আদি বুড়িগঙ্গা নদী দখলমুক্ত করার দাবিতে মানব বন্ধন

burigonga pbaপিবিএ,ঢাকা: বুড়িগঙ্গা নদী দখল ও দূষণ মুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙর। আদি বুড়িগঙ্গা নদীর রুট মেনে নদীটিকে দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

শনিবার ৯ মার্চ সকাল ১০: ৪৫ মিনিটে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে।

মাত্র দুই যুগের ব্যবধানে সাড়ে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আদি বুড়িগঙ্গা নৌ-রুটের ১১ কিলোমিটার এলাকায় নদীর অস্তিত্ব উধাও! অবশিষ্ট সাড়ে ৩ কিলোমিটার নদীতে এখনো চলছে দখলেরই মহোৎসব!

বক্তারা বলেন, বেপরোয়া দখল, ভরাট এবং ক্রমবর্ধমান দূষণ ও অব্যাহত আগ্রাসনের ফলে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল এখন মৃত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও সম্পূর্ণ আদি বুড়িগঙ্গার নদী পুনরুদ্ধারে কোনো ততপরতা দেখা যাচ্ছে না! নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙরসহ দেশের সকল পরিবেশবাদি সংগঠন মনে করে যে, মহানগরী ঢাকার জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ আদি বুড়িগঙ্গার নদীর বুকে গড়ে তোলা সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের দখল অবিলম্বে উচ্ছেদ করে প্রবাহমাণ রাখা জরুরী। এদিকে বুড়িগঙ্গার ধলেশ্বরীর উৎস পলি ভরাটের কারণে বন্ধ হয়ে যেতে থাকলে আদি চ্যানেলটি নগরায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে দখল, ভরাট ও বাড়িঘর নির্মাণ। বর্তমানে হাজারীবাগের সিকদার মেডিকেল কলেজ, কামরাঙ্গীর চরে পান্না গ্রুপের ভলভো ব্যাটারির কারখানা, ম্যাটাডোর ব্রাশ ফ্যাক্টরি, ডিপিডিসির বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনসহ অসংখ্য শিল্প-কারখানা ও বহুতল ভবন এই আদি চ্যানেলের জমিতে গড়ে উঠেছে।

১৯২৪ সালের মানচিত্রে আদি বুড়িগঙ্গা নদীর পূর্ণরূপে দেখা যায়। চর কামরাঙ্গী, চর ইউসুফ তখন বিচ্ছিন্ন জনপদ। চ্যানেলের প্রশস্ত দিকটা বুড়িগঙ্গার সঙ্গে, অন্য দিকটা সরু হয়ে এঁকে-বেঁকে ধলেশ্বরীতে গিয়ে পড়েছে। ১৯৪৩ ও ১৯৬৭ সালের মানচিত্রেও নদীটির স্রোতধারা মোটামুটি একই রকম দেখা যায়। এরপর ২০১০ সালের মানচিত্রে নদীর প্রায় অর্ধেকটাই অস্পষ্ট হয়ে যায়, যা ২০১৭ সালে এসে ক্ষীণ একটি রেখায় রূপ নিয়েছে।

২০১৫ সালের আগস্টে এক রায়ে হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীর চর এলাকায় বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের সরেজমিন সীমানা নির্ধারণ ও নকশায় সীমানা চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর সিএস, আরএস ও মহানগর জরিপের নকশার আলোকে সুপার ইম্পোজড ম্যাপ তৈরি করে আদি চ্যানেলের অবস্থান সরেজমিন চিহ্নিত করে ঢাকার জোনাল সেটলমেন্ট অফিস। তারা কেল্লার মোড়ে লোহার ব্রিজ থেকে উত্তরে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও দক্ষিণে সাড়ে তিন কিলোমিটার চ্যানেলটির প্রকৃত অবস্থান চিহ্নিত করলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ‘কালুনগর মৌজার মাহাদীনগর সিটি পর্যন্ত এসে চ্যানেলটির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে বিধায় বন্ধ স্থান থেকে বুড়িগঙ্গা নদীসহ ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চ্যানেলটির প্রবাহ বিদ্যমান নেই!!’

