পবিত্র মাহে রমজান মাসে ইফতারির অন্যতম এক অপরিহার্য অংশ হলো খেজুর। আরব দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কেনা-বেচা হয় এই খেজুর। রোজার আগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) খেজুরের দাম ৪০ শতাংশ কমিয়েছে ব্যবসায়ীরা। শুধু রমজান উপলক্ষে দেশটিতে স্বাভাবিকের তুলনায় খেজুরের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শারজার ওয়াটারফ্রন্ট মার্কেট ও জুবাইল মার্কেট পরিদর্শন করে দেখা গেছে স্বাভাবিকের তুলনায় খেজুরের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
আরব আমিরাত ছাড়াও বর্তমানে ফিলিস্তিন, জর্ডান এবং সৌদি আরবের মাজদুল খেজুর প্রতি কেজি পাওয়া যাচ্ছে ২০ দিরহামে। মাত্র কয়েকদিন আগে প্রতি কেজি এই খেজুরের দাম ছিল ৩০ দিরহাম। একইভাবে, রুটাব খেজুর সাধারণত ৬০ দিরহামে ৩ কেজি কিনতে পাওয়া গেলেও এখন রমজানের আগে ওই একই পরিমাণ খেজুরের দাম কমে ৪৫ দিরহামে নেমে এসেছে।
আজওয়া খেজুরের দাম এখন প্রতি কেজি ৩৫ দিরহাম। যা এই খেজুরের আগের দাম ৪৫ দিরহাম থেকে কম। আর বাজেট-সচেতন ক্রেতারা সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে ইরান থেকে আসা জাইদি খেজুর কিনতে পারছেন। কেজি প্রতি ৫ দিরহামে এই খেজুর কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।
ওয়াটারফ্রন্ট মার্কেটের ১৩০ নম্বর স্টলে খেজুর বিক্রেতা মোহাম্মদ রইস বলছেন, বর্তমানে ডিসকাউন্ট মূল্যে শুকনো ফল দেয়া হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন ১০০ কেজির বেশি খেজুর বিক্রি করছি এবং আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহে প্রতিদিনের বিক্রির পরিমাণ ৫০০ কেজি ছাড়িয়ে যাবে।’
ওয়াটারফ্রন্ট মার্কেটের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘আমাদের কাছে বর্তমানে ৩০ টিরও বেশি জাতের খেজুর রয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে আমরা বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে আরও বিভিন্ন জাতের খেজুর আনার আশা করছি। আগামী সপ্তাহগুলোতে চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাসিন্দারা ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির আশা করতে পারে।’
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সৌদি আরবে বাড়তে শুরু করেছে খেজুরের দাম। সরবরাহ যথেষ্ট থাকলেও চাহিদা বাড়ার কারণে দেশটিতে খেঁজুরের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেবল উচ্চ পুষ্টিগুণের কারণেই নয়, সৌদি আরবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা সামাজিক মূল্যবোধ, রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযোগের কারণে রমজান মাসে খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। খেজুর দিয়ে ইফতার করা মহানবী (স)-এর সুন্নতও।
এসব কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে খেজুরের দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন ক্রেতারা। তবে রমজান উপলক্ষে খেজুরের বিপুল সরবরাহ রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ব্যবসায়ীরা।
সৌদি আরবের দোকানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের খেজুর বিক্রি হয়। এর মধ্যে খালাস, সুক্কারি, রুথানা, বারহি, আল-সাকি, আল-সাফারি খেজুরের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি।
সৌদি প্রেস এজেন্সির খবর অনুসারে, জেদ্দায় প্রতি কেজি সাফাভি খেঁজুর বিক্রি হচ্ছে ২০ রিয়ালে (৫৮৪ টাকা প্রায়)। আল-সাকি খেঁজুর পাওয়া যাচ্ছে প্রতি কেজি ২৫ রিয়ালে (৭৩০ টাকা প্রায়) এবং আজওয়া খেঁজুর বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ রিয়ালে (২ হাজার ৪৬ টাকা প্রায়)।
এছাড়া, এক বাক্স কাঁচা খেজুর পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪৫ রিয়ালে। আল-আহসার খালাস খেজুর মিলছে ৬০ রিয়ালে এবং আল-কাসিমের খালাস খেজুর পাওয়া যাচ্ছে ১২০ রিয়ালে।
ক্রেতারা জানিয়েছেন, কাসিমের সুক্কারি এবং মদিনার রুথানা তাদের কাছে সবচেয়ে পছন্দের খেজুর।
রমজান মাসে অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো সৌদি আরবেও খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায়। দেশটিতে বছরের প্রায় ৪০ শতাংশ খেজুরের ব্যবহার হয় এই মাসে। নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি সৌদি আরব প্রচুর পরিমাণে খেজুর রপ্তানিও করে।
জানা যায়, সৌদিতে প্রতি বছর আনুমানিক ১৫ লাখ টন খেজুর উৎপাদিত হয়। ২০২২ সালে দেশটি ১২০ কোটি সৌদি রিয়ালের খেজুর রপ্তানি করেছিল, যা আগের বছরের তুলনায় অন্তত ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে তাদের খেজুর রপ্তানি আরও ১৪ শতাংশ বেড়ে ১৪০ কোটি রিয়ালে পৌঁছায়।
বর্তমানে বিশ্বের ১১৯টি দেশে খেজুর রপ্তানি করে সৌদি আরব।