মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার: বাংলাদেশের লাখ লাখ মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রায় শতাব্দীকালের প্রাণের দাবি ছিলো ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় আট বছর আগে সব হতাশা আর কুয়াশাচ্ছন্নতার কৃষ্ণগহ্বর ভেদ করে বর্তমান সরকারের হাতেই তা আলোর মুখ দেখেছে।
২০১৩ সালে পাস হওয়া বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে দেশের ফাজিল ও কামিল স্তরের প্রায় দেড় হাজার মাদ্রাসাকে এফিলিয়েশন দেয়ার লক্ষ্যে এফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন স্বতন্ত্র ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১৩-এর সংশ্লিষ্ট বিলে বলা হয়েছে— ‘মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ এবং ফাজিল (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর) পর্যায়ের পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির আধুনিকীকরণ ও উন্নতি সাধন, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতা বৃদ্ধিসহ মাদ্রাসা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত করার জন্যই এ বিল পাস করা হয়েছে।’
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে জাতীয় সংসদে এ মর্মে উত্থাপিত বিলটি যাচাই-বাছাই ও প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক বিধি-বিধানগত কার্যক্রম সম্পন্ন করে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ রাতে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত সকল সদস্যের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতিক্রমে ও কণ্ঠভোটে সুদীর্ঘকালের কাঙ্ক্ষিত এ বিলটি পাস হয়।
আর এ বিল পাসের মাধ্যমে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সকল ধুম্রজালের অবসান ঘটেছিল; যার ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভযাত্রায় আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকেনি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত এ স্বপ্নপূরণের জন্য এদেশের কোটি কোটি ধর্মীয় ও মাদ্রাসাপ্রেমী মানুষের পক্ষ থেকে আমরা অকৃত্রিম ভালোবাসা, অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলাম।
বস্তুত এদেশের কায়েমি স্বার্থান্বেষী ও রাজনৈতিক ইসলামওয়ালারা বর্তমান সরকারের কাছ থেকে এ মহৎ কাজটির বাস্তবায়ন কখনোই আশা করেনি। কেননা, তারা তো কথায় কথায় এ সরকারকে নাস্তিক, মুরতাদ, কাফের ও বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত করতেই সদা তৎপর। তাদের ভাষায় ইসলামের দুশমন (?) এই সরকারের কাছ থেকে ইসলামের এত বড় খেদমত হয়ে যাবে— এটি তারা কল্পনাও করতে পারেনি। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ইসলামের প্রাতিষ্ঠানিক বড় বড় কাজগুলো আওয়ামী লীগ শাসনামলেই সম্পন্ন হয়েছে।
কেবল ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়; এদেশের ইসলামপ্রিয় আপামর জনসাধারণের ধর্মীয় ভাবাবেগ ও অনুভূতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেশির ভাগ কাজই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আওয়ামী লীগ সরকারের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়েছে।
সারাদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসারকল্পে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, কাকরাইল মসজিদের জন্য অতিরিক্ত জায়গা প্রদান, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড পুনর্গঠন, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার জন্য স্থান নির্ধারণ, বেতার ও টিভিতে কুরআন তিলাওয়াত প্রচার, পবিত্র হজযাত্রীদের জন্য ভ্রমণ কর রহিতকরণ, ঈদে মিলাদুন্নবি সা. পালন, মাদক ও নেশামুক্ত সমাজ গঠনের জন্য মদ, জুয়া নিষিদ্ধকরণ ও অতি সম্প্রতি গৃহীত মডেল মসজিদ প্রকল্পসহ ইসলামের মহৎ কাজগুলো এদেশে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে আওয়ামী লীগ সরকার আঞ্জাম দিয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মীয় আবেগ ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে শবে কদর তথা রমজানের ২৭তম মহিমান্বিত রজনীতে বাংলাদেশের সংবিধান পাস করেছিলেন। গর্বিত পিতার আবেগধর্মী ও মননশীল ঐতিহ্যকে ধারণ করে সুযোগ্য কন্যা হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা (জন্ম ১৯৪৭ খ্রি.) ধর্মীয় আচার ও অনুভূতির প্রতি নিরন্তর শ্রদ্ধাশীল।
আর সে কারণেই পিতার ইসলামি খেদমতের ধারাবাহিকতায় তিনি নিজেও পবিত্র ইসলামের প্রচার-প্রসারে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন। যার প্রকৃষ্ট ও অনন্য দৃষ্টান্ত হলো ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস; রয়েছে রক্তঝরা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং মাদ্রাসাপ্রেমী বাঙালি মুসলমানদের প্রায় শতবর্ষের প্রতীক্ষা।
