
বায়িং হাউজ এবং আবাসন ব্যবসার আড়ালে টেকনাফ থেকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন অভিজাত এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাইকারি ইয়াবা সরবরাহ করেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের মো. নজরুল ইসলাম ওরফে সোহেল রানা (৩৪)। এই কাজে তার সহযোগী বোন তানিয়া (৩২) ও ভগ্নিপতি মোহাম্মদ ফারুক। আসন্ন রোজার ঈদ সামনে রেখে সর্ববৃহৎ একটি চালান আনতে গিয়ে শুক্রবার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাতে ধরা পড়ে চক্রটি। এসময় টেকনাফ থেকে নিয়ে আসা পাঁচ কোটি টাকার ইয়াবাও জব্দ করা হয়েছে।
শনিবার (২২ মার্চ) সকালে তেজগাঁওয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) উত্তর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএনসির ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক এ কে এম শওকত ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে এ কে এম শওকত ইসলাম জানান, আসন্ন রোজার ঈদ সামনে রেখে টেকনাফ থেকে এক লাখ ৬০ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন তারা, যার মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। তাদের টার্গেট ছিল রাজধানীর অভিজাত এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মাদকগুলো পৌঁছে দেওয়া। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগরীর হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. নজরুল ইসলাম ওরফে সোহেল রানা, তার বোন তানিয়া (৩২) ও ভগ্নিপতি মোহাম্মদ ফারুককে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রো উত্তর কার্যালয়ের চৌকশ দল। এসময় তাদের গাড়িচালক মো. আল মামুনকে গ্রেফতার এবং মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত একটি দামী প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, প্রায় তিন মাস আগে ঢাকা মেট্রো কার্যালয় (উত্তর) এর সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন যে, একটি সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ী চক্র বায়িং হাউজ এবং আবাসন ব্যবসার আড়ালে টেকনাফ থেকে বিলাসবহুল গাড়িতে ইয়াবার বড় বড় চালান এনে ঢাকা শহরের বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় এবং দেশের বিভিন্ন জেলায় পাইকারি মাদক ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করে। তখন থেকেই অধিদপ্তর তাদের ওপর কড়া নজরদারি বজায় রাখলেও তাদের সুচতুর কৌশলে তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।
তাদের বিরুদ্ধে গত মাসে একটি অভিযান পরিচালনা করলেও তা ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ সপ্তাহ খানেক আগে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, চক্রটি আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারা টেকনাফের একটি রিসোর্টে দীর্ঘ সময় ধরে হুন্দাই কোম্পানির বিলাসবহুল গাড়ির পাদানির নীচে প্যানেলে বিশেষ কৌশলে এক লাখ ৬০ হাজার পিস ইয়াবা ঢুকিয়ে প্যানেলটি সুনিপুনভাবে ঝালাই করে রাখেন।
সর্বশেষ সংবাদের ভিত্তিতে সহকারী পরিচালক একটি চৌকস রেইডিং টিম গঠন করে গতকাল তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানে ঢাকা মেট্রো এলাকায় আসামিদের গাড়িটি প্রায় সাত কিলোমিটারের বেশি রাস্তা ধাওয়া করে আটক করা হয়। গাড়ি তল্লাশি করে কিছু পাওয়া না গেলে স্পটে অধিকতর তল্লাশি চালানো হয়।
এতে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বোঝা না গেলেও গোয়েন্দাসূত্রে বার বার নিশ্চিত করার পর প্যানেলের ঝালাই করা অংশটি খুলে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা জব্দ করা হয়। তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি এড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে বড় বড় ইয়াবার চালান ঢাকায় সরবরাহ ও বিক্রয় করেন।
ডিএনসি কর্মকর্তা শওকত জানান, জব্দকৃত মাদকদ্রব্যসহ আসামিদের বিরুদ্ধে ডিএনসির রমনা সার্কেলের পরিদর্শক লোকমান হোসেন বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ মোতাবেক সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো. উত্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ জানান, অধিদপ্তরের সদ্য যোগদানকৃত মহাপরিচালক ম. হাসান মারুফ অধিদপ্তরের এ অভিযানটিসহ অন্যান্য সকল অপারেশনাল কার্যক্রম নিবিড়ভাবে মনিটরিং করছেন। তিনি মাদক ব্যবসা নির্মূল করার জন্য অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আত্মনিয়োগ করার জন্য বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় অধিদপ্তরের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে জোরদার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।