টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকশ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মাওলানা জুবায়ের অনুসারী এস এম আলম হোসেন বাদী হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) টঙ্গী পশ্চিম থানায় এ মামলাটি করেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে পুলিশের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও বৃহস্পতিবার ইজতেমা ময়দানের বিভিন্ন স্থানে কিছু মুসল্লি অবস্থান করছেন। তাদের দাবি, কাঁথা, বালিশসহ বিভিন্ন মালামাল পাহারা দিতে ময়দানে রয়েছেন তারা। এছাড়া ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন। তবে ময়দানের ভেতর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন স্টেশন রোডের মোড়, মুন্নু গেইট-কামারপাড়া সড়ক, ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের গেটসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছেন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এসময় কিছু মুসল্লিকেও বাঁশ হাতে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের বিভিন্ন গেটে পাহারা দিতে দেখা গেছে।
ময়দানে থাকা মুসল্লি সাইফুল ইসলাম বলেন, ময়দানে অবস্থানকারীরা সবাই মাওলানা জুবায়ের অনুসারী। মাওলানা সাদ অনুসারীরা মাঠ খালি করে দেওয়ার পর বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দিনগত রাতের বিভিন্ন সময় তারা ইজতেমা ময়দানে এসেছেন। এসব মুসল্লিসহ আমরা ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার।
তিনি আরও জানান, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে মুরুব্বিদের নির্দেশনা অনুযায়ী, ইজতেমা ময়দানের যাবতীয় মালামাল পাহারা দিতে বিভিন্ন জামাতভুক্ত প্রায় ৫০০ সাথি ময়দানে এসেছেন।
জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন বলেন, বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই পক্ষের সভা শেষে ময়দানে থাকা মালামাল পাহারা দেওয়ার জন্য জুবায়ের অনুসারীদের ৫০০ লোক থাকার সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা ময়দানে অবস্থান করছেন। তবে পুলিশের নির্দেশনা কার্যকর রয়েছে। মাঠ ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে বুধবার দুপুরে ময়দানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে পুলিশের গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর সাদ অনুসারীরা ইজতেমা মাঠ ত্যাগ করেন।
তবে মাওলানা সাদ অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইজতেমা ময়দান প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই সরকার জুবায়ের অনুসারীদের মাঠ বুঝিয়ে দিয়েছেন। তারা পাহারার নামে ঠিকই ময়দানে অবস্থান করছেন। এটা আমাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) থেকে ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদের অনুসারী মুসল্লিরা পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা পালন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা সাদপন্থিদের ময়দানে জোড় পালন করতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এর জেরে বুধবার ভোরের দিকে উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের চারজন নিহত ও শতাধিক মুসল্লি আহত হন। এ ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
বিজ্ঞপ্তি জারির পর সাদ অনুসারীরা ইজতেমা মাঠ ত্যাগ করেন। তবে তাদের অনেক জামাতভুক্ত সাথিরা ময়দানের আশপাশের বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, বাসাবাড়ি ও মেসে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে জুবায়ের অনুসারীদের ওপর হামলা ও হতাহতের ঘটনায় সাদ অনুসারীদের দায়ী করে তাদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিবাবাড়ি-শিমুলতলী সড়কের পাশে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
জিএমপির টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইস্কান্দর হাবিবুবুর রহমান জানান, ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তদের নাম তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।