রাজন্য রুহানি,জামালপুর: দীর্ঘ ১৭ বছর পর আওয়ামী লীগ নেতার দখল থেকে জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের গোপালপুর দামেশ্বর এলাকার মৃত ইব্রাহিম আলীর ৭০ শতাংশ জমি উদ্ধার করেছে তার পরিবার। জমি উদ্ধার করলেও গ্রামের মাতব্বদের পক্ষ থেকে বিচার সালিশ না হওয়া পর্যন্ত ওই জমিতে চাষাবাদ করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার স্বজনদের হাতে মৃত ইব্রাহিম আলীর পরিবার একাধিকবার মারধরের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনা নিয়ে নিজেদের জমিতে শেষপর্যন্ত চাষাবাদ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
অভিযোগে জানা গেছে, মৃত ইব্রাহিম আলীর রেখে যাওয়া ৩৪৬ ও ৩৪৯ দাগে ৭০ শতাংশ জমি জোরপূর্বক বেদখল করে রেখেছেন কেন্দুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম রেজা ও তার স্বজনরা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক জমি বেদখল দিয়ে মৃত ইব্রাহিম আলীর চার ছেলে ও তিন মেয়ের ওপর হামলা চালানো হয়। এক ছেলেকে কোদালের কোপ দিয়ে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। তারা ওই নেতার অত্যাচারে ঢাকায় গিয়ে দীর্ঘদিন গার্মেন্টসে চাকরি করেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণঅভ্যুখানে আওয়ী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা জমিতে যান। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জমির উত্তরসূরীরা জমিতে লাল নিশান টানিয়ে রেখেছেন। ওই জমিতে চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবুও মাতব্বরদের বিচারের নামে কালক্ষেপ ও নেতার অত্যাচার মিলে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন থেকে এই জমি নিয়ে উভয় পক্ষের মাঝে বিরোধ চলে আসছে। বিভিন্ন সময় সালিস-বৈঠক হলেও কোন সমাধান আসেনি। এনিয়ে আবারও এলাকাবাসী ও মাতাব্বররা বসে সমাধানের কথা বলেছেন।
মৃত ইব্রাহিম আলীর ছেলে ভুক্তভোগী গোলাম মোস্তফা জানান, দীর্ঘদিন পর আমাদের জমিতে আমরা আসতে পেরেছি। কিন্তু তারপরও প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগনেতা সেলিম রেজা ও তার স্বজনরা এখনও আমাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে।
ভুক্তভোগী সাবিনা ইয়াসমিন বিমলা জানান, কেন্দুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম রেজার নেতৃত্বে ভাড়াটে লোজকন নিয়ে এসে আমাদের মারপিট করে জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের পর আমাদের জমিতে আমরা আসতে পেরেছি। এখন আমাদের জমিতে আমরা চাষাবাদ করছি।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, বিগতদিনে আমাদের জমি ফিরে পেতে চাইলে তারা আমাদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালাতো। আমরা কোন কথা বলতে গেলে আমাদের উপর হামলা করতো ও মামলার ভয় দেখাতো। আজ আমাদের জমি আমরা ফিরে পেয়ে খুশি।
এদিকে ওই জমি তারা উদ্ধার করলেও এনিয়ে এলাকাবাসী সালিস বৈঠকের মাধ্যমে তাদের জমির বিরোধ মিমাংসা করার কথা জানিয়েছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগনেতা সেলিম রেজা বলেন, ‘জমি কাগজপত্র দেখে তারা বুজে নিবে। যদি জমির কাজগপত্র আমার থাকে তাহলে আমি পাবো, আর তাদের থাকলে তারা পাবে। তিনি আরও বলেন, এই জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে এলাকাবাসী ও মাতাব্বররা মিমাংসার জন্য বসেছিলেন। আবার সামনের তারিখে উভয়পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে বসার কথা রয়েছে।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো. আতিক জানান, কেন্দুয়ায় জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কোন ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।