পিবিএ,ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে তারা মারামারিতে সরাসরি সম্পৃক্ত ও ইন্ধনদাতা হিসেবে জাকারিয়া (বঙ্গবন্ধু হল), আমিরুল (জিয়া হল) ও হাসানুল বান্নার (লালন হল) নাম উল্লেখ করেন। এদিকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে ঐ তিন শিক্ষার্থী।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস কর্নারে ঐ তিন শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি মারামারির ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন।
বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, আইন বিভাগ ও আল ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় সম্পূর্ণ উদ্যেশ্যপ্রনোদিতভাবে আমাদের যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। ঘটনার সময় আমি (জাকারিয়া) বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটেই ছিলাম তার জন্য প্রথম থেকেই ঘটনাস্থলে থাকা হইছে। কিন্তু সেখানে আমাদের সাথে আরো অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও সংবাদ সম্মেলনে আমাদের কয়েকজনের নাম নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আমরা হামলার সাথে জড়িত বলে দাবি করা হয়েছে। আমরা কোনো ধরনের হামলার সাথে নূন্যতম জড়িত নই। আমরা তাদের বক্তব্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সেই সাথে আমরা এই ঘটনা তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
তারা আরো বলেন, সেখান উপস্থিত থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থী প্রশ্ন তুলেছে যে আমরা অন্য বিভাগের শিক্ষার্থী হয়ে কেন সেখানে উপস্থিত ছিলাম? যেহেতু ঘটনাটি প্রধান ফটকে ঘটেছে আর আমরা শিক্ষার্থী হিসেবে সেখানে থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। বরং আমি কেন সেখানে ছিলাম এই প্রশ্ন করা অবান্তর। একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রক্টররা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা শান্ত না হয়ে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে একটি মব সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো। তখন আমরা শিক্ষার্থীর জায়গা থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। যদিও সেটা আমাদের দায়িত্ব নয়।
এদিকে গতকাল রোববার মারামারির ঘটনার বিচারসহ চার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করছে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন আশহাদুল ইসলাম, সাব্বির আহমেদ, মাহফুজ উল হক সুমন গাজী, মেজবাউল আলম, ফজলে রাব্বী ও রাশেদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, গত শনিবার রাতে বাসের ঘটানার প্রেক্ষিতে প্রক্টর অফিসে বিচারের দাবিতে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তবে মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত বাহিরে জানাতে গেলে সেখানে উপস্থিত আল ফিকহ ও অন্য অনুষদের কিছু শিক্ষার্থী ‘আল ফিকহ’ বিভাগের নামে স্লোগানসহ বিভিন্ন উস্কানীমূলক বক্তব্য দেয়। এরপর তারা আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত ও পরিকল্পিত হামলা চালায়। এ হামলায় সরাসরি সম্পৃক্ত ও ইন্ধনদাতা ছিল জাকারিয়া (বঙ্গবন্ধু হল), আমিনুর (জিয়া হল), হাসানুল বান্না (লালন হল)। এদের কেউ আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থী নন। তবে সরাসরি হামলায় জড়িতের বিষয়ে তাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই বলে জানান তারা। হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের এ অভিযোগ বলে দাবি করেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) রাতে বাসে সিট ধরাকে কেন্দ্র করে বাসের মধ্যে আইন বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমন অভ্র ও আল ফিকহ্ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলামের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে ওই বাসটি রাত সাড়ে ৮টার দিকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাস ঘেরাও করে। পরে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামানের নেতৃত্বে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে আলোচনায বিষয়টি সমাধান হয়। তবে সমঝোতা শেষে চলে যাওয়ার সময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আল ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে উস্কানি দিলে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় মারামারি থামাতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও অন্য শিক্ষকরা আহত হয়। এছাড়াও বিশ্বিবদ্যালয়ের সানন্দা বাসের সামনের গ্লাস ভাংচুর করা হয়।