অ্যাডভোকেট এম এ খায়ের, বলবো এক অপ্রতিরোধ্য নাবিকের কথা

মিয়া পরিবারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন অ্যাডভোকেট এম এ খায়ের। কুমিল্লার এই কৃতি সন্তান যেমনি ছিলেন একজন দক্ষ আইনজীবী তেমনই ছিলেন সমাজের জন্য নিবেদিত প্রাণ। একজন বাবা হিসেবেও তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ। দেশ প্রেম যার মাঝে সর্বদা বিরাজমান ছিলো।

আরিফুর রহমান দিলু: এ্যাডভোকেট এম.এ. খায়ের ১৯৩৫ সালের ৩১শে জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট থানার ধাতীশ্বর গ্রামের এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহমদ উল্লাহ এবং মাতার নাম দেলোয়ারা খাতুন চৌধুরানী। তাঁরা ছিলেন তিন ভাই ও চার বোন । ভাইদের মধ্যে অ্যাডভোকেট এম এ খায়ের ছিলেন পিতা-মাতার দ্বিতীয় সন্তান।

ধার্মিক মুসলিম জমিদার পরিবারের সন্তান হিসেবে এম.এ. খায়েরের শৈশব অনেকখানি কেটেছে কুমিল্লা জেলার দারোগা বাড়িতে। সেই সাথে তার শিক্ষাজীবন ও শুরু হয় সেখান থেকে । ছোট বেলায় বাবা-মা তাকে আদর করে “সূধন” নামে ডাকতেন। ছোটোবেলা থেকেই এম.এ. খায়ের বেশ মেধাবী ও পড়ালেখায় যথেষ্ট মনোযোগী ছিলেন। তাই পিতা-মাতার আশা ছিল ছেলে বড় হয়ে আদর করে ডাকা নামের সত্যিকার মূল্য দিতে পারবেন । বাবা মায়ের তার কাছ থেকে এমন প্রত্যাশা বুঝতে পেরে সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে শুরু হয় স্বপ্ন পুরনের লড়াই।

প্রাইমারি শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা জেলার প্রসিদ্ধ বিদ্যাপিঠ ইউসুফ হাইস্কুলে। শুরু হয় তার জীবনের দ্বিতীয় ধাপ। স্কুলের শিক্ষকদের দৃষ্টিতে এম.এ. খায়ের ছিলেন মেধাবী বিনয়ী নম্র ভদ্র এবং অত্যন্ত আদরের ছাত্র। ১৯৪৯ সালে ইউসুফ হাইস্কুল থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করেন। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে সে সময়ের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৫১সালে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে ‘আই.এ’ পাস করেন।

ছোট বেলা থেকেই অনেক বড় ইচ্ছে ছিল দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে লেখাপড়া করবে,’ আই.এ’ পাশ করার পর সেই সুযোগটা পেয়ে যান। ১৯৫১সালে ভর্তি হন দেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে। নিরলস অধ্যয়নের মাধ্যমে ১৯৫৪ সালে ‘বি.এ’ অনার্স কোর্স ও ১৯৫৫ সালে’ ‘এম. এ’ কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করেন। ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ছাত্রজীবন হতেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকারী ছিলেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল সুশৃঙ্খলিত এবং দৃষ্টান্ত দেয়ার মতো ।

১৯৪৭এর ভারত পাকিস্তানের দেশ বিভক্তির পর ১৯৫৪ সালে মার্চ-এপ্রিলে মাসব্যাপী প্রথমবারের মতো এম.এ. খায়েরের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের একদল ছাত্র ভারত ও তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে প্রথম শিক্ষা সফরে অংশগ্রহণ করেন। পুরো সফরে ছাত্র প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। যা ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ঐ বিভাগের প্রথম বিদেশ শিক্ষা সফর।

