মাত্র ২৫ মিনিট বা ৩০ মিনিট। ঢাকা থেকে বরিশাল কিংবা যশোর বা অন্য কোনো গন্তব্য। সারাদেশের সাথে দ্রুততম সময়ে সংযোগ স্থাপনে আকাশ পরিবহনের কোনো বিকল্প নেই। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন দৃশ্যমান হয় গত প্রায় এক যুগ ধরে। দেশের আকাশ পরিবহন পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশী আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, আধুনিক, সুরক্ষিত ও নিরাপদ। দেশের আকাশ পরিবহনকে আরো বেশী আধুনিকায়ন করার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দৃষ্টিনন্দন থার্ড টার্মিনালের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
পদ্মা সেতু ও মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পর দক্ষিণবঙ্গের সাথে রাজধানী ঢাকার সড়কপথের যোগাযোগ অনেক সহজ হয়, দূরত্ব অনেকটা কমে আসে। ফলে দক্ষিণবঙ্গের সাথে রাজধানীর যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে জলপথ, সড়কপথ ও আকাশপথ একসঙ্গে ভূমিকা রাখছে। সময় এবং নিরাপত্তা সূচকে আকাশ পরিবহন অন্য যেকোনো পরিবহনের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে। আকাশ পরিবহনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আকাশ পরিবহনকেই তুলনা করা চলে।
কুয়াকাটা কিংবা সুন্দরবনের সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য সারাদেশ থেকে বরিশাল কিংবা যশোর-খুলনায় পর্যটকদের আগমন ঘটে থাকে। সমুদ্রকেন্দ্রিক সৌন্দর্য দেখার জন্য সারাদেশ থেকে পর্যটকরা সাধারণত কক্সবাজারে ভ্রমণ করে থাকে। দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত দেখার আগ্রহ আছে অনেকের কিন্তু একই স্থান থেকে সূর্যাস্ত ও সূর্য উদয় দেখার সুযোগ পেতে হলে পর্যটকদের যেতে হবে নয়নাভিরাম কুয়াকাটায়।
সাধারণ যাত্রী কিংবা পর্যটকদের ভ্রমণকে নিরবিচ্ছিন্ন ও নিরাপদ করার জন্য এবং কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতকে আকর্ষণীয় করার জন্য পর্যটন ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পর্যটন মন্ত্রণালয়, পর্যটক করোপারেশন, ট্যুরিজম বোর্ড, জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রো-একটিভ হয়ে পর্যটকদের পাশে থাকতে হবে। এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুর কারনে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলা সরাসরি উপকৃত হবে। যা সারাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী এর সুফল ভোগ করবে।
২০০৯-২০১০ সালে উত্তরবঙ্গের একমাত্র চালু বিমানবন্দরে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করতো ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। কিন্তু তিনটি ফ্লাইট ও ধারাবাহিক ছিলো না। পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ার কারনে প্রায়শই ফ্লাইট বাতিল করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে দিনে প্রায় ১৭ থেকে ১৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সাময়িকভাবে যাত্রী স্বল্পতায় নভোএয়ার ঢাকা-বরিশাল রুটে ফ্লাইট বাতিল করেছে, বিমান বাংলাদেশ সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দিনে দুইটি থেকে এখন প্রতিদিন একটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বর্তমান সময়ে গ্রীষ্মকালীন সময়সূচী অনুযায়ী এপ্রিল থেকে অক্টোবর এভিয়েশন এন্ড ট্যুরিজম শিল্পে অফপিক সিজন হিসেবে গণ্য করা হয়। অফপিকের কারনে যাত্রী স্বল্পতা সেই সঙ্গে পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সড়কপথে যাতায়াত বাড়ায় আকাশপথে যাত্রী হ্রাস পেয়েছে, যা সাময়িক। শীতকালীন সময়সূচীতে এভিয়েশনের পিক সিজনে পুনরায় আকাশপথে যাত্রী বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে এভিয়েশন ও ট্যুরিজম সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশের যেকোনো গন্তব্য থেকে আকাশ পথ ব্যবহার করে স্বল্পতম সময়ে যেকোনো গন্তব্যে গমণ করা যায়। এটা সম্ভব হয়েছে আকাশ পরিবহনের বিস্তৃতি লাভের কারণে। বর্তমানে পরিচালিত তিনটি এয়ারলাইন্স এর সাথে নতুনভাবে সংযুক্ত হতে চলেছে এয়ার অ্যাস্ট্রা নামক আরো একটি এয়ারলাইন্স, যা অভ্যন্তরীণ আকাশ পরিবহনকে আরো বেশী গতিশীল করে তুলবে। আকাশ পথে যাত্রীদের পছন্দের আরো বিস্তৃতি ঘটবে।
প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটনকে আকর্ষণীয় করতে বৃহত্তর বরিশাল, যশোরসহ সব অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে পর্যটকদের আগমনকে উৎসাহিত করতে হবে। পর্যটকদের জন্য সকল ধরণের সুবিধাদি বিশেষ করে আবাসন, নিরাপত্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি নজর দিতে হবে।
ঢাকা-যশোর রুটে সাধারণত বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের যাত্রীদের চলাচল রয়েছে। রয়েছে খুলনা পোর্টে গমণকারী ব্যবসায়ী, বাগেরহাটের চিংড়ী ঘেরের ব্যবসার সাথে সংযুক্ত, বেনাপোল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত গমণকারী যাত্রীরা যশোর বিমানবন্দর ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া প্রচুর বিদেশী পর্যটক যশোর বিমানবন্দর ব্যবহার করে দেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন ভ্রমণ করে থাকে।
একটি দেশের আকাশপথ যত শক্তিশালী হবে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ততবেশী বিস্তৃতি লাভ করবে। করোনা মহামারির সময় দেখা গেছে আকাশ পথ যখন রুদ্ধ হয়ে গেছে সারাবিশ্বই তখন পুরোপুরিভাবে অবরুব্ধ হয়ে পড়েছে। দেশের অগ্রগতি বজায় রাখতে উন্মুক্ত আকাশের বিশালতায় বিচরণ করতে আকাশ পরিবহনকে টিকিয়ে রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট সকলকে।
বাংলাদেশে মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় ২৮২৪ মার্কিন ডলার। প্রতিনিয়ত তা বেড়েই চলছে। ব্যবসা বাণিজ্য আর আয়-উপার্জনের প্রসার তখনই গতিশীল থাকবে যখন আকাশ পরিবহনের গতিশীলতা বজায় থাকবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, সৈয়দপুর, রাজশাহী, যশোর, বরিশাল রুটে। আর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে ঢাকা, চট্টগ্রাম আর সিলেট বিমানবন্দর থেকে। নিকট ভবিষ্যতে সৈয়দপুর ও কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে তৈরী করার জন্য জোর প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া অব্যবহৃত বিমানবন্দর ঈশ্বরদী, শমসেরনগর, বগুড়া, জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁও, কুমিল্লা, বাগেরহাট বিমানবন্দরকে চালু করার জন্য অঞ্চলভিত্তিক জোর দাবী তুলছে।
আকাশ পরিবহনের দৃঢ়তা একটি দেশের ব্যবসায়ের চালিকাশক্তি হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। পরিচালন ব্যয় কমানো গেলে এয়ারলাইন্সগুলো কম ভাড়া নির্ধারণ করতে পারে, ফলে যাত্রীরা সরাসরি এর উপকৃত হয়। পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে জ্বালানী খরচ, অ্যারোনোটিক্যাল ও নন-অ্যারোনোটিক্যাল চার্জসহ বিভিন্ন ধরনের সারচার্জ, কাস্টমস ডিউটি নির্ভর করে।
একটি দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের গতিশীলতা বজায় রাখতে হলে আকাশপথের গতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। সময় আর নিরাপত্তা বিবেচনায় আকাশ পরিবহনের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য কোনো পরিবহন হতে পারে না।
লেখক: মোঃ কামরুল ইসলাম,মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স