আম উৎপাদনের শীর্ষে নওগাঁ : প্রায় ৮শ কোটি টাকার আম কেনাবেচার সম্ভাবনা

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ : দেশের শীর্ষ আম উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁ। ইতোমধ্যেই আম উৎপাদনকারী জেলাগুলোর মধ্যে দেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ছাড়িয়ে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে নওগাঁ। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম বাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এ জেলায় ৩০ হাজার ৩৫ হেক্টর আম বাগান থেকে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন। তবে এবার সবেচেয়ে বেশি আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে নওগাঁয়।

বরেন্দ্রখ্যাত এ জেলায় ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর আম বাগান থেকে এবার আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২১ হাজার ৫৩৯ মেট্রিক টন। এছাড়াও রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর বাগানে ২ লাখ ১০ হাজার ৯৪৭ মেট্রিক টন এবং নাটোরে ৪ হাজার ৮৬৪ হেক্টর বাগানে ৬৭ হাজার ২৮৪ মেট্রিক টন আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সম্প্রতি রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আম সংগ্রহ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ সংক্রান্ত এক সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সে হিসেবে আমের রাজধানী না বললেও নওগাঁকে বানিজ্যিক আমের রাজধানী বলা যেতে পারে।


নওগাঁর ঠাঁ ঠাঁ হিসেবে পরিচিত বরেন্দ্র অঞ্চলের এক ফসলি জমিতে ধান চাষের চেয়ে আম চাষ লাভজনক। আর এ কারনেই প্রতি বছর দুই হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আম বাগান গড়ে উঠছে। মাটির বৈশিষ্ট্যগত (এঁটেল মাটি) কারণে নওগাঁর আম সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে আমের ভরা মৌসুমে আম সংরক্ষনের ব্যবস্থা ও পাইকারি বাজার গড়ে না তোলায় আম চাষিরা নায্যমূল্য পান না। জেলায় আগামিতে আরো অধিক আম উৎপাদন করার লক্ষ্যে আম গবেষনাকেন্দ্র, পাইকারি বাজার ও সংরক্ষানাগার গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন। গত আট বছরে যেখানে নওগাঁয় মাত্র ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান ছিল। সেখানে বর্তমানে জেলায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান গড়ে উঠেছে। এক ফসলি জমিতে ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষের চেয়ে আম চাষে লাভজনক হওয়ায় আগামীতে নওগাঁয় আম চাষে বিপ্লব ঘটতে চলেছে। জেলায় গুটি, ল্যাংরা, ফজলি, ক্ষিরসাপতি, মোহনভোগ, আর্শ্বিনা, গোপালভোগ, হাঁড়িভাঙ্গা, আম্রপালি, বারি-৩, ৪ ও ১১, নাক ফজলি, গৌড়মতি উন্নত জাতের আম চাষ হচ্ছে। এ ছাড়াও দেশীয় বিভিন্ন জাতের আম চাষ করা হয়ে থাকে। এ সকল আমের বিশেষ জাতের মধ্যে আম ‘নাক ফজলি’। এই নাক ফজলি বিশেষ করে পত্নীতলা, বদলগাছী, ধামইরহাট ও মহাদেবপুরে চাষ হয়ে থাকে। এই আম প্রথমে ১৫/১৬ বছর আগে বদলগাছীতে চাষ শুরু হলেও বর্তমানে পত্নীতলায় বেশি চাষ হয়ে থাকে। অন্য আমের তুলনায় নাক ফজলি আম কম পচনশীল, খেতে সুস্বাদু ও বাজারে ব্যাপক চাহিদা। এ আমে ক্ষতিকর ফরমালিন ব্যবহার করার প্রয়োজন না হওয়ায় উৎপাদন থেকে বাজার করতে খরচও কম লাগে।

সাপাহারের আম চাষি তছলিম উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, বাবুল আক্তার, নয়ন বাবু, পোরশার রইচ উদ্দীন, ডিএম রাশেদ বলেন, আমের বাগানে সরিষা, ডাল, গম, ধান চাষ করায় এক বিঘা জমিতে বছরে লক্ষাধিক টাকা আয় করা যায়। ধানসহ অন্যন্যে ফসল চাষ করে যে লাভ হয় তার চেয়ে কয়েকগুণ লাভ বেশি হয় আম চাষে। এ জন্যই এলাকার কৃষকরা আম বাগানে কৃষকরা ঝুঁকে পড়েছে। আগে জেলায় ল্যাংরা, ফজলি, ক্ষিরসাপতি, মোহনভোগ, আর্শ্বিনা, গোপালভোগ জাতের আম চাষ করতেন। বর্তমানে উন্নত জাতের আম্রপালি, বারি-৩, ৪ ও ১১ জাতের আম চাষ করা হচ্ছে। সাধারণ জাতের চেয়ে আম্রপালি ও বারি-৪ জাতের আম দ্বিগুণ উৎপাদন ও দাম বেশি পাওয়ায় উন্নত জাতের এ আম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এক বিঘা জমি থেকে ধান চাষে বছর আয় হয় মাত্র ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। অথচ তিন-চার বছরের একটি আম বাগান থেকে প্রতি বছর ৪০ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয় এক বিঘা জামিতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক গোলাম ফারুক জানান, এক বিঘা জমিতে ৩০টি আম গাছ লাগানো যায়। আম গাছ লাগানোর ৪-৫ বছরের পর প্রতি গাছ থেকে দেড় মন থেকে দুই মন আম পাওয়া যায়। এর ফলে প্রতি বিঘা থেকে আম বিক্রি হয় ৪০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা। ধান চাষে অধিক পানি লাগায় স্বল্প সেচ চাহিদা সম্পন্ন আম চাষে কৃষকদের উদ্বুত্ত করা হচ্ছে। জেলায় প্রতি বছর শত শত টন আম উৎপাদন হলেও পাইকারি বাজার না থাকায় দ্রুত আম কম মূল্যে বিক্রি করে দেন আম চাষিরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোর জেলার মধ্যে নওগাঁয় আমের বাগান যেভাবে গড়ে উঠছে তা বলাবাহুল্য। মাটির কারনে স্বাদেগুনে বিশেষ করে নওগাঁর সাপাহার, পোরশা, পত্নীতলা, নিয়ামতপুর আমের তুলনা অতুলনীয়। প্রতি বছর নওগাঁয় যেভাবে আম বাগান গড়ে উঠছে তাতে আম চাষে বিপ্লব ঘটতে চলছে।

সাপাহারের আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা জানান, ইতোমধ্যেই প্রশাসনিকভাবে যাবতীয় করনীয় সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সকল আম ব্যাবসায়ীগন সে নিয়ম কানুন মেনে আম কেনাবেচার চেষ্টা করবেন। আর চলতি বছর আবহাওয়া ও বাজার ভাল থাকলে শুধু নওগাঁ জেলা থেকে এ বছর প্রায় ৮শ’ কোটি টাকার আম বানিজ্য হবে বলে জানান তিনি।

পিবিএ/বাবুল আখতার রানা/এমএ

আরও পড়ুন...