ইতিহাসের নানান বাঁকে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে মোনাফেকরূপী ইসলামওয়ালারা ধূলিস্যাৎ করতে চেয়েছে; বিভিন্ন ধরনের অপকৌশল আর ষড়যন্ত্রের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। ক্ষমতাসীনদের উদাসীনতা আর তাদের তল্পীবাহক ইসলামের নামধারীরা এদেশের মাদ্রাসা শিক্ষিতদের প্রাণের দাবিকে বাস্তবায়নের পথে নানান প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু এতদ সত্ত্বেও কিছু ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বাস্তব ও যৌক্তিক দাবি থেকে এ দীর্ঘ সময়ে কখনো এক চুল পরিমাণ সরে আসেননি; হাল ছেড়ে দেননি এবং আশাহত হননি। মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও গণমানুষের নেতৃত্বে দেশের মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়।
সূচনালগ্নে এটি কুষ্টিয়ার শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল; ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয় এবং ১৯৮১ সালের ৩১ জানুয়ারি অধ্যাপক ড. এ এন এ মমতাজ উদ্দিন চৌধুরীকে উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে দুটি অনুষদের অধীনে চারটি বিভাগে মোট তিনশ শিক্ষার্থী নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে।
পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের ১৮ জুলাই এক রাষ্ট্রীয় আদেশে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢাকার অদূরে গাজীপুরের বোর্ডবাজারে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু ১৯৮৯ সালের ৩ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৯০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আরেক সরকারি আদেশ বলে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে পুনরায় কুষ্টিয়ায় স্থানান্তর করা হয়।
এভাবে বারবার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তনের আড়ালে এর প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্ব ও মর্যাদা লোপ পায় এবং তার আসল চরিত্র ও রূপেও পরিবর্তন ঘটে।এটি অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই সাধারণ রূপ পরিগ্রহ করে এবং এর প্রতিষ্ঠার পেছনে যে মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিলো তা অপূর্ণই থেকে যায়। যার ফলে সেই হতাশা আর অপূর্ণতা থেকেই পরবর্তীতে মাদ্রাসাসমূহের জন্য স্বতন্ত্র এফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি নতুনভাবে ন্যায্যতা পায় এবং পর্যায়ক্রমে এ দাবির পক্ষে আন্দোলন জোরদার হতে থাকে।
সভা-সমাবেশ, মিছিল-আলোচনা, স্মারকলিপি প্রদান, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজনের মাধ্যমে এ দাবির বাস্তবতা তুলে ধরা হয়। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে ১৯৯৬ সালের ২৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের এক সুপারিশমালায় বলা হয়— ‘বাংলাদেশের মাদ্রাসাসমূহে প্রচলিত ফাজিল ও কামিল পরীক্ষাসমূহ সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাক্রমে ব্যাচেলর ও মাস্টার ডিগ্রি সমমান সম্পন্ন বলে জাতীয় পর্যায়ে গ্রহণ করা যেতে পারে এবং ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসাসমূহের একাডেমিক ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের ভার অর্পণের জন্য একটি স্বতন্ত্র এফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।’
পরবর্তীতে এসব সুপারিশমালা কার্যত ঢিলেমি আর টালবাহানার গর্তে ঢুকে যায়। এর মধ্যে কখনো এসব মাদ্রাসাকে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, কখনো গাজীপুরস্থ মাদ্রাসা টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে আবার কখনো মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকাকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করার হাত বুলানো কৌশলী সব আশ্বাস দেয়া হয়েছে; কার্যত কোনো কিছুই আলোর মুখ দেখেনি।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও এই যৌক্তিক দাবিটি নিয়ে তারা খেলেছেন নানান খেলা। কিন্তু ইসলামের দোহাই দিয়ে আর বিসমিল্লাহর জিগির তুলে ক্ষমতার ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকলেও ইসলামের প্রকৃত কল্যাণে এ মহৎ কাজটি তারা করতে নানান অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে এদেশের লাখ লাখ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর হূদয় ভেঙে দিয়েছেন।
দেশবাসীর সেই হতাশাগ্রস্ত ও ভঙ্গুর হূদয়-মানসকে উজ্জীবনী সুধার মাধ্যমে সতেজ-সজীব ও প্রশান্ত করেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। নবপ্রতিষ্ঠিত ভিন্নধারার এ বিশ্ববিদ্যালয়টি সকল অর্থে কার্যকর করা ও পরিচালনার জন্য মূলত প্রয়োজন ছিলো দক্ষ, গতিশীল, প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শীসম্পন্ন নেতৃত্ব।
