ইবির আশপাশে মাদকের রমরমা ব্যবসা

নাজমুল হুসাইন,ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়(ইবি) ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে মাদক সেবনের পরিমাণ। গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু হলের সামনে পুকুর পাড়, মাঠের বিভিন্ন স্থানে, হলের বিভিন্ন কক্ষে, সাদ্দাম হোসেন হলের ছাঁদে, মফিজ লেক সংলগ্ন এলাকাসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে মাদকের সেবনের আড্ডা চলে বলে জানা গেছে। চারদিকে মাদকের ছয়লাবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মাদকে জড়িয়ে কেউ কেউ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে আবার কেউ মাত্রাতিরিক্ত নেশাগ্রহনের ফলে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকে।

এদিকে গত সোমবার (২৩মে) হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী মধ্য রাতে মাত্রাতিরিক্ত নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করায় মাঠেই জ্ঞান হারিয়ে। ওই শিক্ষার্থীর নাম আশিকুর রহমান কোরাইশি।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, মাদকাসক্তদের বড় একটি অংশ মাদকের টাকা জোগাড় করতে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। তাদের ভয়ে রাতের ক্যাম্পাসে ঘুরতে ভয় লাগে, যদি ছিনতাইয়ের শিকার হই। এমনকি এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ভাতের টাকা বাচিয়ে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে মাদকসেবীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসব বিষয়ে প্রশাসনের পদক্ষেপ যথাযথ নয়। ক্যাম্পাসে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে তাদের অনীহা পরিলক্ষিত হয়। মাঝে মাঝে এটা দেখা গেছে, কিছু শিক্ষকও রয়েছেন যারা মাদকাসক্ত। এমতাবস্থায় প্রসাশনের উচিত, মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদকাসক্তদের একটি বড় অংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থী। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের বিভিন্ন নেতা কর্মীও জড়িত এসব কার্যক্রমের সাথে। স্থানীয় কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী এসব ছাত্রদের টার্গেট করে তাদের হাতে মাদক ছড়িয়ে দেন। মূলত তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেটগুলো পরিচালনা করেন। গতকাল বুধবার (২৫ মে) আনুমানিক রাত সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে থেকে ১৫০ পিচ ইয়াবাসহ এক ব্যক্তিকে আটক করেন ইবি থানা পুলিশ। তার নাম মো: আনোয়ার হোসেন জোয়াদ্দার (৩৬) । তিনি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার পদমদি গ্রামের নুরুল জোয়াদ্দারের ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীও প্রত্যক্ষভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। মাদকসেবীদের কাছে মাদকদ্রব্য পৌঁছে দেন তারা।

এদিকে মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অধিকাংশ সদস্য কুষ্টিয়া, হরিনারায়ণপুর,পদমদি,শৈলকূপাসহ ক্যাম্পাসের আশপাশে থাকেন। প্রয়োজনমতো তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন বেশ ধরে প্রবেশ করে মাদক পৌঁছে দেন। মাদক ব্যবসায়ীরা শুধু চিহ্নিত মাদকসেবীদের কাছেই মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন। অপরিচিত কোনো ব্যক্তির কাছে তারা সহজে মাদক বিক্রি করেন না। তাদের সঙ্গে মাদকসেবীদের রয়েছে আলাদা সখ্যতা।

এছাড়াও এর আগে গত জানুয়ারিতে দস্তগীর হোসেন নামে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মাত্রাতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলে আটক করে প্রক্টরিয়াল বডি। এরপর তাকে ঠাকুরগাঁওয়ের পুনর্জন্ম মাদকাসক্তি চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কিন্তু ঈদের ছুটির পর ক্যাম্পাস খুললে সে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে এসে মাদকসেবন করে। গতকাল বুধবার (২৫ মে) রাত দশটায় আবারও অতিরিক্ত মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন ওই শিক্ষার্থী। পরে প্রক্টরিয়াল বডি তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করে। পরে প্রক্টোরিয়াল বডি আজ সকাল এগারোটার দিকে তাকে আবারও পুনর্জন্ম মাদকসক্তি চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশাসনের ধারাবাহিক অভিযান না থাকার কারণে মাদকাসক্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হলে, আশা করি আমাদের ক্যাম্পাস মাদকমুক্ত হবে।

এ বিষয়ে উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসে মাদক সরবরাহকারীদের খোঁজার চেষ্টা করছি। কোনোভাবে যাতে মাদক প্রবেশ না করে সে বিষয়ে দ্রত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

আরও পড়ুন...