শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত,লালমনিরহাট: উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তার পানি ফের বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাটের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল আবারও বন্যায় প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ হাজার পরিবার।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে ৫ম দফায় পানি বাড়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষ বড় বন্যার আশঙ্কায় রয়েছে। করোনা দুর্যোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বন্যা নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার নদী তীরবর্তী মানুষ। আসন্ন ঈদুল আজহার প্রস্তুতি লগ্ন ৫ম দফায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষগুলো। পলি ও বালু জমে তিস্তা ভরাট হওয়ায় সামান্যতেই তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পানি প্রবাহ কমে এলে তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে তিস্তাপাড়ের মানুষ। তাই নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তবে তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের রাস্তা ঘাটসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অনেক মৎস্য খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। অনেকের ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় ফসলহানীর শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদি পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আলম বলেন, এ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন তিস্তার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে আবারো বন্যায় কিছু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ মঙ্গলবার সকাল থেকে বাড়তে থাকে। সকাল ৯টার দিকে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারেজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে সন্ধ্যার মধ্যে উজানের পাহাড়ি ঢল কমে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।
পিবিএ/এসডি