পিবিএ,ঢাকা: বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ প্রায়ই থাকে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু সরকার দেশে মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করেছিলো। পরবর্তীকালে এ বিষয়ে আর নতুন কোনো আইন হয়নি। ফলে দেশে এখনো দেড়শ বছরের বেশি পুরনো একটি আইন কার্যকর রয়েছে। আর এই আইনে মদ ও জুয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাংলাদেশে সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে মদ বিক্রি ও পানের সুযোগ আছে। বুধবার রাতে ঢাকায় র্যাবের সমন্বিত অভিযানে চারটি কথিত ‘ক্যাসিনো’ সিলগালা ও বহু মানুষকে আটকের পর জুয়াখেলা এবং ক্যাসিনো ইত্যাদি নিয়ে এখন বাংলাদেশে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় কমপক্ষে ৬০টি ক্যাসিনো জুয়ার আসর রয়েছে।
পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের আশপাশের দেশ যেমন সিঙ্গাপুর, ম্যাকাও, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এমনকি নেপালেও জুয়া খেলার জন্য ক্যাসিনো রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ক্লাবে বা আড্ডায় গোপনে জুয়াখেলার অনেক আসর বসার কথা নানা সময়ে শোনা গেলেও একেবারে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণসজ্জিত এই ক্যাসিনোগুলোর খবর বাংলাদেশের মানুষের কাছে একেবারেই নতুন। যদিও মদ বিক্রি বা পানের মতো ক্যাসিনোর অনুমোদন বা লাইসেন্স দেয়ার কোনো ব্যবস্থা বা সুযোগই বাংলাদেশের কোনো আইনে নেই। আইনজীবী জোতির্ময় বড়ুয়া জানান, দেশে জুয়ার বিষয়ে যে আইনটি কার্যকর আছে সেটি হলো ‘প্রকাশ্য জুয়া আইন ১৮৬৭’, সেখানে অবশ্য ক্যাসিনো বিষয়ে কিছু বলা নেই।
তবে ওই আইনে – ‘কেউ তার ঘর, তাঁবু, কক্ষ, প্রাঙ্গণ বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানের মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী বা ব্যবহারকারী হিসাবে যে কোনো ব্যক্তি জ্ঞাতসারে বা স্বেচ্ছায় অন্য লোককে, উক্ত স্থানকে সাধারণ জুয়ার স্থান হিসাবে ব্যবহৃত করিতে দিলে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডের বিধান’ রাখা হয়েছে। এমনকি ‘তাস, পাশা, কাউন্টার অর্থ বা অন্য যেকোনো সরঞ্জামসহ যেকোনো ব্যক্তিকে ক্রীড়ারত বা উপস্থিত দেখিতে পাওয়া গেলেও’ শাস্তি দেয়ার সুযোগ আছে এই আইনে।
জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ঢাকায় বছরের পর বছর ধরে প্রকাশ্যে দিবালোকে সবার নাকের ডগাতেই এসব ক্যাসিনো চলেছে। অন্য অনেক বিষয়ের মতো এখানেও আইনের প্রয়োগ ছিলোনা।
তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষকে ঘটনাস্থলে অভিযানে চালিয়ে আটক করা হয়েছে। কিন্তু জুয়া খেলার মেশিনগুলো কারা আমদানির অনুমতি দিয়েছে? কোন আইনে দিয়েছে? রাজস্ব বোর্ড, কাস্টমস কোন আইনে এগুলো আনার অনুমতি বা ছাড়পত্র দিয়েছে? কিভাবে এগুলো এখানে এলো? কারা সহযোগিতা করেছে এবং কারা কোন আইনে লাভবান হয়েছে-এগুলোও খুঁজে বের করা উচিত।’ প্রসঙ্গত, বুধবার রাজধানীর চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি দল। এগুলো হচ্ছে-ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র এবং বনানীর গোল্ডেন ঢাকা।
এসময় পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেট ক্যাসিনোগুলো সিলগালা করার পাশাপাশি সেখান থেকে ১৮২ জনকে আটক করে। তাদের প্রত্যেককে ছয় মাস থেকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। বৃহস্পতিবার আটকদের আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে। এসব ক্যাসিনোগুলো থেকে জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ নগদ টাকা, জাল টাকা, জুয়া খেলার সরঞ্জাম, ইয়াবাসহ দেশি-বিদেশি মদ। সূত্র: বিবিসি বাংলা
পিবিএ/বাখ