মোঃ নুরুল করিম আরমান, লামা বান্দরবান: দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার একমাত্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট বিরাজ করছে। এতে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদটিতে এক সহকারী শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হলেও, নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না অপর সাতজন বিষয়ভিত্তিক সহকারী শিক্ষক। এ ছাড়া অফিস সহায়ক ও নৈশ প্রহরী পদেও জনবল নেই দীর্ঘদিন ধরে। ফলে বিপাকে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা, উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল। ইতিমধ্যে শিক্ষক সংকট নিরসনের দাবীতে বিদ্যালয়ের র্যালী ও মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বান্দরবান জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপিও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লিখিত স্মারক লিপিতে বলা হয়, বিগত কয়েক বছর যাবত বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের কারনে পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বছরের শুরুতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী ছ্ত্রাছাত্রীদের বাছাই করে স্কুলে ভর্তি করা হলেও পাঁচ বছর শেষে মেধাশূন্য হয়ে কোন রকম পাশের সার্টিফিকেট নিয়ে বের হতে হয়। শ্রেণী ওয়ারী বিষয় ভিত্তিক ৩৫টি ক্লাস পাঠদান করার কথা থাকলেও বর্তমানে ৩০ টি ক্লাস রুটিনভূক্ত করা হয়েছে। ৫/৬ জন শিক্ষক দিয়েও রুটিনভূক্ত এই ৩০টি পর্যন্ত ক্লস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ধারিত শিক্ষক না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা পছন্দমত বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারছে না।যার কারনে এ উপজেলার শিক্ষার্থীরা মেধার দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে পড়ছে। ৭০ জন ছাত্রছাত্রী স্বাক্ষরিত এ স্মারকলিপিতে পদানুযায়ী বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের জোর দাবী জানানো হয়।
বিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, ১৯৭৬ সালে আলীকদম জুনিয়ার হাইস্কুল নামে প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিদ্যালয়টি। পরে ধাপে ধাপে এটি ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত উন্নীত হয়। ১৯৮৯ সালে তৎকালীন সরকারের প্রধান প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ সরকারি সফরে আলীকদম গেলে বিদ্যালয়টিকে সরকারি করণের ঘোষনা দেন। সে সময় থেকেই থেকে বিদ্যালয়টির নামকরণ হয় আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত প্রায় ৫’শত ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে। প্রতিদিন ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ৩৫টি বিষয় ভিত্তিক পাঠদান করেন ৬জন শিক্ষক।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বিগত কয়েক বছর যাবত আলীকদম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। যার কারণে প্রতিনিয়ত শ্রেণী পাঠদান সম্পন্নকরতে শিক্ষকদেরি হমশিম খেতে হচ্ছে। বছরের শুরুতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বাছাই করে স্কুলেভর্তি করা হলেও পাঁচ বছরের শেষান্তে মেধাশূণ্য হয়ে কোন রকম পাশের সার্টিফিকেট নিয়ে যেতে হয়। বিদ্যালয়ে ১৩ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও মোট ৬ জন শিক্ষক দ্বারা পাঠদান কার্যক্রম চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ইতিপূর্বে বেশকিছু পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করলেও এবিষয়ে কোনপ্রকার পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বিভিন্ন বিষয়ের জন্য নির্ধারিত শিক্ষকনা থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা পছন্দমত বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করতে পারছেনা। যার কারণে এলাকার কোমল মতি ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে পড়ছে অনেকাংশে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ইয়াহিয়া আহমেদ পিবিএ’কে জানায়, নিয়মানুযায়ী বিদ্যালয়ে ২৭ জন শিক্ষক থাকা কথা। বিদ্যালয়ে ১৩টি পদের বিপরিতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৬জন। বর্তমানে ইংরেজী, ব্যবসায় শিক্ষা, জীব বিজ্ঞান, শারীরিক শিক্ষাসহ ৭জন শিক্ষক নেই। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষা অধিদপ্তরে বহুবার চিঠি লিখেছি কিন্তু কোন কাজ হচ্ছেনা। যার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার মানোন্নয়নে বিদ্যালয় পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান নিচের দিকে ধাবিত হবে। তাছাড়া বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক ও নৈশপ্রহরীর পদও শূন্য রয়েছে। এতে করে দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজেও ব্যঘাত ঘটছে। অভিভাবক মুক্তিযোদ্ধা মোহসিন সরদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নেতৃস্থানীয়দের ছেলে মেয়েরা তো কেউ এখানে পড়ে না। তারা পড়ায় ঢাকা চট্টগ্রামে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বেদনার কথা শুনবে কে।
শিক্ষক সংকটের সত্যতা নিশ্চিত করে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার পিবিএ’কে বলেন, শিক্ষক নিয়োগের দাবী সম্বলিত স্মারকলিপিটি জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরনের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের পড়ালেখার মানোন্নয়নের স্বার্থে আমার দিক থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
পিবিএ/এনকে/হক