
আল-মামুন,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের আট দিন পর মুক্তি পেয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থী। তাদের কয়েক দফায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রিবেক চাকমা এই তথ্য জানান।
তবে কখন কোথায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। গত ১৬ এপ্রিল সকালে খাগড়াছড়ির গিরিফুল থেকে পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ হয়। মূলত ব্যাপক জনরোষের মুখে দুর্বৃত্তরা তাদের মুক্তি দিয়েছে বলে পিসিপির বিবৃতিতে জানানো হয়। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ওই শিক্ষার্থীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও পাওয়া যায়নি।
মুক্তি পাওয়া পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- পিসিপির চবি শাখার সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগ ও একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা এবং প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো।
গত ১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে তাদের অপহরণের অভিযোগ করা হয় পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ এর বিরুদ্ধে। অপহরণের পর তাদের বহনকারী অটো চালককে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে তাদের উদ্ধারে ব্যাপক অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। অভিযানে ভাইবোনছড়া এলাকায় ইউপিডিএফের আস্তানা থেকে নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। তাদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন, মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে।
অপহরণের এই ঘটনার জন্য পাহাড়ের আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-প্রসীত গ্রুপকে দায়ী করা হলেও সে দায় অস্বীকার করে আসছিলো সংগঠনটির খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক ও মুখপাত্র অংগ্য মারমা।
এদিকে- ইউপিডিএফ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে রাঙামাটি জেলা ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা বলেন, শুধুমাত্র জেএসএস সন্তু গ্রুপের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাল্পনিক অভিযোগের ভিত্তিতে খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীকে কথিত অপহরণ ঘটনায় ইউপিডিএফকে জড়ানো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক।
ইউপিডিএফ সংগঠক অংগ্য মারমা ইতিমধ্যে মিডিয়ায় বিবৃতি দিয়ে উক্ত কথিত অপহরণ ঘটনার সাথে ইউপিডিএফের জড়িত থাকার অভিযোগ দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এরপরও কথিত ঘটনার সাথে ইউপিডিএফকে জড়িয়ে বিশেষ মহল ও জেএসএস সন্তু গ্রুপ যেভাবে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে নিন্দা জানান সংগঠনটি।
বিবৃতিতে আরো বলেন, ‘কাউখালীর জীবতলি মইন এলাকা থেকে শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমাকে ইউপিডিএফ নেতার মাধ্যমে তার পিতা ধনঞ্জয় চাকমার নিকট হস্তান্তর করার তথ্যটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক, মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। ইউপিডিএফ ৫ শিক্ষার্থীর কথিত অপহরণ কিংবা তাদের মুক্তির সাথে আদৌ সংশ্লিষ্ট নয়। ইউপিডিএফের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে এভাবে ষড়যন্ত্রমূলক কাল্পনিক তথ্য সাজিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’ বলেও উল্লেখ করেন।
খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, আমাদের অব্যাহত অভিযানের চাপে সন্ত্রাসীরা অপহৃতদের ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল পাঁচজনের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বর্ষবরণের বিঝু উৎসব শেষে চট্টগ্রামে ফেরার পথে ১৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৬টায় খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার গিরিফুল এলাকা থেকে পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা একজন গাড়ি চালককেও তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সভাপতি নিপুণ ত্রিপুরাও তাদের মুক্তির বিষয়টি বিকাল ৩টার দিকে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি জানান, পিসিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক রিবেক চাকমা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- পিসিপি চবির শাখা সদস্য রিশন চাকমা ও তার চার বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো এবং চারুকলা বিভাগের অলড্রিন ত্রিপুরাকে ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে পিসিপি।
পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে পার্বত্য তিন জেলায় ধারাবাহিক বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থীরা। অপহরণের আট দিন পর তাদের মুক্তি দেয় দুর্বৃত্তরা।