অবৈধ দখলে দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে ডাকাতিয়া নদী


পিবিএ,চাঁদপুর: অবৈধ দখলের কবলে পড়ে ঐতিহ্য হারাচ্ছে ডাকাতিয়া নদী। এক সময়ের খরস্রোতা নদী ডাকাতিয়া, দখলের কবলে পড়ে এখন মৃতপ্রায়। নেই জোয়ার-ভাটার উত্তাল ঢেউ। অবৈধ দখল আর দূষণে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে ডাকাতিয়া। এই নদীকে ঘিরে এক সময় দুই পাশে গড়ে উঠে জেলে পল্লী। নদীতে মাছ ধরেই তারা জীবিকা নির্বাহ করতো।

ভূমিদস্যুদের দখলদারিত্বের কারণে দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে প্রমত্তা ডাকাতিয়া। দুষণের কারণে পানি নষ্ট হয়ে মরে যাচ্ছে মাছ । তাই অনেক জেলে বাপ-দাদার ব্যবসা নদীতে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে পুরো নদী জুড়েই কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করার কারণ স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে শুস্ক মৌসুমে বাঁধে কচুরিপানা আঁটকে পানি পঁচে দূর্গন্ধ ছড়ায়।

স্থানীয় জেলে কার্তিক দাস জানান, ডাকাতিয়ায় আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। নদীও ছোট হয়ে গেছে। শীতকালে পানি নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমরা মাছ ধরা ছেড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, বর্ষাকালে এ নদীতে আইড়, বাইলা, ট্যাংকার, পুঁটি ও নদীর চরগুলোতে চিংড়ি মাছ পাওয়া যায়।

নদীর চাঁদপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ৫নং ঘাট, ৩নং ঘাট, ১০নং ঘাট, চৌধুরী ঘাট ও নতুন বাজার এলাকার নদীর দুই পাড়ে শত শত পাকা বিল্ডিং ও আধাপাকা টিনসেড করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর ণির্মান করা হয়েছে। পাড় দখল করায় শহরে পানি নিষ্কাশনে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। এসব স্থাপনা কয়েকবার উচ্ছেদ করা হলেও দখলমুক্ত হয়নি। উচ্ছেদের পরবর্তী সময়ে আবার দখল করে নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে বিআইডব্লিওটিএ’র অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে চাঁদপুর শহরের ট্রাকঘাট এলাকায় কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় । কিন্তু নদীর ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ অংশে অবৈধ দখলকারীরা বহাল তবিয়তে রয়েছে । এব্যাপারে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, আমারা ইতিমধ্যে ডাকাতিয়া রক্ষায় অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে সব স্থানেই অভিযান চালানো হবে। নদী বাঁচাতে আমরা সব ধরণের প্রচেষ্টা চালাবো।

নদী রক্ষায় বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টরা নানা প্রতিশ্রুতি শোনালেও এখন পর্যন্ত কার্যত কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তবে চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি এলাকার প্রায় ৪০ নটিকেল মাইল ড্রেজিং করার কার্যক্রম শুরু করেছেন। কিন্তু সব থেকে খারাপ অবস্থা ফরিদগঞ্জ অংশের।

নদীর মেঘনার প্রবেশ মুখের চাঁদপুর পুরান বাজার ও নতুন বাজারসহ বেশিরভাগ এলাকায় দখল হয়ে নদী সরু হয়ে গেছে। এছাড়াও জেলা সদরসহ ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি উপজেলায় নদীর দুই পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ বালুমহল। এসব বালু মহলে বালু দিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে ডাকাতিয়া। এতে নাব্যতা হারাচ্ছে নদী। অন্যদিকে দখলের কারণে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ আটকে যাওয়ায় ফসল উৎপাদনও ব্যহত হচ্ছে। এর ফলে সিআইপি বেড়িবাঁধের অংশটি একেবারেই মৃত হয়ে গেছে ।

অপরদিকে হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া ব্রীজের উত্তর পাশে করিম বাগান সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদী দখল করে বালু ফেলে দখল করেছে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা ।প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ডাকাতিয়া নদীটির বেশিরভাগ জায়গা দখল করে আছে কচুরিপানা। ফরিদগঞ্জ পৌর সদর বাজারের সব বর্জ্য কেরোয়া ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় নদীতে ফেলা হচ্ছে। ময়লা আবর্জনাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়ির পয় নিষ্কাষণের বর্জ্য এবং পৌর কসাইখানার বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। এতে নদীর পাশাপাশি দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

ডাকাতিয়া নদী বাংলাদেশ-ভারতে একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলার দিয়ে বয়ে গেছে। এর দৈর্ঘ্য ১৪১ কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ ৬৭ মিটার। ডাকাতিয়া নদী মেঘনার একটি উপনদী। নদীটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা জেলার বাগসারা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং পরবর্তীতে চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর কুমিল্লা লাকসাম ও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা অতিক্রম করে চাঁদপুরের কাছে মেঘনা মিলিত হয়েছে।

ডাকাতিয়া বর্ষাকালে ভারতের দিক থেকে বিপুলসংখ্যক পাহাড়ি প্রবাহকে গ্রহণ করে। আর বছরের বাকি সময়ে নদীটি মেঘনার জোয়ারের পানি গ্রহণ করে থাকে। এক সময় নদীটি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার কাছে মেঘনায় মিলিত হতো। বর্তমানে ডাকাতিয়া বিভক্ত দুই ধারায়। মূল ধারাটি রায়পুরে মেঘনায় মিশেছে। অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে বড় ধারাটি পড়েছে চাঁদপুরের মেঘনায়।

পিবিএ/এএইচ/এমএসএম

আরও পড়ুন...