এম.এ.খায়েরের পিতা ছিলেন পেশায় একজন বিশিষ্ট আইনজীবী। সেই ধারাবাহিকতায় পিতার সততায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি আইনজীবী পেশা বেছে নেন। ছোটোবেলা থেকে পিতা-মাতার অনেক বড় ইচ্ছে ছিল ছেলে বড় হয়ে এডভোকেট হবে। পিতা-মাতার সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘এল.এল.বি’ কোর্সে ভর্তি হন ১৯৫৫ সালে ও তিন বৎসরের কোর্স সম্পন্ন করেন ১৯৫৯ সালে। এবং এক বৎসরের আর্টিকেলশীপও সম্পন্ন করেন।
পেশা ও সমাজ সেবা মূলক কাজে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের অঙ্গীকার নিয়ে এডভোকেট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ১৩ জানুয়ারী ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে একজন আইনজীবী পশা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং কুমিল্লা বারে যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু করেন তার কর্মজীবন।

সমাজ সেবার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তিনি একইসাথে সক্রিয় ছিলেন। স্বল্পতম সময়ে অক্লান্ত পরিশ্রমে একজন বিজ্ঞ আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। কর্মজীবনের পাশাপাশি তার বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠনের সাথেও সম্পৃক্ততা ছিলো প্রশংসনীয়। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৬ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির যুগ্মসম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালের ১৯ শে জুলাই কুমিল্লায় এপেক্স ক্লাব প্রতিষ্ঠাকালীন সময় হতেই এম.এ খায়ের এ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যান। ১৯৭০ সালের ক্লাবের চার্টার লাভের সময় তিনি অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। এরপর বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে ক্লাবের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দেন।

তিনি গভর্নর এপেক্স বাংলাদেশে ( আন্ডার ইন্টার্নেশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ এপেক্স ক্লাব অব অস্ট্রেলিয়া’)১৯৭৫-১৯৭৬ সালের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এপেক্স জীবনে এপেক্সিয়ান জনাব এম.এ খায়ের বহু ক্লাব ভ্রমণ করেন। তার বিভিন্ন বক্তৃতা লেখা ইত্যাদি তাকে সমসাময়িক এপেক্সিয়ানদের মাঝে একজন বিজ্ঞ এপেক্স নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। দেখা যায় ৪০ বছর বয়স হবার কারণে এপেক্স হতে অবসর গ্রহণ করলেও তিনি এপেক্সের সভা-সমিতির সেমিনারে প্রাণবন্ত ভূমিকা পালন করে যান। ফলস্বরূপ ১৯৮৩-৮৪ সালের জাতীয় বোর্ড তাকে এপেক্স বাংলাদেশ এর শ্রেষ্ঠ সম্মাননায় লাইফ গভর্নর-এ ভূষিত করেন।(Life Governor, Association of Apex Club of Bangladesh 1983.)

একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে ১৯৬৮-১৯৭০ সাল পর্যন্ত কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট থানায় নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধাতীশ্বর আব্দুল আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সাথে ১৯৬৮-৬৯ সালে কুমিল্লা কলেজ( বর্তমান সরকারী)প্রতিষ্ঠাতা কনভেনার সেক্রেটারি ম্যানেজিং কমিটি (গভর্নিং বডি) কুমিল্লা কলেজের দায়িত্বে ছিলেন ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিন মাস পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বন্দী শিবিরে কুমিল্লা ও ঢাকা সেনানিবাসে অন্তরীন ছিলেন। কুমিল্লার সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকার ১৯৯৩ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস সংখ্যায় তার লেখা “কাঠালবাগানের বন্দী শিবিরে ” শীর্ষক লেখায় অন্তরীন সময় এর বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৭২-১৯৭৫ সালে তিনি ফাউন্ডার চেয়ারম্যান বাংলাদেশ- Lille( France) Twining Committee প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
মেম্বার বোর্ড অফ গভারমেন্ট কুমিল্লা ফাউন্ডেশন ১৯৭৮-১৯৯৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এম.এ. খায়েরের শখ ছিলো ডাক টিকেট সংরক্ষণ করা। সেই সুযোগে তিনি পৃথিবীর বহু দেশের ডাকটিকিট সংগ্রহ করে অনেক পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ছিলেন ,Founder President ,Philatelic (hobby of collection of postage stamps) Association of Bangladesh, 1978-94.

