আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

‘সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের অঙ্গীকার’ স্লোগানে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ৪৫তম জাতীয় সমাবেশ উদযাপিত হয়েছে।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে গাজীপুরের সফিপুর আনসার-ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ৪৫তম জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। এছাড়াও অন্যান্য উপদেষ্টামণ্ডলী, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বাহিনীর বিভিন্ন পদবির কর্মকর্তা,কর্মচারী,সদস্য-সদস্যাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, বর্তমান উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহসিকতা ও দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। ২০২৪ সালের আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে বাহিনীর সদস্যরা থানাসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেশের ক্রান্তিকালে সড়ক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে বাহিনীর সদস্যরা শতভাগ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করেছে। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ১৬টি আনসার ব্যাটালিয়ন সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৬ হাজার আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য এবং ১৩ হাজার হিল আনসার ও হিল ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কূটনৈতিক মিশন এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠানে বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। বর্তমানে ৫১ হাজার ৬৬৭ জন সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্য সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ৫ হাজার ৭৫৭টি স্থাপনায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। বাহিনীর ৩৯টি পুরুষ আনসার ব্যাটালিয়ন, ২টি মহিলা আনসার ব্যাটালিয়ন এবং একটি বিশেষ আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি), রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন রয়েছে। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন সদস্যরা আমেরিকান দূতাবাস, ফিলিস্তিন দূতাবাস, সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাস, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (ঢাকা), হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনসমূহের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে দেশের ৩২,৬৬৬টি পূজামণ্ডপে বাহিনীর ২,১২,১৯৮ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। এছাড়া, ভূমিদস্যু প্রতিরোধ, ভেজালবিরোধী অভিযান এবং মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাহিনীর সদস্যরা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয় মোকাবিলায় বাহিনীর সদস্যরা সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০২৪ সালের ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এবং ফেনী-নোয়াখালী অঞ্চলের আকস্মিক বন্যায় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে বাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বন্যাকবলিত জনগণের মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ, গৃহনির্মাণ সহায়তা, কৃষকদের ধানের চারা বিতরণ এবং দরিদ্র কৃষকদের পাকা ধান কেটে দেওয়ার মাধ্যমে বাহিনীর সদস্যরা মানবিকতার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। ঢাকার বঙ্গবাজার ও নিউ মার্কেট এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাহিনীর সদস্যরা অগ্নিনির্বাপণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ ও ব্যবসায়ীদের সহায়তায় কাজ করেছে।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভিডিপি সদস্যদের জন্য ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি ও নতুন অবকাঠামো সংযোজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)-এর সহযোগিতায় এক লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বাহিনীর মৌলিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আধুনিক ও যুগোপযোগী নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে, যা তরুণদের কর্মসংস্থানে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সদস্যদের কল্যাণের জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করছে। বাহিনী প্রধানের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আনসার ব্যাটালিয়নের ফ্রেশ রেশন ভাতা বৃদ্ধি, অঙ্গীভূত আনসারদের রেশন স্কেল উন্নয়ন এবং ভিডিপি সদস্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাহিনীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আনসার-ভিডিপি ক্লাব-সমিতি, আনসার-ভিডিপি কো-অপারেটিভ সোসাইটি, আনসার-ভিডিপি ট্রাস্ট, এবং আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক কার্যকরভাবে কাজ করছে।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বাহিনীর চলমান সংস্কার কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে বাহিনীর দক্ষতা ও কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করেন। যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তির ব্যবহার, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং কার্যকর নেতৃত্বের মাধ্যমে বাহিনীর অগ্রযাত্রা আরও সুদৃঢ় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন,বাহিনীর চলমান সংস্কার কার্যক্রমের আওতায়, সদস্যদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে নীতিমালা ও বিধিমালা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বাহিনীর ১৫৬ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সদস্য-সদস্যাদেরকে আনসার ও ভিডিপির বিভিন্ন পদকে ভূষিত করা হয়।

আরও পড়ুন...