ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গিয়ে চুপ করে বসে নেই, এ অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ‘ভারত থেকে আবার চক্রান্ত শুরু করেছেন। দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চলছে, এই গুজব তুলে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন চক্রান্ত করছেন।’
বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়ার কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের বাড়িতে যান বিএনপির মহাসচিব। সেখান থেকে জাফরপাড়া দারুল উলুম বহুমুখী কামিল মাদ্রাসায় গিয়ে এক সম্প্রীতি সমাবেশে যোগ দেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমরা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—সবাই একসঙ্গে যে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি, তাকে সুসংহত করার জন্য সম্প্রীতি সমাবেশ করছি।’
পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, এই ভয়াবহ হত্যাকারী সরকার পালিয়েছে। কিন্তু তার প্রেতাত্মারা দেশে রয়েছে। শেখ হাসিনার বিচার করতে হবে। তিনি ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডে ছাত্র-জনতার নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ী পুলিশ সদস্যদেরও বিচার দাবি করেন।
আবু সাঈদ তাঁর বুকের রক্ত দিয়ে বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস তৈরি করেছেন বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আবু সাঈদের কারণে লাখ লাখ মানুষ জেগে উঠেছেন। সেই ভয়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়েছেন।
এর আগে বেলা দেড়টার দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবু সাঈদের বাড়িতে আসেন। সেখানে তিনি বিএনপির স্থানীয় নেতা–কর্মীদের নিয়ে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে সাঈদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন।
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব দুলু, সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ও নাজিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছিল, সেই সময় গত ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। ২২ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের পুলিশের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।