নাজমুল হুসাইন,ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলে মধ্যরাতে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। পরে উভয়পক্ষই হলটির প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এ ঘটনায় ওই হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে আরেকটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে হল প্রভোস্ট এক শিক্ষার্থীকে তাঁর অভিভাবকের হাতে তুলে দেয়।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গতকাল মধ্যরাতে হলটির ৪০৩ নং রুমে জোবায়দুর রহমান জ্যোতি এবং শোভন ও তাঁর বন্ধুদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে বেলা ১১টার দিকে আবারও জোবায়দুর রহমান জ্যোতিকে স্টাম্প হাতে হলটির করিডরে টহল দিতে দেখা যায়।
এদিকে লিখিত অভিযোগে গভীররাতে হামলার শিকার উল্লেখ করে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের জোবায়দুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল রাত ২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সাকিল খান শোভন, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের হাসান শাহরিয়ার, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মেহেদী ও তাদের বন্ধুবান্ধব ২০-২৫ জন মিলে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় আমার রুমে অবস্থান করে। এসময় তাদেরকে নেশা করতে বাধা দেওয়ায় এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমাকে ছুরিকাঘাত করে এবং ক্যাম্পাসের বাহিরে বের হলে প্রান নাশেরও হুমকি দিতে থাকে। এমতাবস্থায় সে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানান।
অপরদিকে এই ঘটনায় আরেক শিক্ষার্থী সাকিল খান শোভন নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে হলটির প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, গতকাল রাতে রুমে শুয়ে থাকাকালীন অবস্থায় আমার রুমে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের জোবায়দুর রহমান ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। এমতাবস্থায় আমার বন্ধুদের জানালে তারা আমাকে উদ্ধার করতে আসে। পরে তারাও আক্রমণের শিকার হয় এবং আহত হয়। এছাড়া সে আমার ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র এবং একাডেমিক সার্টিফিকেট রুমের বাহিরে ফেলে দেয়।
লিখিত অভিযোগে ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, জোবায়দুর রহমান মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ। পূর্বে সে আমার অন্য এক বন্ধু এবং তার প্রাক্তন রুমমেটকে আক্রমণ করে গলায় কামড় দিয়ে মাংস তুলে নিয়ে আহত করে।
এমতবস্থায় সেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানান।
এদিকে এই ঘটনায় হলটির প্রভোস্ট বরাবর সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও আরেকটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবি জানান, হলের আবাসিক শিক্ষার্থী লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের জোবায়দুর রহমান জ্যোতি একজন মানসিক ভারসাম্যহীন শিক্ষার্থী। তাকে বিভিন্ন সময়ে মাদক ও দেশীয় অস্ত্র (চা-পাতি) হাতে দেখা যায়। ওই অভিযোগপত্রে হলটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার আবেদন জানান।
পরে হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন সবগুলো লিখিত অভিযোগ তাৎক্ষণিক আমলে নিয়ে বিকেলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে জোবায়দুর রহমান জ্যোতিকে তার অভিভাবকের নিকট তুলে দেন। এসময় গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি বলেন, গতকাল রাত ৩টার দিকে ঘটনার বিষয়ে জানতে পারি। পরে দুপুরে উভয়পক্ষের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এছাড়াও হলটির আবাসিক সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকেও একটি অভিযোগ পেয়েছি। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে একজনকে তাঁর অভিভাবকের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে সবগুলো অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।