আগাম টাকা নিয়ে ঠিকাদারের পলায়ন

পিবিএ,রংপুর,আল আমীন সুমন: রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নতুন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোন্তফার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি হলেও দৃশ্যমান তেমন কোন কাজ নজরে আসছে না নগরবাসীর। গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শপথ বাক্যপাঠ করে দায়িত্ব গ্রহণ করে নতুন পর্ষদ।

রংপুর মহানগরকে নাগরিক বান্ধব স্মার্ট আধুনিক নগরী হিসেবে গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মেয়র। তবে এই এক বছরেই অনেকের মনে জমাট বেঁধেছে শত শত প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের জবাব দিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নাগরিকদের সাথে মুখোমুখি হন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

তারা বলছেন, নগরবাসীর ভোগান্তি আর অভিযোগ শাপলা চত্বর থেকে স্টেশন যাওয়ার রোডটিসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নিয়ে। বিগত মেয়রের সময় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগই টাকা নিয়ে আড়ালে পড়েন। এ কারণে ওই প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে সড়ক প্রসস্থকরন, ড্রেন ও ফুটপাথ নির্মাণে বেধে দেয়া সময়সীমা বছর চারেক আগেই শেষ হয়েছে। ব্যস্ততম সড়ক শাপলা চত্বর থেকে স্টেশন রোড, ঘোড়াপীর থেকে রেলক্রসিং হয়ে ঢাকা-কুড়িগ্রাম রোডের সংযোগ সড়কের কাজ শুরুর পর নির্দিষ্ট সময় শেষ হলেও এখনো কাজের কাজ কিছুই হয়নি এই সড়কগুলোর। বর্ষা মৌসুম এসে এই সড়কগুলো হয়ে উঠে গ্রামের ছোট ছোট পানি ভরা খালের মতো। এছাড়াও ৬টি নতুন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও সেগুলোতে কোন নির্মাণ গতি নেই।

উন্নয়ন প্রত্যাশী মানুষের কাছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ব্রিজের কাজে এমন ‘কচ্ছপ মার্কা উন্নয়ন’ যেন বিতৃষ্ণা এনে দিয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান পরিষদের ভালো কাজগুলো চাপা পড়ছে প্রলম্বিত এই দুর্ভোগের কাছে।

এদিকে, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, ‘কাজ শেষ না করে কীভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টাকা তুলে নেয়, এটা আমার বোধগম্য নয়। সিটির সেই প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এতে করে কাজের স্বচ্ছতা তৈরির পাশাপাশি অন্য প্রকৌশলী ও ঠিকাদাররা সতর্ক হবেন।’

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দাতাসংস্থা জাইকার অর্থায়নে সিটি গভারনেন্স প্রজেক্ট-সিজিপি’র আওতায় ২২৮.২৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ব্যাচ-২ এর মাধ্যমে ২৪টি প্যাকেজের মধ্যে ১৬টি (চুক্তি মূল্য ১৫৭.১০ কোটি টাকা) কাজ চলমান আছে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে রাস্তা, বক্স কারভার্ট, আরসিসি গার্ডার, ব্রিজ ও আরসিসি ড্রেন নির্মাণ। দ্রুতগতিতে এসব কাজ এগিয়ে চলছে।

এদিকে, জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করলেও নিজেদের ঘাড়ে দোষ নিতে নারাজ রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘বারবার চুক্তি ভঙ্গের পরও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যর্থতা এবং কাজ শেষ না করেই বিল নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো লাপাত্তা হওয়াতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে ব্যাঘাত হচ্ছে। তবে এই দুর্ভোগ আর থাকবে না। ইতোমধ্যে শাপলা চত্বর থেকে স্টেশন রোডটি নির্মাণে নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং সময়ের মধ্যে এই সড়কের কাজ শুরু হবে।’

নির্বাহী প্রকৌশলী আজম আলী জানান, বর্তমান মেয়রের বিগত বছরে নগরীতে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, ড্রেন স্ট্রীট লাইট নির্মাণ, পুন:নির্মাণ, উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণে এসেছে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ইতোমধ্যেই ৩০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কর্মকা- চলমান রয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো ৮৮ কোটি ২ লাখ টাকা। চলমান কাজ শেষ হলে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন কাজগুলো শুরু ও শেষ হলে নগরবাসী রাস্তাঘাট, ড্রেন, অবকাঠামো এবং লাইটিংয়ের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

বরাবরের মতো বিগত মেয়রের ওপর দায় চাপালেন বর্তমান নগর পিতা। রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা পিবিএ’কে বলেন, ‘আগের সিটি করপোরেশনের মেয়র কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা কাজটি সঠিকভাবে করতে পারেনি। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই গত একবছর বিভিন্ন সময় চলমান কাজগুলো টেন্ডার করে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে তা শুরু করেছি। কোনো নোটিশ ছাড়াই আমি নিজেই চলমান কাজগুলো তদারকি করছি। কোন জায়গায় হেরফের হলেই আবারও আমি নতুনভাবে কাজগুলো করে নিচ্ছি।

মেয়র আরও বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন কাজগুলো যত দ্রুত সম্ভব টেন্ডার দিয়ে ওয়ার্ক অর্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করার ব্যাপারে আমার পরিষদ বদ্ধ পরিকর। নগরবাসীর এই দুর্ভোগ দুর আরও এক বছর সময় লাগবে। এসব কাজ বাস্তবায়ন হলে নগরীর চেহারাই বদলে যাবে। নগরবাসীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় নগরীর ৪ নং ওয়ার্ডের আমাশু কুকরুল এলাকায় পুরাতন ব্রীজ ভেঙে নতুন ব্রীজ করার কথা থাকলেও মেয়াদের ২ বছর পারহলেও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নতুন ব্রীজের কাজ। এলাকাবাসীর দাবী আগামী বর্ষার আগে ব্রীজটি সংস্করণ করা না হলে কয়েক লাখ লোকের যোগাযোগ জনদূর্ভোগে পরিনত হবে।

পিবিএ/এএএস/এইচএইচ

আরও পড়ুন...