১৯৭৮ সালে ২১-২৩ মার্চ মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত আন্ত-এশিয়া ফিলাটেলিক ফেডারেশন সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। এছাড়াও সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ইন্দোনেশিয়া সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করেন।( Represented Bangladesh in inter -Asia Philatclic Faderation Conference held in Kuala Lumpur, Malaysia on March 21-23,1978.Also toured Singapor and Thiland .)
দেশের হয়ে ১৯৮৯ সালে ২০-২৯ জানুয়ারী ভারতে জাতীয় কমিশনার হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এবং বিশ্ব ফিলাটেলিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন যেটি প্রদর্শনী হয় নয়া দিল্লিতে। তিনি সেটিতে অংশ নেন ।(Represented Bangladesh as National Commissioner in India 89, World Philatelic Exhibition, New Delhi 20-29 January 1989.)

১৯৭৩ সালের ৮ ই জুলাই দাম্পত্য জীবনের সূচনা করেন এম.এ খায়ের। তিনি কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান জনাব মমতাজ উদ্দিন ভূইয়ার দ্বিতীয় কন্যা সুরাইয়া বানুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহিত জীবনের দীর্ঘ ৪১টি বছর সুখে-দুখে, কর্মময়, দুঃসময় ও দুর্বিপাকে একসাথে কাটিয়ে এসেছেন জীবনের অধিকাংশ সময়। এর মধ্যে তারা হয়েছেন এক পুত্র ও এক কন্যার গর্বিত জনক-জননী। এম.এ. খায়ের এর সহধর্মিণী তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে ‘এম.এ’ পাশ করেন, কর্ম জীবনে তিনি ছিলেন অসাধারণ গুনের অধিকারী । বাংলাদেশী সরকারী প্রতিষ্ঠান প্রোডাকশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন অব( ও.আর.এস) কুমিল্লা এবং চিটাগাং ডিভিশন মিনিস্ট্রি অফ হেলথ এন্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ ও সুনামের সাথে। দাম্পত্য জীবনে এই গুণীজনদের মাঝে ছিলে খুবই গোছালো ও পরিপাটি সংসার। বাবা হিসেবেও তার সন্তানদের গড়ে তুলেছেন দেশের জন্য এক একটি স্তম্ভ।

পিতা-মাতার পাশাপাশি সন্তানরা ও কোন অংশে কম ছিলনা। বড় মেয়ে হুমায়রা খায়ের বর্তমানে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ এলাবামায় অধ্যাপনা করছেন। তার স্বামী ড.সাইদ ইফতেখার রেজা লতিফ পি.এইচ.ডি অর্জন করে বর্তমানে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ এলাবামায় সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পলন করছেন । এম.এ. খায়েরের একমাত্র ছেলে মুহী আহমেদ ইবনে খায়ের। তিনি কুমিল্লা জেলার ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা মডার্ন স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পায়। এবং কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ থেকে “এস.এস.সি” তে ১৫ তম এবং “এইচ.এস.সি” তে ১২ তম স্থান অর্জন করে । এরপর ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি ঢাকা থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তার পর স্কলারশিপ নিয়ে মেনিটোবা ইউনিভার্সিটি কানাডা থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে। বর্তমানে কানাডায় একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।

এম.এ. খায়ের ১৯৬৬-১৯৭৮ সালে কুমিল্লা রাইফেল ক্লাবের সেক্রেটারির দায়িত্বে ছিলেন ।এবং ১৯৭০-১৯৭৮ সাল পর্যন্ত নজরুল পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩-১৯৭৮ সালে তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি নজরুল পরিষদ সংগীত স্কুল ।১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি হিসেবে গুলবাগিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নজরুল পরিষদে দায়িত্বরত ছিলেন।

তিনি ১৯৮৮-১০৮৯, এবং ১৯৮৯-১৯৯০ সালে কুমিল্লা বার এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে বার সদস্যদের দেওয়া অর্পিত দায়িত্ব খুবই দক্ষতার সহিত পরিচালনা করেন। তার পর ১৯৯৯-২০০০ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা বারের সভাপতি হিসেবে সম্মানের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত জীবনে তার পাশে যারা ছিলেন তাঁরা হলেন, সিনিয়র এডভোকেট জনাব মজিবুর রহমান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, অ্যাডভোকেট রেজাউর রহমান, অ্যাডভোকেট আব্দুল মোতালিব , অ্যাডভোকেট মোস্তফা, এডভোকেট আব্দুল লতিফ, অ্যাডভোকেট আমীরুল ইসলাম, এডভোকেট মুহছিনুজ্জামান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মফিজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট কাজী নাজমুস সাদাত, এডভোকেট বশিরুল ইসলাম খান সহ আরো অনেকে।