কিন্তু এটির যাত্রালগ্নে একজন যোগ্যতর শিক্ষাবিদকে উপাচার্য নিয়োগ করলেও বয়সে প্রবীণ ও নানা ধরনের শারীরিক জটিলতার কারণে তিনি প্রত্যাশিত মাত্রায় এর বিকাশ ঘটাতে পারেননি; পরবর্তী কিছু দিনের মাথায় তিনি ইহধাম ত্যাগ করেন।
বর্তমানে যিনি উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন তার প্রশাসনিক যোগ্যতা, পরিকল্পনার অপ্রতুলতা, একাডেমিক দক্ষতা, আদর্শিক অবস্থান ও পূর্বাপর রেকর্ড নিয়ে গণমাধ্যমে নানা ধরনের নেতিবাচক সংবাদ বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা, নিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয় ও তার সামগ্রিক দক্ষতা বিষয়েও আশাব্যঞ্জক কোনো খবর কখনোই চোখে পড়েনি; অধিকন্তু তিনি এসবের মধ্যেই উপাচার্য হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদ পার করছেন। একই সাথে তার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়েও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার এক ঘটনার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক হিসেবে তার ব্যক্তিগত মান-সম্মান কতটা ক্ষুণ্ন হয়েছে তা জানি না, তবে এসব ঘটনায় মহতী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এ রকম একটি দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত ও সম্ভাবনাময় উচ্চতর শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি যে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে— তা হলফ করেই বলা যায়।
আরো একটি উদ্বেগের বিষয় হলো— বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য প্রোভিসির পদ থাকলেও আজ অবধি এ পদে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি; নবপ্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ও প্রশাসনিক গতিশীলতার জন্য যা ছিলো অত্যাবশ্যকীয়। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাস করা আইনে যেসব ধারা-উপধারা সন্নিবেশিত করা হয়েছে তার কয়েকটি ধারায় কিছু কিছু দুর্বলতা ও অদূরদর্শিতার ছাপ রয়েছে।
আমাদের প্রত্যাশা, সময়ের ব্যবধানে বাস্তব ও মানসম্পন্ন ইসলামি উচ্চশিক্ষার ধারা তৈরি করতে পারলে এসব দুর্বল দিক অপসারিত হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০ বছরের অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে, যা আদৌ বাস্তবসম্মত ও তুলনীয় নয়। অন্যদিকে ভিসি ও প্রো-ভিসি নিয়োগের জন্য কেবল আরবি আর ইসলামি শিক্ষা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা ইসলাম সম্পর্কে সংকীর্ণ ও কোটারি মানসিকতার পরিচায়ক।
উল্লেখ্য, এ আইনের খসড়া প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণী কার্যক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের দু’জন প্রবীণ অধ্যাপক যুক্ত ছিলেন এবং এ ধরনের আইন প্রণয়নে তারাই যে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন— তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এমন ব্যক্তিস্বার্থপরতা, মতলববাজি আর গোষ্ঠীগত ফায়দা হাসিলের নিয়ামক শক্তি হতে পারে না।
তাই কোনো ধরনের বিতর্কিত আইনের গ্যাড়াকলে শিকলবদ্ধ করে এ মহৎ প্রতিষ্ঠানকে নানান প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করানো সমীচীন হয়নি; এ ব্যবস্থা অনতিবিলম্বে বিলুপ্ত করে অন্য দশটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই একে গতিশীল ও অগ্রসরমান করার সময় এসেছে। সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কলেজগুলোতে শিক্ষার মান ও শিক্ষা প্রশাসন উন্নত করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
উদ্দেশ্যের দিক থেকে এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি কতটুকু সফল হয়েছে— এ প্রশ্নটি মাথায় রেখেই ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিবর্তিত বাস্তবতার আলোকে ও যুগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কেননা, চরিত্র ও উদ্দেশ্যের দিক থেকে নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেক ক্ষেত্রেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর অন্তত দুই দুইবার এর প্রশাসন ও কর্তাব্যক্তিরা মারাত্মকভাবে আঞ্চলিকতা নামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক মান ও দক্ষতাকে দুর্বল করে দিয়েছেন। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতার ব্যত্যয় ঘটবে— এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখকঃ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বাংলা পোস্ট । সদস্য ডিইউজে । ও আহবায়ক জাতীয় জনতা ফোরাম কেন্দ্রীয় সংসদ ।