শতাব্দী আলম : আমার বয়স ৯। আমি তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র। আমি ‘নদী’ রচনা লিখবো।
আমার একটি নদী আছে। আমাদের নদীর নাম ইছামতি। নদীর পানি টলটলে পরিস্কার। সকালে জোয়ার আসে। দুপুরে ভাটা। বর্ষাকালে নদীতে অনেক স্রোত। আমরা তখন নদীতে সাতার কাটতে ভয় পাই। সারা বছরই অল্প অল্প স্রোত থাকে। স্রোতে কুচুরীপানা ভেসে বেড়ায়। নদী তীরে কাশবন। আমি কাশফুল পছন্দ করি।
নদী আমাদের অনেক উপকার করে। নদীতে আমরা গোসল করি। রাখাল গরু,ছাগল, মহিষ এই নদীতে গোসল করায়। নদীতে নৌকা চলে। লঞ্চ চলে। আমি একবার আব্বার সাথে লঞ্চে ঢাকা বেড়াতে গিয়েছিলাম। মাল বোঝাই গয়না নৌকা চলে। আমরা নৌকায় নদী পার হই। নদী পার হয়ে স্কুলে যাই। নদীর পারে গাছ-পালা অনেক বেশী সবুজ। জেলে ভাই নদীতে মাছ ধরে। নদীতে এখনো টেংরা, পুটি, বোয়াল, বেলে, চিংড়ি মাছ পাওয়া যায়। প্রতি রোববার নদীর উপর হাট বসে। হাটবারে মালপত্র বোঝাই অনেক বড় বড় নৌকা আসে। প্রতিবছর নদীতে নৌকা বাইচ বসে। আমরা খুব আনন্দ করি। বর্ষাকালে নদীর স্রোত ময়লা আবর্জনা সবকিছু সাগরে ভাসিয়ে নেয়।
সেই আমার বয়স ৪৭। আমি ঢাকা চাকুরী করি। মাঝে মাঝে নদীর পারে দাড়াই। নদীর জন্য আমার মনে অনেক দুঃখ।
এই আমাদের ইছামতি নদী। মরা গাঙ। বর্ষায়ও সামান্য জলই থাকে। স্রোত বলতে কিছু আছে এই নদীর পারে দাড়ালে বুঝাই যায় না। চৈত্র বৈশাখে হাটু জল থাকে। এখন আর বড় নৌকা চলে না। দু একটি কোসা নাউ আর শেলো ইঞ্জিনের বোট চলে। নদীর মাঝে আড়াআড়ি বড় বড় ঠ্যাঙএ খা খা ব্রীজ দাড়িয়ে। আমরা এখন ব্রীজ দিয়ে নদী পার হই। নদীর উপর গাড়িতে চলাচল করি। নদীতে মানুষ গোসল করেনা বললেই চলে। গরু, ছাগল মহিষ ও কম। নদীর উপকারের কথা আমরা ভুলেই গেছি। আমরাই মাত্র এক জীবনে নদীকে একটু একটু করে শেষ করলাম। এখন করোনা ভাইরাসের ভয়ে সেই নদীর পারে দাড়িয়ে থাকি। প্রকৃতির করুণার জন্য। নদী এখন আর আবর্জণা ভাসিয়ে নেয় না। নদীর পানি দূর্গন্ধযুক্ত।
নদীকে আমরা মানুষরাই হত্যা করেছি। আমরা মানুষরা যে যেভাবে মন চেয়েছে প্রকৃতিকে ক্ষত-বিক্ষত করেছি। প্রকৃতির কড়া হুশিয়ারী মানুষ্যদের বন্ধী থাকতে হবে। প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে। প্রকৃতি করোনা ভাইরাস দিয়ে মানুষকে জব্দ করেছে।
## ঢাকার অদূরে নবাবগঞ্জে ইছামতি নদীর পারে দাড়িয়ে