প্লাবন শুভ,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর): আজ ২৬ আগস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়ী কয়লাখনি বিরোধী ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস। ২০০৬ সালের আজকের এই দিনে ফুলবাড়ী কয়লাখনি বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তৎকালিন বিডিআর-পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন উপজেলার পৌর শহরের সুজাপুর গ্রামের রিকশাভ্যান চালক বাবলু রায় (৫২)।
গুলিবিদ্ধ বাবলু রায় এখন পঙ্গুত্ব জীবনযাপন করছেন। তার শরীরের অর্ধেক অংশ অবশ হয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে তার কর্মক্ষমতা। স্ত্রীসহ তার ৩ সন্তান নিয়ে ভবিষ্যৎ ভাবনায় দিন কাটে হুইল চেয়ারে বসে।
২০০৬ সালের ২৬ আগস্টের স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে বাবলু রায় বলেন, ‘প্রতিদিনের ন্যয় সেদিন আর রিকশা-ভ্যান বের করেননি। সকালে বাড়ী থেকে খাবার খেয়ে তেল-গ্যাস জাতীয় কমিটির ডাকে এশিয়া এনার্জির অফিস ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নিতে বের হন। তখন তার স্ত্রী ৬ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা। ফুলবাড়ীস্থ ঢাকা মোড় থেকে খনি বিরোধী মিছিল বের হলে বাবলু রায় তাতে অংশ নেন। মিছিলটি ছোট যমুনা নদীর সেতু পার হয়ে পশ্চিম পাশে যেতেই পুলিশ-তৎকালীন বিডিআর ব্যাপক লাঠিচার্জসহ গুলিবর্ষণ করে। লোকজন দিগি¦দিক ছোটাছুটি শুরু করে। হটাৎ একটি গুলি এসে বাবলু রায়ের পিঠে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। এরপর কি হয়েছে তিনি আর কিছুই বলতে পারে না। তবে পরদিন রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বেডে নিজেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। রংপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, পিজি হাসপাতাল, ক্রমা সেন্টার ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দীর্ঘ ১১মাস চিকিৎসা শেসে হুইল চেয়ারে বাড়ী ফেরেন।
বাবলু রায় আরও জানান, বর্তমানে তিনি দীর্ঘ দেড় বছর ধরে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। কোমরে ঘা হয়েছে। প্রতিদিন স্ত্রী সেই ঘাগুলো ধুয়ে দেয়। আগে হুইল চেয়ারে ভর করে অন্তত বাড়ীর বাইরে বের হতে পারলেনও বর্তমানে একবারেই শয্যাশায়ী হয়ে গেছেন। বিছানাই এখন তার নিত্য সঙ্গী। নিজে আয়-রোজগার করতে না পারায় তার দুইছেলে রাজমিস্ত্রি জোগারীর কাজ করে যা আয় করে তা দিয়েই চলছে তার সংসার। আন্দোলনকারীরা মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নেন এবং সাধ্যমত সাহায্যও করেন। তেল গ্যাস জাতীয় কমিটির নেতা অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ স্যার সবচেয়ে বেশি খোঁজখবর নেন এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকেন। আগে ২৬ আগস্টে হুইল চেয়ারে ভর করে মিছিলে যোগ দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে পারলে গত বছর থেকে সেটুকুও পারছেন না। যেতে না পারলেও বিছানা থেকেই শ্রদ্ধা জানাবেন শহীদদের। তবে ফুলবাড়ী কয়লাখনির এক টুকরো কয়লাও যেন কোন বহুজাতিক কোম্পানী নিতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন এই পঙ্গুত্ববরণকারী বাবলু রায়।