আরএন স্পিনিং মিলে আগুন, আতঙ্কে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা


মনির হোসেন,পিবিএ, কুমিল্লা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি কুমিল্লায় এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (ইপিজেড) অবস্থিত আর এন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাতে সাড়ে ৯টায় এই প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগে। আগুন লাগার ঘটনায় পুঁজিবাজারে অজানা আতঙ্কে রয়েছে কুমিল্লাসহ দেশের বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কোন কারণ জানা যায়নি। তাৎক্ষণিকভাবে আগুনে হতাহতেরও কোন খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। অগ্নিকান্ডের আগমুহূর্তে কারখানার ভিতরে ১৫০০ শ্রমিক কাজ করছিল বলে জানা গেছে।

কারখানার মেকানিক্যাল বিভাগের কর্মী দিদার বলেন, কারখানার ভেতর ৩টি শিফটে কাজ হয়, প্রতি শিফটে অন্তত ৫০০ শ্রমিক কাজ করেন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার অ্যালার্ম শুনতে পেয়ে সকল শ্রমিক নিরাপদেই বাইরে চলে আসেন। আগুনের খবর পেয়ে ইপিজেডের প্রধান দুটি গেটে উৎসুক জনতা ও শ্রমিকদের স্বজনরা ভিড় জমায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্য। এদিকে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর, পুলিশ সুপার মো. সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ র‌্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে আগুনে কারখানার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে তদারকি করছিলেন কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক রতন কুমার নাথ।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দুই তলাবিশিষ্ট ওই স্পিনিং মিলে প্রচুর পরিমাণ সুতা ও তুলা থাকায় আগুন কম সময়েই পুরো কারাখানায় ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরো বলেন, ইপিজেডের ভেতর থাকা পানি শেষ হয়ে যাওয়ায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তাই পাম্প চালু করে বিকল্প উপায়ে পানি সংগ্রহ করা হয়।

সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানির কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালে বছরের শুরুতে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ের সুতা তৈরির প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের ১০০ কোটি টাকার মধ্যে ৬৫ কোটি টাকা কোম্পানি সরবরাহ করে এবং বাকি ৩৫ কোটি টাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সংস্থান করা হয়েছে। সম্প্রতি কুমিল্লা ইপিজেডে পুরাতন কারখানার সঙ্গে নতুন করে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এ নিয়ে ২০১৭ সাল ৩১ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে।

সম্প্রতি কোম্পানির মামলা জটিলতায় চার বছরের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আটকা থাকায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। তবে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ ৩টিতে নো এবং একটিতে লভ্যাংশ হিসেবে শুধু সর্বশেষ হিসাব বছরের জন্য ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করায় তা ভাটা পড়ে।
এরপরে স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানির শেয়ারে বিক্রয়চাপ বেড়ে যায়। সপ্তাহের শেষে সাপ্তাহিক এবং মাসিক তালিকায় দরপতনের এক নম্বরে চলে আসে বস্ত্র খাতের কোম্পানিটি। তবে কারণ হিসেবে অনেক বিনিয়োগকারী বলেন, কোম্পানির চার বছরের মুনাফা কোথায় গেল? তিন বছর লভ্যাংশ না দিয়ে এক বছরে তারা মূলধন বৃদ্ধি করতে আবারো বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এটা কর্তৃপক্ষের নৈতিকতার চরম অবক্ষয়।

নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে আরএন স্পিনিংয়ের নিট মুনাফা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। এ সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ১ পয়সা। যেখানে এর আগের ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে কোম্পানিটি ২৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা লোকসানে ছিল। সে সময়ে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা লোকসান হয়েছিল, বোনাস শেয়ার সমন্বয়ের পর যা ১ টাকা ৪ পয়সায় দাঁড়ায়।
উল্লেখ্য, শতভাগ রফতানিমুখী আরএন স্পিনিং বর্তমানে ১৬ ধরনের অ্যাক্রেলিক ও দুই ধরনের কটন সুতা উত্পাদন করে। আগের বছরগুলোতে কোম্পানির উত্পাদন ও রফতানি ধারাবাহিক থাকলেও অ্যাক্রেলিকের চাহিদা কমার কারণে ২০১৪ সাল থেকে তাদের রফতানিতে ধস নামে। ফলে ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সাল মিলে তিন বছরে ৬৫ শতাংশের বেশি রফতানি কমে যায়। তবে ২০১৬ সালে ২০ শতাংশ,২০১৭ সালে ২০ শতাংশ,২০১৮ সালে ১০ শতাংশ বোনাশ দিয়েছে।

পিবিএ/এমএইচ/জেডআই

আরও পড়ুন...