জনাব এম.এ খায়ের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (বি এল এ এস টি ) কুমিল্লা ইউনিটের সভাপতি ছিলেন ২০০১-২০০২ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। এম.এ. খায়ের এর বিস্তৃত কর্মপরিধির মাঝে তিনি ছাত্রজীবনে ‘কলম’ বন্ধু হওয়ার সুবাদে বহু দেশি-বিদেশি বন্ধুত্ব লাভ করতে সক্ষম হন। তিনি কুমিল্লা আইন কলেজে কয়েক বছর অধ্যাপনা করেন । পাশাপাশি আইনের শাসন ও স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য বহু লেখালেখি ও করেছেন।
দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এম.এ খায়ের।

বাংলাদেশের এপেক্সের জাতীয় সমিতির প্রতিষ্ঠার পূর্বে একজন গঠনতন্ত্র বিশেষজ্ঞ হিসেবে এপেক্স এর বিভিন্ন সভা-সমিতিতে অংশ নিয়ে দারুণ যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন । যা ঐ সময়ের এপেক্সিয়ানদের নিকট বিশেষভাবে সমাদৃত হয়। ১৯৭৫ সালের কুমিল্লা ক্লাবের উদ্যোগে তৎকালীন জোন-১০ এর জেলা-৭ এর সম্মেলনের আয়োজন করে সেখানে এম.এ খায়ের এর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। সেই সম্মেলনে তিনি ১৯৭৫-৭৬ সালের জন্য জেলা-৭ এর নবম বা শেষ গভর্নর নির্বাচিত হন। তার সময়ে এদেশে এপেক্স ক্লাব অব ঢাকা নর্থ প্রতিষ্ঠিত হয়।

যার উদ্বোধনী সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯৭৬ সালের ৬-৭ মার্চ জেলা-৭ শেষ এবং এপেক্স বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সম্মেলন হয় ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে। এই ঐতিহাসিক সম্মেলনে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এবি মাহমুদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ গ্রহণ করেন। এপেক্স ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট জন ক্লিভস, জেলা-১০এর সভাপতি জিম রীচি এবং ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিলর আযান ওলফ গ্যাং ওই সম্মেলনে যোগদান করেন । বাংলাদেশে এপেক্স প্রতিষ্ঠাকালে জাতীয় সম্মেলনের সভাপতিত্ব করার দুর্লভ গৌরবের অধিকারী এডভোকেট এম.এ খায়েরই ছিলেন।

বইপড়া ও বই কেনা ছিল তার পছন্দের একটি ব্যাপার তিনি বাংলা একাডেমীর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সদস্য ছিলেন । ১৯৯৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলা একাডেমির পঞ্চদশ বার্ষিক সভায় তৃতীয় অনুষ্ঠানে তিনি সভাপতিত্ব করেন। দুঃখজনকভাবে এ কর্মবীর কানাডা হতে ঢাকায় বেড়াতে এলে ২২ অক্টোবর ২০১৪ সালে আকস্মিক হৃদরােগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন । চলে যান না ফেরার দেশে। তাকে ঢাকাতেই সমাহিত করা হয় । মানুষের জীবন ক্ষনস্থায়ী কিন্তু তার কর্ম অবিনশ্বর । এম.এ খায়ের ছিলেন তেমনই একজন মানুষ। জনমানুষের কাছে ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় আর এপােক্সিয়ানদের নিকট এক আদর্শ নেতা । এমন গুণীজন বারে বারে ফিরে আসুক, সমাজ এবং দেশের জন্য আবারো আলোকবর্তিকা ধারণ করুক, এমনটাই সব সময়ের প্রত্যাশা।

লেখক: আরিফুর রহমান দিলু, প্রবাসী সাংবাদিক দক্ষিণ আফ্রিকা।

পিবিএ/বিএইচ

আরও পড়ুন...