার যে একাউন্টটা রয়েছে তার বন্ধু সংখ্যা খুবই সীমিত। খুব সিলেক্টিভ কিছু মানুষকেই সেখানে এ্যাড করেছি। কিন্তু বাইরে গেলে প্রায়ই নানা রকম কথা শুনি। সেদিন একজন বললেন, ‘আমি তো আপনার ফ্রেন্ড! আরেকজন বললেন, ‘আপনি তাহসানকে নিয়ে এটা কেন বললেন?’ আমি তো অবাক। কি বলে এসব! আসলে তারা আমার ফেক বা ভুয়া কোন আইডির সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছেন। সেসব আইডিতে যা দেখেছেন তা-ই বলেছেন। তাই সকলকে বলবো, আমাকে ফেসবুকে খুঁজে লাভ নেই। খুঁজে যাকে পাবেন তিনি আমি না, অন্য কেউ!

পিবিএ/জিজি

আরও পড়ুন...