আসামের চরম উৎকণ্ঠায় ৪২ লাখ হিন্দু-মুসলমান

পিবিএ ডেস্ক: আসামে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে ৪২ লাখ হিন্দু- মুসলিম। এনআরসি চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে আজ শনিবার। এ উপলক্ষে আসামজুড়ে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এনআরসি থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় আতঙ্কে সংখ্যালঘু মুসলিম ও বাংলাভাষীরা। পাওয়া যাচ্ছে, আত্মহত্যা-হয়রানির খবরও।
অবৈধ অভিবাসীদের ভারত থেকে বের করতে আসাম রাজ্যের নাগরিক তালিকা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর একেই মোদি সরকারের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০১৪ সালের পর থেকে শুরু হয় এনআরসি প্রক্রিয়া। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, আসামের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করা। তারাই কেবল নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণে সক্ষম হবেন, যারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে আসামে বসবাসের প্রমাণ দেখাতে পারবেন। যা আসামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যে খুবই কঠিন।
এ বছরের জুনে প্রকাশ করা হয় এনআরসির খসড়া তালিকা। সেখানে বাদ পড়ে ৪২ লাখ মানুষের নাম। যাঁদের অধিকাংশ বাংলাভাষী হিন্দু ও মুসলমান। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর মধ্যে কারা শনিবার নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাবেন, আর কাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে, সেই দুশ্চিন্তা, দোলাচল ও আতঙ্ক ক্রমেই তীব্রতর হয়ে উঠেছে।
এনআরসিকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিষিদ্ধ করা হয়েছে সব ধরনের সভা সমাবেশ। এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় নাম না এলে ‘বন্দি শিবিরে’ থাকতে হবে তাঁদের। এমনকি, যেসব হিন্দু অধিবাসী পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসে আসামে বাস করছেন, নাগরিকত্ব হারানোর শঙ্কায় আছেন তারাও।
পাঁচ সন্তানসহ নিজের নাম খসড়া তালিকায় না আসায় আত্মহত্যা করেছেন আসামের বান্তিপুরের বাসিন্দা রাহিম আলি। পাশাপাশি দুই ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানালেন আসামের হিন্দু বাসিন্দা মাঞ্জুরি ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘যদি আমাকে বিদেশি ঘোষণা করা হয়, তাহলে আমার দুই ছেলের কী হবে?’
এনআরসি সমর্থকরা বলছেন, এটা হিন্দু-মুসলমানের বিষয় নয় কিংবা অবৈধ বাংলাদেশিদের তাড়িয়ে দিতেও নয়। বড় বিষয় হচ্ছে, অবৈধ অভিবাসীদের কারণে তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কাজপত্র দিয়েও অনেকে নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কায় আছেন। খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়ে অনেক সরকারি কর্মকর্তার নামও।
এনআরসিতে নাম না আসায়, এরই মধ্যে এক হাজারেরও বেশি লোককে আসামের কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। যারা আসামের নাগরিকত্ব হারাবেন, তাদেরকে বন্দি শিবিরে নেওয়া হবে। তারপর তারা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন এবং ১২০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
৪০ লাখ হিন্দু ও মুসলিম যেখানে বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে হাজার খানেক ট্রাইব্যুনাল বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ভারতীয় আইন বিভাগ। এরইমধ্যে ১০০টি ট্রাইব্যুনাল কাজ শুরু করেছে।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...