সিরিয়ার বিদ্রোহীরা দেশটির রাজধানী দামেস্ক দখলের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিমানে করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। আর এটিকে সিরিয়ানদের জন্য ঐতিহাসিক সুযোগ বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
একইসঙ্গে আসাদের বিচারও চেয়েছেন তিনি। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে “জবাবদিহিতার আওতায়” আনা উচিত বলে রোববার মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একইসঙ্গে তিনি এই রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দেশ পুনর্গঠনের জন্য সিরিয়ানদের একটি “ঐতিহাসিক সুযোগ” হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।
মূলত বিদ্রোহী নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জাওলানির নেতৃত্বে অভিযান শুরু হওয়ার পর নভেম্বরের শেষ দিকে এই বিদ্রোহীরা হুট করে সিরিয়ার আলেপ্পো শহর দখল করে নেয়। এর দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে দেশটিতে সরকারের পতন হলো।
আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে এই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। এ সংগঠনটির সিরিয়ার ইতিহাস ও সংকটে জড়িত থাকার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্কসহ অনেক দেশে এইচটিএস সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত।
এদিকে ইসলামপন্থিদের নেতৃত্বে বিদ্রোহীদের জোটের হাতে আসাদের পতনের পর রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পূর্ণ প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, কোনও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আবির্ভাব যেন না হয়, সে ব্যাপারে ওয়াশিংটন “সজাগ থাকবে”।
হোয়াইট হাউস থেকে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, “সরকারের পতন একটি মৌলিক ন্যায় বিচাররের কাজ ছিল। সিরীয় জনগণ, যারা অনেক দুর্ভোগ সহ্য করেছে, তাদের জন্য এটা এক ঐতিহাসিক সুযোগ।”
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের কী হওয়া উচিত, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, “আসাদকে জবাবদিহিতার আওাতায় আনা উচিত।”
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ওয়াশিংটন সিরিয়ানদের পুনর্গঠনের জন্য সহায়তা করবে। তিনি বলেন, “আমরা জাতিসংঘের প্রক্রিয়ার মধ্যে আসাদ সরকার থেকে দূরে নতুন সংবিধানসহ একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম সিরিয়া গড়ার লক্ষ্যে সকল সিরীয় গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ রাখব।”
তবে বাইডেন হুঁশিয়ারি দেন, বিজয়ী জোটের মধ্যে কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর ওপর নজর রাখা হবে। তার ভাষায়, “যেসব বিদ্রোহী গোষ্ঠী আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, তাদের মধ্যে কয়েকটির নিজস্ব সন্ত্রাস এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড আছে।”
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো উগ্রপন্থা থেকে সরে আসার যে কথা সম্প্রতি বলেছে সেটা যুক্তরাষ্ট্র “আমলে নিয়েছে” বলেও তিনি জানান। কিন্তু তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “আমারা শুধু তাদের কথা নয়, তাদের কাজ দিয়ে পর্যালোচনা করব।”
বাইডেন আরও বলেন, ওয়াশিংটন “পরিষ্কারভাবে বোঝে” যে আইসিস নামে পরিচিত ইসলামিক স্টেট চরমপন্থি গোষ্ঠী সিরিয়ায় নিজেদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য “ক্ষমতা-শূন্যতার সুযোগ ব্যবহার করতে চাইবে। কিন্তু আমরা সেটা হতে দেবো না।”
শুধুমাত্র রোববারই মার্কিন বাহিনী সিরিয়ার অভ্যন্তরে আইসিসের বিরুদ্ধে “এক ডজন” বিমান হামলা চালিয়েছে বলেও জানান তিনি।