পিবিএ, ঢাকা: ”ফারাজ” সদ্য জন্ম নেয়া এক জাতকের নাম। সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় একটি মরু রাস্তায় মুষলধারায় বৃষ্টির মধ্যে জন্ম হয় ফারাজের। তার পরিবার ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর সর্বশেষ দখলকৃত এলাকা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। কারণ সেখানে আইএসকে হটাতে তুমুল লড়াই চলছে।
তার পরিবার দিয়ের এজোর প্রদেশ থেকে পালিয়ে এসেছে। জিহাদিদের দখলকৃত এই এলাকা থেকে প্রায় ২শ বেসামরিক লোক পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া ক্ষুধার জ্বালা ও প্রাণ বাঁচাতে হাজারো মানুষ সিরিয়ার পূর্বাঞ্চল ছেড়ে পালাচ্ছে।
নবজাতক ফারাজের মা কামেলা ফাদেল বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেন, ‘আমাকে ক্ষুধা, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও বৃষ্টিপাত সহ্য করতে হচ্ছে।’ তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আল-হোলে বাস্তুচ্যুত মানুষের একটি আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করছেন।
এই নারী, তার স্বামী ও তাদের চার শিশু আশ্রয় শিবিরে সাদা তাঁবুর নিচে রাত কাটাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পূর্বাঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা আরো কয়েকশ লোক এখানে এভাবেই অবস্থান করছে। রুক্ষ কাঁকড় বিছানো রাস্তার ওপর শুধু খড়ের বিছানা পেতে তাদের ঘুমাতে হয়।
শিবিরে স্থাপিত ক্লিনিকে একজন সেবিকা এক বয়স্ক নারীকে সহায়তা করছে। সেখানে শিশুরা খেলা করছে এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা বসে টিনের ক্যান থেকে খাবার খাচ্ছে। তাঁবুর ভেতরে ঠাণ্ডার প্রকোপ থাকলেও অন্তত তারা বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
গত সপ্তাহে দিয়ের এজোরে কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএল) ও আইএস এর মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর তারা সেখান থেকে পালিয়ে আসে। তারা শীতকালের প্রচণ্ড ঠান্ডা ও বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে একটানা কয়েকদিন পায়ে হেঁটে এখানে পৌঁছে।কামেলার স্বামী বলেন, ‘ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আমরা আমাদের বাড়িঘর ত্যাগ করেছি। সেখানে খাবার মতো কিছুই পাওয়া যাচ্ছিল না।’
তিনি তার পরিবারের সঙ্গে আল-শাফায় বাস করতেন। এটি আইএস নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ গ্রাম। তার দুই সন্তানের নাম সৌউসা ও হাজিন।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর বিমান হামলার সহায়তায় এসডিএফ জিহাদের সর্বশেষ ওই ঘাঁটি পুনরুদ্ধারে বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে। হাজিন ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে যুদ্ধবিমানগুলো আইএস এর লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে। এতে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক প্রাণহানি ঘটছে বলে জানিয়েছে ব্রিটেন ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।
মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছে, এই বিমান হামলায় প্রায় ৩২০ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১১৩ শিশু রয়েছে। ফারাজের বাবা বলেন, ‘সেখানে দুপক্ষের লড়াই ও বোমা বর্ষণে সব জায়গায় ধ্বংসের চিহ্ন রয়েছে। আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য উদ্বিগ্ন ছিলাম।’
স্থানীয় আশ্রয় শিবির কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, সম্প্রতি আল-হোল থেকে প্রায় ১ হাজার ৭শ’ বেসামরিক লোক এখানে এসেছে। দামেস্কে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’র নারী মুখপাত্র মারওয়া আওয়াদ বলেন, ‘চলতি মাসের জুলাই থেকে লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় হাজিন ও আশপাশের এলাকাগুলো থেকে অন্তত ১৬ হাজার ৫শ’ লোক তাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
পিবিএ/ইএইচকে