সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
শ্রম আমাদের জীবনে এক অপরিহার্য বিষয়। মহান মাবুদের অফুরন্ত নেয়ামতকে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করার পেছনে শ্রমের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। শ্রমিকের শ্রম না থাকলে কালের চাকা থেমে যেত, সভ্যতা থমকে দাঁড়াত, পৃথিবী তার বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলত। এ জন্য শ্রমিকদের বলা হয় সভ্যতার কারিগর। শ্রমিকদের ওপর একটি দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি বহুলাংশে নির্ভরশীল। অথচ এরা সর্বক্ষেত্রেই অবহেলিত ও নির্যাতিত।
রাসুল (সা.) শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষকে অত্যন্ত সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতেন। কারণ যারা সৃষ্টির কল্যাণের জন্য নিজেদের তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেয়, তারা আল্লাহর কাছেও মর্যাদার অধিকারী। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এর চেয়ে উত্তম খাদ্য আর নেই, যা মানুষ স্বহস্তে উপার্জনের মাধ্যমে করে।’ হযরত আদম আ. কৃষক ছিলেন। হযরত নুহ আ. কাঠমিস্ত্রী ছিলেন। হযরত দাউদ (আ.) কর্মকার ছিলেন। হযরত ইদ্রিস আ. দর্জি ছিলেন। হযরত ইব্রাহিম আ. রাজমিস্ত্রি ছিলেন। হযরত ইসমাঈল আ. রাজমিস্ত্রির যোগাড়ি ছিলেন। হযরত মুছা (আ.) ছাগলের রাখাল ছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছাগল চড়িয়েছেন।
ইসলাম শ্রমকে যেমন মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছে, তেমনি শ্রমিকের অধিকার আদায়ের ব্যাপারেও ইসলামে রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের অধীনস্ত ব্যক্তিদের আপন সন্তানদের মতো স্নেহ-সমীহ কর। আর নিজেরা যা খাও তাদেরও তাই খাওয়াও।’ শ্রমিকের মজুরি যথাযথ আদায় না করার পরিণতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ কেয়ামতের দিন আমার মমতাময়ী আশ্রয় থেকে সেই ব্যক্তি বঞ্চিত হবে যে কোনো শ্রমিককে নির্ধারিত পারিশ্রমিক দেয়ার চুক্তিতে নিয়োগ করে, তারপর তার কাছ থেকে পূর্ণ শ্রম ও কাজ আদায় করে নেয়, কিন্তু তাকে (পূর্ণ) পারিশ্রমিক দেয় না’।
শ্রমজীবী মানুষকে রাসুল (সা.) মালিক-পুঁজিপতিদের ভাই বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাই সমাজে সে ততটুকু পদমর্যাদা ও সম্মান পাবে, যা সমাজের অন্য সদস্যরা পেয়ে থাকে। পেশার কারণে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা যাবে না। শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি প্রত্যেক শ্রমিকের প্রয়োজন ও কর্মানুসারে নির্ধারিত হবে। আর শ্রমিককে কমপক্ষে এমন মজুরি দিতে হবে, যাতে সে এর দ্বারা তার ন্যায়ানুগ ও দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক চাহিদা পূরণ করতে পারে। শ্রমে নিযুক্ত প্রতিটি শ্রমিকেরই ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তির অধিকার রয়েছে। এ অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা যাবে না। শ্রমিকের ন্যায্য প্রাপ্য মজুরি পরিশোধের বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।’ (ইবনে মাজাহ)
একজন শ্রমিক ইচ্ছা করলে মালিকের সঙ্গে মূলধনেও শরিক হতে পারবে। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে চলছে বিরোধ ও সংঘাত। মালিক শ্রেণি চায় কীভাবে শ্রমিকদের বেশি কাজ করিয়ে কম পারিশ্রমিক দেয়া যায়। পক্ষান্তরে শ্রমিকরা চায় ঠিকমতো কাজ না করেই পূর্ণ মজুরি আদায় করে নিতে। কিন্তু ইসলাম এ দুই শ্রেণির মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়নে সুন্দর পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। মালিক পক্ষকে বলা হয়েছে, শ্রমজীবী মানুষ তোমাদের ভাই, সুতরাং তোমরা তাদের সঙ্গে ভাইসুলভ আচরণ কর। আর শ্রমিকদের তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ঠিকমতো পালন করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এতে উভয়ের মধ্যে সুমধুর সম্পর্ক বিরাজ করবে। এ জন্য শ্রমিকদের অধিকার স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সম্মিলিতভাবে ইসলামি শ্রমনীতি তথা নবীজির আদর্শ অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক