
পিবিএ, আল আমীন সুমন, রংপুর: রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যা মামলার বিশেষ পিপি ও আওয়ামী লীগ নেতা রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবুসোনা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা পৌনে একটায় রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এবিএম নিজামুল হক এ মামলার একমাত্র জীবিত আসামি নিহত বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপার মৃত্যুদণ্ড রায় ঘোষণা করেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামি দীপাকে কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ও তার প্রেমিক কামরুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা ইয়াসমীন মুক্তার আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন রংপুর কোতোয়ালি থানার এসআই আল-আমিন। পরে মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়। ওই বছরের ২১ অক্টোবর অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে বিচারকার্য শুরু করেন বিচারক।

এ মামলায় মোট ৩৭জন সাক্ষির সাক্ষ্যগ্রহণের পর চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আজ মঙ্গলবার রায়ের দিন নির্ধারণ করেছেন বিচারক। এ মামলার চার্জশিটভুক্ত দুই আসামির মধ্যে একমাত্র জীবিত আছেন নিহত বাবুসোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা। তার প্রেমিক কামরুল ইসলাম গত বছরের ১০ নভেম্বর ভোরে কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় আত্মহত্যার চেষ্টা করলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে যাওয়ার পরপরই মারা যান কামরুল।
রংপুর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আব্দুল মালেক জানান, গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা ইয়াসমীন মুক্তার আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন রংপুর জেলা কোতোয়ালি থানার এসআই আল-আমিন। পরে মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়। ওই বছরের ২১ অক্টোবর অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে বিচারকার্য শুরু করেন বিচারক এবং ৩০ অক্টোবর থেকে এই হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
পিপি আব্দুল মালেক জানান, গত বছরের ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার রাতে বাবুসোনাকে ১০টি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর তার মরদেহ তাজহাট মোল্লাপাড়ায় প্রেমিক শিক্ষক কামরুলের ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ির ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখা হয়।
পরবর্তীতে ৩ এপ্রিল মধ্যরাতে বাবুসোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার ওরফে দীপাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব আটক করে। তিনি এ হত্যাকা-ের কথা স্বীকার করেন এবং মরদেহের অবস্থান সম্পর্কে তাদের জানান। সেই সূত্র ধরে ওই দিন রাতে মোল্লাপাড়ার ওই বাড়ির মেঝে খুঁড়ে নিহত আইনজীবী বাবুসোনার গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত বাবু সোনার ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ বাবুসোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার ওরফে দিপা, প্রেমিক শিক্ষক কামরুল ইসলাম, বাবুসোনার সহকারী মিলন মোহন্ত, ছাত্র মোল্লাপাড়া এলাকার সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামানকে গ্রেফতার করে। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এ হত্যাকা-ের কথা স্বীকার করেন দীপা ও কামরুল। সেইসঙ্গে মিলন মোহন্তও হত্যাকা-ের বিষয়ে পুলিশকে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেন। পরে ওই বছরের ১৩ এপ্রিল রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিলন মোহন্ত। হত্যাকান্ডে দুই শিক্ষার্থী রোকন ও সবুজের সম্পৃক্ততা খুঁজে না পাওয়ায় এবং মিলন মোহন্ত মারা যাওয়ায় তাদেরকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
আসামি পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী বসুনিয়া মোঃ আরিফুল ইসলাম এ মামলা পরিচালনা করেন।
পিবিএ/এসকে/জেডআই