তবে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল কালুনগর মৌজা থেকে আরো একটি চ্যানেল ডানদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ ও উত্তর সোনাটেঙ্গর, রাজমুশুরী, সুলতানগঞ্জ, বারৈখালী ও শ্রীখণ্ড মৌজার ওপর দিয়ে বুড়িগঙ্গায় মিলেছে। এ ছাড়া কালুনগর, শিকারীটোলা, শিবপুর ও উত্তর সোনাটেঙ্গর মৌজার সংযোগস্থল থেকে আরেকটি চ্যানেল বাঁ দিকে (পশ্চিম) প্রবাহিত হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে মিলিত হয়েছে। ওই চ্যানেলের ওপর এখন একটি বক্স কালভার্ট রয়েছে।

নোঙরের সভাপতি সুমন শামস বলেন, আদি বুড়িগঙ্গা নদীর যে রুট আছে তার মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার দখল মুক্ত আছে। বাকি অংশটুকু জেলা প্রশাসনের আওতাধীন থাকায় বিআইডব্লিউটিএ দখল মুক্তকরণ অভিযান পরিচালনা করতে পারে না। আমাদের দাবি বুড়িগঙ্গা নদীর পুরো অংশটিকে বিআইডব্লিউটিএ’র অধীনে দেওয়া হোক যেন তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে বুড়িগঙ্গা দখল ও দূষণমুক্ত করে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রবাহমাণ করতে পারে।

৯৮৭-৮৮ সালের বন্যার পর ঢাকা শহর রক্ষার জন্য কেল্লার মোড় থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের তীর ঘেঁষে ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। কাজ শেষ হয় ১৯৯০ সালে। ঢাকা শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণের পর আদি চ্যানেল অনেকাংশে ভরাট হয়ে গেছে এবং কোথাও কোথাও সিটি করপোরেশন কর্তৃক রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁধের পাকা অংশ ছাড়া অন্যান্য অংশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অস্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে এবং বিভিন্ন ধরনের অস্থায়ী দোকানপাটও রয়েছে। নির্মিত হয়েছে সরকারী হাসপাতাল, মসজিদ। কিছু কিছু এলাকায় সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় বাসিন্দারা ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলছে। এতে করে প্রবাহমান ফোরশোর প্রতিনিয়ত সংকুচিত হচ্ছে।’

তবে ১৯৫০ সালের স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট (এসএটিএ) অনুসারে নদীর জমি ব্যক্তিমালিকানায় যাওয়ার কোনো সুযোগই নেই বলে। নদীর জমি হস্তান্তর যোগ্য নয়। শুকিয়ে গেলেও নদীর জমি রাষ্ট্রের।

২০০৯ সালে হাইকোর্টের রায়ে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর অপমৃত্যু রোধ করে ঢাকা মহানগরকে রক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নদীর মধ্যে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের পাশাপাশি জরিপ কাজের পর সীমানা নির্ধারণ করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার নির্দেশও ছিল। ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। জানুয়ারির শেষ দিকে বিআইডাব্লিউটিএ শুরু করেছিল আদি চ্যানেল দখলমুক্তির অভিযান যা এখন বন্ধ হয়ে গেছে!

সুমন শামস এর সভাপতিত্বে আজকের মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, কৃষিবিদ জনাব মঞ্জুর কাদের, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক আমির হোসেন মাসুদ, নোঙর পরিবারের আমিনুল হক চৌধুরী, মোহাম্মদ ফা্রুখ, বঙ্গজ শিল্পী গোষ্ঠির সাধারণ সম্পাদক স্বজন সাহা, গোলাম মোস্তফা নবী, আমিনুল ইসলাম, মীর মোকাদবদেস আলী শান্ত, আবু সাঈদ টিটু, মোহাম্মদ মনসুর, ষোলআনা বাঙালীর আর আই শেখর, মোহাম্মদ ওসমান গণিসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাকর্মীরা

পিবিএি/এনবিডি/হক

আরও পড়ুন...