এমন অনেক মানুষ দেখেছি যারা খাবারের আগে হাত ধোয়াটা বাড়তি ঝামেলা মনে করেন।আবার এমনও মানুষ দেখেছি যারা টয়লেট করে বের হয়ে সাবান দিয়ে দুই হাত ভালভাবে ধুবার বদলে বদনার পানি দিয়েই হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বসে পড়েন। অনেকের আবার যেখানে সেখানে হঠাৎ করেই টয়লেট করার অভ্যাস আছে। সেখানে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মত ব্যবস্থা না থাকলেও সেই সব মানুষের যেন কোন যায় আসেনা।
ছোটবেলায় শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে হাত ধোয়ার বিষয়টি খুব সুন্দর ভাবে ধারনা পেয়েছিলাম । আর মিনা কার্টুন দেখে তা আরো ভালভাবে আয়ত্ত করে নিয়েছিলাম। যার কারণে বাইরে থেকে ফিরে কিংবা টয়লেট থেকে ফিরে হাত ধোয়াটা নিয়মিত একটা অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। এই অভ্যাসের জন্য নিজের মা-বাবা তথা পরিবারের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
তাহলে বলতে হবে যারা এসবকে বাড়তি ঝামেলা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে তারা অবশ্যই পরিবার থেকে এসব শিক্ষা পাইনি। কিংবা ছোটবেলা থেকে পরিবার তাদেরকে এসব অভ্যাস করানোর দিকে নজর দেয়নি। আবার এমন হতে পারে ঐ শ্রেণীর মানুষরা নিজের পরিবারের শিখানো অভ্যাসটা গড়ে তুলতে চাইনি। অবহেলা করে এড়িয়ে গেছে।
সেই চিন্তা ধারা থেকে মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। প্রশ্নটা হলো- সেই শ্রেণীর মানুষরা করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বর্তমান পরিস্থিতিতে হাত ধোয়ার বিষয়টিকে কিভাবে মূল্যায়ন করছে? নাকি বরাবরের মতই হাত ধোয়াটা তাদের বাড়তি ঝামেলার হিসেবেই রয়ে গেছে। নিজ থেকে না হলেও হয়তো চাপের মুখে পড়ে, না হয় আশেপাশের লোকদের দেখে নতুবা সাথের কাউকে দেখে হলেও হাত ধোয়ার নিয়মটি অনেক কষ্ট করে মেনে যাচ্ছেন।
তবে যাই হউক, এই পরিস্থিতির কারণে অনেকের মধ্যেই এই বিষয়ে একটি সচেতনতা তৈরি হয়েছে। হয়তো এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এই সচেতনতাটা থেকে যাবে।সকলের মধ্যে না হলেও কিছু কিছু মানুষের মধ্যে কিন্তু এগুলো রয়ে যাবে। অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যেতে পারে।ভাবছি,এর মধ্যে একটি ভাল অভ্যাস যদি অনেকের মধ্যে থেকেই যায় তাহলে খারাপ কিসের। তবে এবার কিন্তু হাত ধোয়া নিয়ে সকল শ্রেণীর মানুষের একটা বিষয়ে স্পষ্ট ধারনার জন্ম নিয়েছে। তা হল- হাত ধোয়ার উদ্দেশ্য শুধু হাত পরিস্কার করা নয়। সাবান হাতে লাগিয়ে শুধু ধুয়ে ফেললেই হয়না। দেখতে না পাওয়া হাতে থাকা জীবাণুকে ধ্বংস করাই হাত ধোয়ার প্রধান উদ্দেশ্য।
এ বিষয়টি এবার আমাদের সকলের মাথায় খুব ভালভাবেই ঢুকে গেছে।যা কিন্তু খুব সহজে বের হবার নয়। শুধু সচেতন শ্রেণীই নয়,লেখার শুরুর দিকে বলা সেই সব অসচেতন,অবহেলাকারীরাও কিন্তু নির্দেশনার গন্ডিতে আটকে থাকা অভ্যাসগুলোকে প্রতিটি মুহুর্তে মনে করতে বাধ্য থাকবে। আর যদি একান্তই ক্ষনিকের এসব ভুলে গিয়ে নিজেকে পূর্বের অভ্যাসেই ফিরিয়ে নিয়ে যায়,তাহলে এই জন্মে সেটাই হব আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।
জীবন পাল,বাংলাদেশ