নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আইন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। সুতরাং দেশের চলমান সংকট সমাধানে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেডআরএফ।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা নন দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সব সেক্টরে অবদান রেখেছেন জিয়াউর রহমান। তার জন্মবার্ষিকীতে জেডআরএফের আলোচনার জন্য ধন্যবাদ। আমি বলবো- দেশের বিশেষ দুটি দিন। একটি ২৫ মার্চ পাক-হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের বিরুদ্ধে উই রিভোল্ট বলে দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তৎকালীন সেনাবাহিনীর তরুণ মেজর জিয়াউর রহমান।
আজকে অনেকেই জিয়াউর রহমানকে হিংসা করেন। তার নাম মুছে ফেলার জন্য এমন কোনো কাজ নেই তারা করছে না। যারা জিয়াউর রহমানের অবদান স্বীকার করেন না তারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না। অন্যরা তো তখন ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো। কেউ ইচ্ছা করলে ইতিহাস মুছে দিতে পারে না।
তিনি বলেন, আরেকটি ঘটনা হলো ৭ নভেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন তারা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধ্বংস করেছিল। কথা বলার স্বাধীনতা বন্ধ করেছিলো। রক্ষীবাহিনী দিয়ে মানুষ হত্যা করে প্রথম মানবাধিকার লংঘন করেছিলো। তখন ক্যু আর পাল্টা ক্যু হচ্ছিল। তখন ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব যে সংঘটিত হলো সেটা হলো ইতিহাসের আরেকটি টার্নিং পয়েন্ট।
তখন দেশের ক্ষমতার পাদপ্রদীপে আবির্ভূত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনরুদ্ধার করেন জিয়াউর রহমান। তিনি জাতিসত্তার পরিচয় দিয়েছেন। সবার ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। দেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনেন। মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নামে লুটপাট চলছিল।
মোশাররফ বলেন, শহীদ জিয়া দেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী লীগ বারবার গণতন্ত্র হত্যা করেছে আর বিএনপি তা বারবার পুনরুদ্ধার করেছে। এগুলো ইতিহাস। চাইলেই মুছে ফেলা যাবে না। তেমনি আজকে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে খালেদা জিয়া আজ কারাবন্দি।
তিনি বলেন, আজকে আমেরিকার গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশ দাওয়াত পায়নি। কারণ তারা বহির্বিশ্ব সবাই জানে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। যে দেশে গণতন্ত্র থাকে না সে দেশে মানবাধিকার থাকে না। তাই আওয়ামী লীগ আজ ১২ বছর ধরে গুম খুন ও মানবাধিকার লংঘন করে চলেছে। এটা হচ্ছে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী সরকারের বৈশিষ্ট্য।
তারা ভেবেছিল খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে মানবাধিকার লংঘন করে ক্ষমতায় টিকে থাকবে। এমনকি ২০০৪ সাল থেকে তারা বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। তবুও তারা তাদের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেছে। লবিস্টরাও ব্যর্থ হয়েছে। আজকে তাদের অপকর্মের কারণে আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগ বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান ও কিছু কর্মকর্তার নামে স্যাংশন দিচ্ছে। তবুও তারা আমলে নিচ্ছে না।
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে বিশ্বাস করে না। কেননা অতীতে জনগণ তাদেরকে লালকার্ড দেখিয়েছে। যে কারণে তারা ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ২৯ ডিসেম্বর রাতেই করেছে। এখন চারদিক থেকে সরকারের বিরুদ্ধে ওয়ার্নিং দিচ্ছে। র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ জাতিসংঘ আমলে নিয়েছে।
তিনি বলেন, আজকে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরকার যে আইন করেছে তার জাতির সঙ্গে আরেকটি নাটক। আমরা বলেছি আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপি কখনো কোনো নির্বাচনে যাবে না। কেননা আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশন সরকারের স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না।
সুতরাং এসব সংকট সমাধানে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের কোনো বিকল্প নেই। দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।
জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও প্রকৌশলী মাহবুব আলমের পরিচালনায় বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবদুস সালাম, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, জেডআরএফের অধ্যাপক. আবুল হাসনাত মো. শামীম, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, কৃষিবিদ ড. আকিকুল ইসলাম আকিক, ডা. মো. মেহেদী হাসান, প্রকৌশলী উমাশা উমায়ন মনি চৌধুরী, প্রকৌশলী সুমায়েল মো. মল্লিক, এ্যামট্যাবের বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব প্রমুখ বক্তব্য দেন।