অপহৃত শিশুছাত্র তুষার উদ্ধার, অপহরণকারী গ্রেফতার

ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন বাঘৈর এলাকায় বসবাসকারী মোঃ রুবেল (৩৪) এর ছেলে বাঘৈর প্রাইমারী স্কুলে ৫ম শ্রেণীতে পড়–য়া স্কুলছাত্র মোঃ তুষার (১০) গত ৫ সেপ্টেম্বর তার মায়ের সাথে তার নানা বাড়ী একই থানাধীন কদমপুরে বেড়াতে যায়। তার কয়েকদিন পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিকালে তুষার কদমপুর প্রাইমারী স্কুল মাঠে খেলতে যায়। অতঃপর তুষার বাড়ীতে না ফিরলে তুষারের পরিবারের লোকজন সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কোথাও কোন সন্ধান না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে গত গত ২৪ সেপ্টেম্বর তুষারের নানি নাসিমা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে kidnepar নামক একটি ইমো আইডি থেকে ফোন করে তুষারকে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং প্রথমে তুষারের খাওয়া-দাওয়ার খরচ বাবদ ৭,০০০/- (সাত হাজার) টাকা দাবি করলে তুষারের নানি নাসিমা বেগম অপহরণকারীর প্রদেয় বিকাশ নম্বরে ৭,০০০/- (সাত হাজার) টাকা প্রেরণ করেন। অতঃপর টাকা পাওয়ার পরপরই উক্ত kidnepar নামক ইমো আইডিটি বন্ধ করে ফেলে।

পরবর্তীতে গত ২ অক্টোবর অজ্ঞাত অপহরণকারী পুনরায় kidnepar নামক ইমো আইডি থেকে তুষারের দাদার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে তুষারের মুক্তিপণ হিসেবে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা দাবি করে অন্যথায় তুষারকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি প্রদান করে। বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিম তুষারের বাবা তার আত্মীয়স্বজনদের নিকট থেকে টাকা সংগ্রহ করে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে অপহরণকারীর প্রদেয় বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা প্রদান করেন। অপহরণকারীর দাবিকৃত ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা প্রদান করার পর ভিকটিম তুষারকে ফেরত চাইলে অপহরণকারী ভিকটিম তুষারকে ফেরত না দিয়ে পুনরায় আরও ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা দাবি করে এবং টাকা না দিলে তুষারকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি প্রদান করে।

ভিকটিম তুষারের বাবা আর টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে তার আত্মীয়স্বজনদের সাথে পরামর্শ করে গত ১০ অক্টোবর ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নম্বর-০৭, তাং-০৭/১০/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা- ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধীত (২০২০) এর ৭/৮/৩০।

অতঃপর অপহরণকারী ভিকটিমের বাবার সাথে যোগযোগ করে এবং আরো টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। ভিকটিমের বাবা ভিকটিম তুষার দেখতে চাইলে অপহরণকারী ভিকটিমের বিভিন্ন ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমের বাবাকে প্রেরণ করে এবং ভিকটিমকে জীবিত পেতে হলে দ্রুত আরও ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা দিতে বলে। ভিকটিমের বাবা তার অন্যান্য আত্মীস্বজদের নিকট হতে ধার-দেনা করে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে অপহরণকারীদের প্রদেয় বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে আরো ১,৫০,০০০/- (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা প্রেরণ করেন। টাকা পাওয়ার পর অপহরণকারী ইমো আইডিটি বন্ধকরে ফেলে।

পরবর্তীতে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল তুষারের অপহরণের বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিম তুষারকে দ্রুত উদ্ধার এবং অপহরণকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

রোববার (১৩ অক্টোবর) ভোর আনুমানিক ০৪:০০ ঘটিকায় র‌্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকার পল্টন থানাধীন কাপ্তান বাজার এলাকা হতে অপহরণকারী শাহরিয়ার রহমান (১৯)’কে গ্রেফতার কের।

পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামী শাহরিয়ারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ভিকটিমকে অপহরণের বিষয় স্বীকার করে এবং তার দেখানো মতে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন ইকুরিয়া এলাকায় শাহরিয়ারের ভাড়া করা একটি ৫ম তলা বিশিষ্ট বাড়ীর ৩য় তলার একটি কক্ষ হতে অক্ষত অবস্থায় ভিকটিম তুষারকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় উক্ত বাসা হতে মুক্তিপণের নগদ-৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, আসামী শাহরিয়ার তুষারের মামা (মায়ের খালাতো ভাই)। ঘটনার দিন গত গত ১৯ সেপ্টেম্বর তুষার কদমপুর প্রাইমারী স্কুলের মাঠে খেলতে যায়। সেখানে খেলাধুলা শেষে শাহরিয়ার তুষারকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে একটি অটো-রিক্সাতে করে হাসনাবাদে শাহরিয়ারেরা ভাড়া করা বাসার একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে সেখানে আটকে রাখে। ভিকটিম তুষার বাড়ীতে বা তার মায়ের কাছে যাওয়ার কথা বললে শাহরিয়ার ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রকার খেলনা ও বিভিন্ন প্রকার শিশুখাদ্য কিনে দিতে এবং শীঘ্রই তার মায়ের কাছে নিয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিত বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

আরও পড়ুন...