পিবিএ,ঢাকা: ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে কোরবানির ঈদ বা ঈদুল আজহা। সময়ের হিসেবে বাকি রয়েছে এক মাসেরও কম সময়। প্রতি বছরই কোরবানির ঈদে এক মাস আগে থেকেই সব ধরনের মসলার দাম বেড়ে যায়। তবে এবার সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। উল্টো গত কয়েকদিনে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম কমছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছরই কোরবানির ঈদের অন্তত এক মাস আগে থেকে মসলার দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এবার এখনও মসলার বাজারে কোরবানি ঈদের প্রভাব পড়েনি। মহামারি করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতেই সবাই এখন ব্যস্ত। এ কারণেই এখনো ঈদ কেন্দ্রীক কেনাকাটা শুরু হয়নি। তবে ঈদের আগে মসলার চাহিদা বাড়লে তখন কিছুটা দাম বাড়তে পারে।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দারুচিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা, যা কিছু দিন আগে ৪৫০ টাকার ওপরে ছিল। দারুচিনির পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় রয়েছে এলাচ। ৩২০০ থেকে ৩৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া এলাচের দাম কমে ২৭০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে চলে এসেছে।
মাংস রান্নার আর এক অপরিহার্য পণ্য জিরার দাম কমেছে। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে জিরার কেজি রেকর্ড ৫০০ টাকা স্পর্শ করে। তবে এরপর কিছুটা দাম কমে রোজার ঈদের আগে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। সেই জিরার দাম কমে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে চলে এসেছে।
দাম কমার এ তালিকায় রয়েছে লবঙ্গ, তেজপাতা, ধনে, আদা, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, শুকনা মরিচও। কয়েদিন ধরে কমতে থাকা আমদানি করা রসুনের কেজি ৮০ টাকায় চলে এসেছে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। অথচ সপ্তাহ দুই আগেও রসুনের কেজি ১৪০ টাকা এবং পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকার ওপরে ছিল।
কিছুদিন আগে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আদা এখন ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শুকনা মরিচের দাম কমে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া লবঙ্গের দাম কমে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা হয়েছে। দেড়শ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া তেজপাতা ১২০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ১৮০ টাকা থেকে কমে ধনের কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা হয়েছে।
সব ধরনের মসলার দাম কমার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। টিসিবি জানিয়েছে, এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমেছে।
দেশি আদার ৮ শতাংশ, আমদানি করা আদা ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, জিরার ৩০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, আমদানি করা রসুনের ৩২ শতাংশ, দেশি রসুনের ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, দেশি শুকনা মরিচের ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং আমদানি করা শুকনা মরিচ ১০ দশমিক ৭৭ শতাংশ কমেছে।
এছাড়া দারুচিনির ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ, লবঙ্গের ২৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ধনের দাম ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ, তেজপাতার ৮ শতাংশ এবং আমদানি করা হলুদের ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ দাম কমেছে। তবে এলাচের দাম মাসের ব্যবধানে ১ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে।
রামপুরার ব্যবসায়ী আলামিন বলেন, কোরবানির ঈদে সব থেকে বেশি মাংস রান্না হয়। যাদের সামর্থ্য নেই তারাও প্রচুর কোরবানির মাংস পান। এ কারণে কোরবানির ঈদ আসার এক মাস আগে থেকেই মাংস রান্নার মসলার দাম বেড়ে যায়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এবার সেই চিত্র নেই। উল্টো সব ধরনের মসলার দাম গত কয়েকদিনে কমেছে।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে এবার ঠিক মতো করোনারির হাট বসবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। আবার হাট বসলেও অনেকের হাটে যাওয়া অনিশ্চিত। স্বাভাবিকভাবেই এবার কোরবানির সংখ্যা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক ঈদের এক সপ্তাহ আগে মসলার চাহিদা বাড়বে। তখন দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
খিলগাঁওয়ে ব্যবসায়ী আশরাফ বলেন, এবার প্রথম দেখছি কোরবানি ঈদের আগে মসলার দাম কমছে। অন্যান্যবার রোজার ঈদের আগে থেকেই মসলার দাম বেড়ে যায়। যা কোরবানির ঈদের আগে আরও বাড়ে। কিন্তু এবার রোজার ঈদের পর সব ধরনের মসলার দাম কমছে। মানুষ এখন জীবন বাঁচাতেই ব্যস্ত, ঈদের সেই আনন্দ মানুষের মাঝে আর নেই। মহামারি করোনা সব কেড়ে নিয়েছে।
পিবিএ/এসডি