ঈদের তৃতীয় দিনে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় পর্যটকের ঢল

উত্তম কুমার হাওলাদার,কলাপাড়া (পটুয়াখালী): পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। ঈদের তৃতীয় দিন (১২ জুলাই) মঙ্গলবার বেলাবাড়ার সাথে সাথে আগত পর্যটকদের যেন ঢল নেমেছে। সৈকতের বালিয়ারীতে গাঁ ভাসিয়ে নেচে গেয়ে আনন্দ উন্মাদনায় মেতে উঠে। কেউ সৈকতের বেঞ্চে বসেই সমুদ্র ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। কেউবা আবার সৈকতে ভাজা মাছের দোকানগুলোতে কাঁকড়া, চিংড়িসহ নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছের ফ্রাই ও বার-বি-কিউ খাচ্ছেন। গঙ্গামতি থেকে লেম্বুর বন। দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকতের সকল পর্যটন স্পটেই এখন পর্যটকদের আনাগোনায় সরগরম। কোথাও যেন তিল ধরনের ঠাঁই নেই।

এদিকে কুয়াকাটার সবকটি হোটেল মোটেল বুকিং রয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। পর্যটকের এমন ভীড়ে হাসি ফুটেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মুখে। আগতদের সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সাগরের নীল জলরাশি আর ঢেউয়ের গর্জন ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য যেন পর্যটকদের মন কেড়ে নিয়েছে। এছাড়াও শামুক-ঝিনুকের দোকানসহ বিপণি-বিতানগুলো রয়েছে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়।

এদিকে কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান কুয়াকাটার কুয়া, নারিকেল কুঞ্জ, ইকোপার্ক, জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার, সীমা বৌদ্ধবিহার, সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল খ্যাত ফাতরার বনাঞ্চল, গঙ্গামতি, কাউয়ারচর, লেম্বুরচর, শুঁটকি পল্লীসহ সৈকতের জিরোপয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে মনোমুগ্ধকর বেলাভূমি, একাধিক নয়নাভিরাম লেক,সংরক্ষিত বনায়নসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখছেন আগত পর্যটকরা। থেমে নেই সৈকতে ফটোগ্রাফার ও ঘোঁড়ার দৌড়।

হোটেল মোটেল ব্যবসায়ি ও স্থানীয়রা জানান, ঈদের লম্বা ছুটি উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছে পর্যটকরা। পর্যটকদের কুয়াকাটা ভ্রমনের সকল রেকর্ড এবার ছাড়িয়ে গেছে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে। তবে গত দুই দশকের বেশী সময় ধরে কুয়াকাটায় আগমন ঘটেছে দেশী বিদেশি পর্যটকের। কিন্তু তখন ঢাকা থেকে ফেরি পার হয়ে আসতে হতো। এছাড়া ঢাকা থেকে সড়কপথে কুয়াকাটায় যেতে সময় লাগতো ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পর মাত্র ৬ ঘণ্টা কুয়াকাটা আসা যায়। পর্যটক রাসেল মাহামুদ বলেন, কুয়াকাটা হলো প্রিয় এক্রটি স্থান। তাই সময় পেলেই বার বার এখানে ছুটে আসি। এবার খুব অল্প সময়ে মধ্যে কুয়াকাটায় এসে পৌঁছেছি। অপর এক পর্যটক তহমিনা আক্তার বলেন, এর আগেও কুয়াকাটা এসেছি। তখন বেশ কয়েকটি ফেরি পার হয়ে আসতে হতো। অনেক বিড়ম্বনা পোহাতে হতো। এবারে পদ্মা সেতু পার হয়ে মাত্র ৬ ঘন্টার কম সময়ে কুয়াকাটা আসলাম। হোটেলে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে সৈকতে বেড়িয়ে পরেছি। ঘুরে দেখলাম বিভিন্ন দর্শনীয় স্পট। এর পর শেষ বিকেলে সৈকতে দাড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে এবার হোটেল ভাড়া ও খাবারের মূল্য অনেকটা বেশি রাখা হচ্ছে বলে পর্যটকদের অভিযোগ রয়েছে।

হোটেল সমুদ্র বাড়ির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.শামীম খান বলেন, প্রতিবছর ঈদ, কিংবা সরকরি ছুটিতে বাড়তি পর্যটকের আগমন ঘটে কুয়াকাটায়। এবছর পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার কারনে প্রথম ঈদে ব্যাপক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। তাই তাদের হোটেলের সব রুম বুকিং রয়েছে। রুমের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পর্যটকদের রুম দিতে পারছেনা বলে তিনি জানান।

কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন কুটুমের সাধারন সম্পাদক মো.হোসাইন আমির বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার কারণে দেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব পর্যটক ছুটে এসেছেন। আমরা সর্বক্ষণই পর্যটকদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। ছোট-বড় সব মিলিয়ে এখানে ১৬০ আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। কোনটা একদিনের জন্য। কোন কোন হোটেল দুই থেকে তিন দিনের জন্য রুম বুকিং রয়েছে। আবার কেউ কেউ হোটেলের রুম না পেয়ে বাসা বড়িতে অবস্থন করছেন।

কুয়াকাটা হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো.শাহআলম হাওলাদার জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবার ঈদুল আযহার ছুটিতে অগনিত পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। ইতোমধ্যে হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট গুলো শতভাগ রুম বুকিং হয়ে গেছে। তবে যাতে কোন পর্যটক হয়রানি না হয় সেজন্য হোটেল মোটেল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সার্বক্ষনি নজরদারি রয়েছে।

কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, কুয়াকাটায় যে পরিমাণ হোটেল মোটেল রয়েছে তাতে ১৫/২০ হাজার লোকের ধারন ক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে সব হোটেল মোটেলগুলো বুকিং হয়ে গেছে।

মহিপুর থানা ওসি খোন্দকার মো. আবুল খায়ের বলেন, যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে থানা পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই থানা পুলিশের একাধিক টিম পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে।

কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশ জোনের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, আগত পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের একটি টিমসহ সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারিতে রয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন...