আবরার হত্যা মামলা বিচারের জন্য জজ আদালতে

গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন: ডিবি
আবরার

পিবিএ,ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে করা মামলার নথি ঢাকা মহানগর আদালতে পাঠানো হয়েছে। মহানগর আদালতের সেরেস্তাদার মামলার নথিটি রিসিভ করেন। মামলার বিষয় বিচারককেও জানিয়েছেন সেরেস্তাদার। বিচারক মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের (অভিযোগ গঠন) জন্য শিগগিরই দিন ধার্য করবেন।

আজ সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় বদলির আদেশ দেন। এদিন পলাতক আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির জন্য দিন ধার্য ছিল। তাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

আইন অনুযায়ী মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় এ মামলা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির জন্য সিএমএম বরাবর নথি পাঠান বিচারক। ঢাকা মহানগর হাকিম (সিএমএম) জাহিদুল কবির মামলার নথি সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন।

চকবাজার থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম বলেন, মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় সকালে বদলির আদেশ দেন আদালত। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম জাহিদুল কবির মামলার নথি দেখে মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তার নির্দেশ মতে আমরা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তায় মামলাটির নথি জমা দেই।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার রাশেদুল ইসলাম বলেন, আবরার হত্যা মামলার নথি চকবাজার থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা আমাদের কাছে জমা দেন। আমরা মামলার নথি রিসিভ করি। মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশকে মামলার বিষয় জানানো হয়েছে। তিনি শিগগিরই মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য দিন ধার্য করবেন।

এর আগে রোববার (১২ জানুয়ারি) পালিয়ে থাকা এজাহারভুক্ত আসামি মোর্শেদ অমত্য ইসলাম আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ মামলায় গত ৫ জানুয়ারি চার পলাতক শিক্ষার্থীকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলেন আদালত, সোমবার যার প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল।

২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম। গ্রেফতার-সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।

৩ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ওই চার আসামির সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন।

আসামিরা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও মোস্তবা রাফিদ। তাদের মধ্যে প্রথম তিনজন এজাহারভুক্ত ও শেষের জন এজাহারবহির্ভূত।

গত বছরের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।

অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারনামীয় ১৯ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত এজাহারবহির্ভূত ছয়জন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন ও এজাহারবহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন।

গ্রেফতার ২১ জন হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু।

উল্লেখ্য, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে গত ৬ অক্টোবর (২০১৯) রাতে ডেকে নেয় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। এ ঘটনায় নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

পিবিএ/এমএসএম

আরও পড়ুন...